প্রতীকী ছবি।
গ্রামের স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন, হৃদরোগ, এমনকী কিছু ক্যানসার নির্ণয়েরও ব্যবস্থা থাকবে। সেই সঙ্গেই সাধারণ জ্বরজারি, সর্দি-কাশির মতো রোগের চিকিৎসা হবে। শেখানো হবে যোগাসন। ঠিক করে দেওয়া হবে ডায়েট। থাকবে ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থাও। আর এই সব কাজই হবে একজন নার্সের অধীনে। ডাক্তাররা সেখানে থাকবেন না।
দেশ জুড়ে রোগ প্রতিরোধ পরিষেবা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে মোদী সরকার বাজেটে ২০২২-এর মধ্যে দেড় লক্ষ ‘স্বাস্থ্য ও নিরাময় কেন্দ্র’ গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছে। নার্সরা যাতে সেখানে সব দায়িত্ব সামলাতে পারেন, তার জন্য তাঁদের ৬ মাসের বিশেষ প্রশিক্ষণ হবে। নার্সের সঙ্গে থাকবেন ২ জন প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মী এবং জনা পাঁচেক আশা-কর্মী।
চিকিৎসা পরে। ভারতের মতো দেশে রোগ শরীরে শিকড় ছড়ানোর আগেই তাকে আটকানো দরকার বলে অনেক দিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা সওয়াল করছেন। যুক্তি হল, জীবনযাত্রা পাল্টে যাওয়ায় এখন রোগের ধরনও পাল্টাচ্ছে। ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন থেকে শুরু করে স্তন-মুখ এবং জরায়ু-মুখ (সার্ভাইকাল) ক্যানসারের প্রবণতাও বাড়ছে। মহকুমা আর জেলার হাসপাতালগুলিতে রোগীর চাপ কমাতে প্রাথমিক স্তরে তাই এই সব রোগ নির্ণয় ও প্রাথমিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
সেই পথে হেঁটেই এ বার বাজেটে অরুণ জেটলি ঘোষণা করেছেন, দেড় লক্ষ ‘স্বাস্থ্য ও নিরাময় কেন্দ্র’-ই হবে দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবা ব্যবস্থার ভিত্তি। কিন্তু নীতি আয়োগের তৈরি এই গোটা পরিকল্পনায় কোথাও চিকিৎসক শব্দের নামগন্ধ নেই। সবটাই চলবে নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দিয়ে। নীতি আয়োগের সদস্য বিনোদ কুমার পালের যুক্তি, ‘‘স্বাস্থ্য কেন্দ্র চালাতে ডাক্তারদের কোনও প্রয়োজন নেই।’’ এইমসের শিশুরোগ বিভাগের প্রাক্তন প্রধানের যুক্তি, ‘‘জ্বরজারির মতো অসুখে আমি যা ওষুধ দেব, আমার নার্সও একই ওষুধ দেবে।’’
নিরাময়-দাওয়াই
• রোগ প্রতিরোধ পরিষেবা ব্যবস্থা
• প্রাথমিক স্তরেই রোগ নির্ণয়
• দেড় লক্ষ স্বাস্থ্য ও নিরাময় কেন্দ্র
• প্রতি ৫ হাজার জনে একটি কেন্দ্র
• দায়িত্বে প্রশিক্ষিত নার্স, সঙ্গে ২ জন স্বাস্থ্যকর্মী, ৫ জন আশা-কর্মী
• ডায়াবিটিস, হাইপারটেনশন, হৃদরোগ, স্তন-মুখ ও জরায়ু-মুখ ক্যানসার নির্ণয়
• বিনা মূল্যে ওষুধ, যোগাসন, ফিজিওথেরাপি, ডায়েট পরামর্শ
ডাক্তারের অভাব মেটাতে জাতীয় মেডিক্যাল কমিশন বিলে বলা হয়েছিল, আয়ুর্বেদ ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকরা একটি ব্রিজ কোর্স করে নিলেই অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করতে পারবেন। বিরোধীদের আপত্তিতে আপাতত সেই বিল স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে, দেশে তো নার্সেরও অভাব। তা হলে দেড় লক্ষ ‘স্বাস্থ্য ও নিরাময় কেন্দ্র’ চালানোর জন্য নার্স মিলবে কোথা থেকে? নীতি আয়োগের কর্তারাও মানছেন, নার্সের অভাব রয়েছে। তবে তাঁদের যুক্তি, এখনই দেড় লক্ষ কেন্দ্র চালু হচ্ছে না। ২০১৮-’১৯-এ মাত্র ১৫ হাজার কেন্দ্র তৈরি হবে। তার জন্যও নার্স মিলবে কি? সূত্রের খবর, আপাতত ৩৮২ জন নার্সের বিশেষ প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। যারা আয়ুর্বেদ চিকিৎসা করেন, তাদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নীতি আয়োগের উপদেষ্টা অলোক কুমার বলেন, ‘‘কমিউনিটি মেডিসিনে বিএসসি ডিগ্রি চালু করার কথাও ভাবা হচ্ছে।’’
বিরোধীদের অভিযোগ, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ঘোষণা করলেও বাজেটে যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ হয়নি। জেটলির দাবি, তিনি ১২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করছেন। পরিকাঠামো ও যন্ত্রপাতির জন্য বেসরকারি সংস্থা, জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সাহায্য চাওয়া হবে। মূলত উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকেই ঢেলে সাজা হবে। কেন্দ্রগুলি তৈরি করতে সাংসদ তহবিলের অর্থ, একশো দিনের কাজের প্রকল্পও কাজে লাগানো হবে।
প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শামিকা রবি বলেন, ‘‘আপাতত প্রতি ৫ হাজার জনের জন্য একটি নিরাময় কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। প্রাথমিক স্তরে এই কেন্দ্রগুলি পাহারাদারের কাজ করবে। টেলিমেডিসিনের সুবিধাও থাকবে। সে ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা শহরে বসেই পরামর্শ দিতে পারবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy