দুর্নীতির জোড়া ফলায় বিপর্যস্ত মোদী সরকার। গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ।
ইউরো কাপ থেকে ছিটকে গিয়েছে ফ্রান্স। ব্রাজ়িল পৌঁছেছে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে। কিন্তু দুই দেশই নরেন্দ্র মোদীর জমানায় হওয়া দুই চুক্তিতে দুর্নীতির খোঁজে তদন্তে নেমে আপাতত তাঁর সরকারের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। ফ্রান্সে নতুন করে মাথাচাড়া দেওয়া রাফাল-বিতর্ক অস্বস্তিতে ফেলেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তাঁর সরকার এবং দলকে। একই ভাবে, ব্রাজ়িলে কোভ্যাক্সিন কেনার চুক্তি ঘিরে দুর্নীতির শোরগোল হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছে কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির।
ফরাসি সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশনের তৈরি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়ে মোদী সরকারের করা চুক্তি নিয়ে ফ্রান্সে বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্রাজ়িলে আবার ভারত বায়োটেক আইসিএমআরের কোভিড-প্রতিষেধক কোভ্যাক্সিন কেনার চুক্তি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। বিরোধীদের আক্রমণের মুখে দু’টি বিষয় নিয়েই আপাতত মুখ বন্ধ রাখার কৌশল নিয়েছে মোদী সরকার তথা বিজেপি। কিন্তু সংসদে আসন্ন অধিবেশনে এ বিষয়ে কেন্দ্রকে প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে বলে প্রমাদ গুনছে
বিজেপি নেতৃত্ব।
গত কালই কংগ্রেস রাফাল-চুক্তিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) মারফত তদন্তের দাবি তুলেছিল। রবিবার সিপিএমও একই দাবি তুলেছে। কংগ্রেসের প্রশ্ন, মোদী সরকার নীরব কেন? ফ্রান্সের আদালত এ বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দিলেও বিজেপি ঢাল করছে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে। সর্বোচ্চ আদালতে এই মামলা গেলেও, তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ রাফাল-চুক্তিতে তদন্তের নির্দেশ দেয়নি। অবসরের পরে গগৈকে রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে মনোনীত করা হয়। সে দিকে ইঙ্গিত করে এ দিন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর কটাক্ষ, জেপিসির রাজ্যসভা আসনের দরকার নেই। অর্থাৎ, রাজ্যসভা আসনের ‘লোভ দেখিয়ে’ জেপিসিকে বাগে আনা যাবে না। টুইটারে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মোদী সরকার কেন জেপিসিতে নারাজ? অপরাধবোধ? বন্ধুদের বাঁচানো? জেপিসির রাজ্যসভা আসনের দরকার নেই। নাকি এর সবকটাই ঠিক!’’
মোদী সরকারের আমলে ৩৬টি রাফাল কিনতে ৫৯ হাজার কোটি টাকার যে চুক্তি হয়েছে, তাতে মূলত দুর্নীতি ও ঘুষের অভিযোগে ফ্রান্সে তদন্ত শুরু হয়েছে। ব্রাজ়িলে অবশ্য ২ কোটি ডোজ় কোভ্যাক্সিন কেনার চুক্তিতে কোনও আর্থিক লেনদেনের আগেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠে গিয়েছে। সেখানে বিরোধীদের অভিযোগ, কোভ্যাক্সিন ব্রাজ়িলে ছাড়পত্র পাওয়ার আগেই ৩০ কোটি ডলারের ওই চুক্তি করে ফেলেছিল প্রেসিডেন্ট জ়াইর বোলসোনারোর প্রশাসন। কেন ফাইজ়ারের থেকে বেশি দামে এবং তা-ও ছাড়পত্র পাওয়ার আগে বোলসোনারো প্রশাসন কোভ্যাক্সিন কিনতে অত উৎসাহী হয়ে পড়েছিল, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে সাম্বার দেশে। চাপের মুখে চুক্তি বাতিল হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেখানে দুর্নীতি, ঘুষ, টাকার লেনদেন ছিল কি না, তার তদন্ত শুরু হয়েছে।
ভারত বায়োটেকের দাবি, নিয়ম মেনেই চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু এ বিষয়েও মোদী সরকারের জবাবদিহি চাইছে কংগ্রেস। মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতের বক্তব্য, ‘‘শুধু বেসরকারি সংস্থা ভারত বায়োটেক নয়, সরকারি প্রতিষ্ঠান আইসিএমআর-ও টিকা (কোভ্যাক্সিন) তৈরিতে অর্থ ঢেলেছে। ফলে করদাতাদের টাকা এখানে জড়িত। তা কাজে লাগিয়ে মুনাফা লোটা হচ্ছে কি না, তার তদন্ত দরকার। সরকারকেও মুখ খুলতে হবে।
রাফাল নিয়ে কংগ্রেসের আর এক মুখপাত্র পবন খেরার প্রশ্ন, ‘‘ফ্রান্সে তদন্ত হচ্ছে। কিন্তু ভারতে রাফাল কেনার জন্য করদাতাদের টাকা খরচ হয়েছে। তা হলে এ দেশে কেন তদন্ত হবে না?’’ রাফাল-চুক্তিতে শিল্পপতি অনিল অম্বানীর সংস্থাকে বরাত পাইয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ। খেরার প্রশ্ন, ‘‘দেশের নিরাপত্তা নিয়ে বাগাড়ম্বর করা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন নিজের শিল্পপতি বন্ধুদের ফায়দা পাইয়ে দেওয়ার সময়ে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থকে গুরুত্ব দেন না?’’ এ বিষয়ে সংসদে কংগ্রেস সরব হবে বুঝিয়ে আজ রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে জেপিসি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
এই তোপের মুখে মোদী সরকার এখনও প্রায় ‘স্পিকটি নট’। বিজেপি মুখপাত্ররা রাহুলকে পাল্টা আক্রমণ করছেন। কিন্তু সরকারের কেউ আপাতত মুখ না-খোলার নীতি নিয়েছেন। বিজেপি সাংসদ রাকেশ সিন্হার অভিযোগ, ‘‘রাহুল গাঁধী তথা কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং দেশের অপমান করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy