Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

সিএএ, এনআরসি পুনর্বিবেচনা চান অভিজিৎ-এস্থার

সিএএ নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক-প্রতিবাদ-আন্দোলন অব্যাহত।

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার দুফলো।

অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার দুফলো।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৩১
Share: Save:

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক নয় বলেই মনে করেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার দুফলো। এ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে কটাক্ষও করতে ছাড়েননি এই নোবেলজয়ী দম্পতি। তাঁদের মতে, সিএএ এবং এনআরসি ‘ন্যূনতম সরকার’ বা ‘সর্বোচ্চ সুশাসন’-এর লক্ষণ নয়। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, যাঁরা দেশের অগ্রগতির শরিক হতে চান, তাঁদের কেন সঙ্গে নেওয়া হবে না।

সিএএ নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্ক-প্রতিবাদ-আন্দোলন অব্যাহত। শাসক-বিরোধী চাপানউতোরের পাশাপাশি, ছাত্র-যুব সমাজের একটা বড় অংশ সিএএ-র বিরুদ্ধে পথে নেমেছেন। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি একটি নিবন্ধে কোনও রাখঢাক না করেই অভিজিৎ এবং এস্থার সিএএ ও এনআরসি নিয়ে তাঁদের অভিমত স্পষ্ট করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘‘যে দেশে আপনি সারা জীবন কাটালেন, যদি দেখেন আপনি সেই দেশের নাগরিক বলে গণ্য হলেন না, সেখানে আপনাকে কেউ চায় না— তা হলে আপনি কে? এটাই যুব সমাজকে হতাশ করে তুলছে।’’ তাঁদের মতে, এটা নাগরিকের মৌলিক অধিকারে সরকারি হস্তক্ষেপ।

একটি সর্বভারতীয় দৈনিকে প্রকাশিত উত্তর-সম্পাদকীয়তে নোবেলজয়ী দম্পতি লিখেছেন, এই বিষয়টি নিয়ে সরকারকে অবশ্যই উদ্বিগ্ন হতে হবে। অভিজিৎ ও এস্থার লিখেছেন, ‘‘সিএএ সংক্রান্ত যাবতীয় আলোচনায় মনে হয় এটাই ধরে নেওয়া হচ্ছে— অভিবাসীরা একটি সমস্যা।’’ আর্থিক কারণে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য যে কম দক্ষ লোকজনের উপার্জনে মোটের উপর প্রভাব পড়েনি—যুক্তি সহকারে সেই কথাই বুঝিয়েছেন দুই অর্থনীতিবিদ। এবং বলেছেন, এর আংশিক কারণ, অর্থনৈতিক অভিবাসীরা যে কোনও কাজই লুফে নেন। তা ছাড়া ওই শ্রমিকেরা শুধু শ্রম বিক্রিই করেন না, উপার্জিত অর্থে ভোগ্যপণ্যও কিনে থাকেন।

আরও পড়ুন: দুই-তৃতীয়াংশ আসন বাংলায়, দাবি অমিতের

অভিজিৎ এবং এস্থার মনে করেন, এখানে আসল চ্যালেঞ্জটা মধ্যবিত্তের। কারণ, তাঁরা চাকরি নির্ভর। মূলত সরকারি চাকরি। মধ্যবিত্তেরা ভাবছেন অভিবাসীরা তাঁদের চাকরিতে ভাগ বসাবেন। নোবেলজয়ী দম্পতি লিখেছেন, ‘‘সরকারি চাকরি এখনও অপ্রতুল। এটা খারাপ সরকার পরিচালনার নমুনা। ২০১৯ সালে ভারতীয় রেলে ৬৩ হাজার পদের জন্য পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ কোটি ৯০ লক্ষ। এ থেকে বোঝা যায়, কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।’’

অভিজিৎ ও এস্থার মনে করেন, এখনই এই সমস্যার মোকাবিলা করা প্রয়োজন। না হলে স্থানীয় স্তরে মানুষের আর্থিক বিষয়ের ক্ষেত্রেও এমন সমস্যা বা প্রশ্ন উঠবে। যা ক্রমশই মারাত্মক আকার নিতে পারে। দুই অর্থনীতিবিদ প্রশ্ন তুলেছেন, চেন্নাইয়ে বাঙালি অভিবাসীদের তামিলভাষী সন্তানেরা কি ওই রাজ্যে সরকারি চাকরির দাবি করতে পারবে? মহারাষ্ট্রে বড় হয়ে ওঠা বিহারি পরিবারের মরাঠিভাষী ছেলেমেয়েদেরই বা কী হবে? মোদী সরকার ও বিজেপির যুক্তি, দেশের যাবতীয় সমস্যার মূলে অভিবাসীরা। তাই তাঁদের চিহ্নিত করা জরুরি। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ দম্পতি মনে করেন, অভিবাসন নিয়ে উদ্বেগ এমন একটি দৈত্য, যাকে অবিলম্বে বোতলবন্দি করা দরকার। সিএএ-তে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের ছ’টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ভারতে নাগরিকত্বের আবেদনের সুযোগ পাবে। অভিজিতেরা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘যাঁরা আমাদের গণতান্ত্রিক, উদার, সহনশীল মতবাদকে পাথেয় করে জাতীয় লক্ষ্যের শরিক হতে রাজি, তাঁদের জন্য কেন দরজা খোলা হবে না? কেন পাকিস্তানে অত্যাচারিত আহমদিয়া, শ্রীলঙ্কার তামিলদের বুকে টেনে নেব না?’’

আরও পড়ুন: এনআরসি নয় ‘এখন’, শাহের কথায় ফের ধন্দ

অভিজিৎ-এস্থারের মতে, ভারতে ১৩০ কোটি মানুষ আছেন। আরও কয়েক লক্ষ মানুষ না হয় এই মহামানব-সমুদ্রের স্রোতে মিলেমিশে যাবেন। তা হলেই ভারত গোটা বিশ্বের ‘ভার বহনে সমর্থ’ হয়ে উঠবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy