প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
অম্বেডকরের জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বহুত্ববাদী পরিচয়কে তুলে ধরতে মাঠে নামল কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি। আজ সংখ্যালঘু বিষয়ক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বার্লা একাধিক টুইট করে জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্নসম্প্রদায় এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মোদীর উপস্থিত থাকার খতিয়ান। পাশাপাশি দল এবং সরকারের তরফ থেকে বিশদে জানানো হয়েছে, কী ভাবে মোদী সাম্প্রতিক সময়ে অসমের বিহু উৎসব থেকে ইস্টার— সর্বত্র হাজির থেকেছেন।
রাজনৈতিক মহলের মতে, এটি প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তিকে নতুন করে দেখানোর একটি সচেতন চেষ্টা কেন্দ্রীয় শাসনযন্ত্র এবং বিজেপি নেতৃত্বের। আমেরিকা তথা পশ্চিম বিশ্ব তাদের বিভিন্ন রিপোর্টে বার বার মোদী সরকারকে সরাসরি বা প্রচ্ছন্ন ভাবে সমালোচনা করে এসেছে এ যাবৎ। অভিযোগ উঠেছে অসহিষ্ণুতা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে নির্যাতন, সাম্প্রদায়িকতার।
ঘরোয়া স্তরেও বিরোধীদের অভিযোগের নিশানায় থেকেছেন আরএসএস তথা সঙ্ঘ পরিবার নেতৃত্ব এবং মোদী। কংগ্রেসের অভিযোগ, সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের নাম করে ‘হিন্দি, হিন্দু এবং হিন্দুস্তান’-কেই আসলে গোটা দেশের উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে আরএসএস এবং মোদী সরকার। তাদের প্রচারিত ‘এক দেশ এবং এক সংস্কৃতি’ আসলে হিন্দুত্বের সংস্কৃতি। সূত্রের মতে, এই চিত্রনাট্যের মোকাবিলা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। গত দশ বছর ক্ষমতায় থাকার ফলে সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তার মোকাবিলা করার একটা চ্যালেঞ্জ তো রয়েছেই ’২৪-এর লোকসভা ভোটে। সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের বার্তা দিয়ে দেশের সর্বত্র পৌঁছনোরও একটা তাগিদ রয়েছে।
যদিও তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ বার্লা এবং দলের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিবিধের মাঝে মিলনের যে ছবিটি তুলে ধরা হয়েছে, সেখানে কোথাও মুসলিম সম্প্রদায়ের উৎসবের কথা বলা হয়নি। বিরোধী শিবির বলছে, এটাও লক্ষ্যণীয় যে, আগের মতো এখন আর সংখ্যালঘু মন্ত্রী পদেও মুসলিম কোনও নেতাকে রাখা হয় না। আপাতত এই মন্ত্রকের পূর্ণমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি (পার্সি) এবং জন বার্লা (খ্রিস্টান) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঠিকই, কিন্তু তাঁরা মুসলিম নন। অর্থাৎ অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে যে এখন মোদী সরকার গুরুত্ব দিতে চাইছে, সেটাও স্পষ্ট বলে মনে করছে বিরোধী শিবির।
বার্লা আজ টুইট করে বলেছেন, ‘গত কয়েক দিনে প্রধানমন্ত্রী দু’টি অনুষ্ঠানে গিয়েছেন, যার গভীর সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। একটি তামিল নববর্ষে প্রতিমন্ত্রী মুরুগানজীর বাড়ির অনুষ্ঠানে। অন্যটি, দিল্লির গির্জায় ইস্টার পালন। এই দু’টি ঘটনাই প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রতি সম্মানের দিকটিকেই সামনে এসেছে।’ বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রপূর্ণ বিভিন্ন উৎসবে প্রধানমন্ত্রী নিজে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেন। আজই যেমন অসমে গিয়েছেন বিহু উৎসবে যোগ দিতে। গতকাল ছিল তামিল নববর্ষের অনুষ্ঠান। গত সপ্তাহে ইস্টার। গত মাসে প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডুর আয়োজনে উগাড়ি উৎসবে শামিল ছিলেন মোদী। ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লির তালকাটোরা স্টেডিয়ামে তিনি উদ্বোধন করেন কন্নড় সাংস্কৃতিক উৎসব। গত বছর নভেম্বরে গুরু নানক জয়ন্তী পালন করেন দিল্লিতে সংখ্যালঘু জাতীয় কমিশনে। ওই একই মাসে তিনি মণিপুরের সাংগাই উৎসবে বক্তৃতা দেন।’
এ ভাবেই গত এক বছরে মকর সংক্রান্তি, নবরাত্রি, গনেশ চতুর্থী, বুদ্ধ পূর্ণিমা, গুরু রবিদাস জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে কোথায় কী ভাবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী, তার সবিস্তার বিবরণ ঘরোয়া ভাবে সংখ্যালঘু মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।
কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ কুমারী শৈলজার কথায়, “অম্বেডকরের জন্মদিনে নিজের প্রচারের রাস্তা খুলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু দলিত নির্যাতন ক্রমশ বাড়ছে দেশে। তাঁর যদি দলিত সমাজ নিয়ে এতই চিন্তা থাকবে, তা হলে মোদী তাঁদের জাতিগণনা করাচ্ছেন না কেন?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy