প্রতীকী ছবি
প্রদোষ মিত্তির হয়তো বলতেন, টেলিপ্যাথির জোর আছে!
তা না-হলে চিত্রতারকা অক্ষয় কুমার আর ব্যাডমিন্টন তারকা সাইনা নেহওয়ালের টুইট কী করে দাঁড়িকমাসুদ্ধ মিলে যাবে। সঙ্গীতসম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকর থেকে বিরাট কোহলি, অনিল কুম্বলে, সুরেশ রায়নাদের টুইটেও আশ্চর্য মিল। এবং সবারই ‘অ্যামিকেব্ল’ শব্দটিতে প্রীতি। যেমন ‘আমি বিদ্যাসাগর কলেজের ছাত্র’ বা ‘আমি ক্ষুদ্র কৃষক’ শীর্ষক পোস্ট হুবহু দেখা গিয়েছিল মোদীসরকারপন্থী অনেকেরই ই-দেওয়ালে।
কুম্বলের মন্তব্যটি আবার রিটুইট করেছেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কর্ন জোহর বা সচিনের টুইটটি সামান্য আলাদা। মানে তাতে অ্যামিকেব্ল শব্দটি নেই। তবু সচিনও আর সবার মতো #ইন্ডিয়াটুগেদার বা #ইন্ডিয়াআগেন্স্টপ্রোপাগান্ডা হ্যাশট্যাগ চিহ্নটি বহন করছেন। বেশির ভাগ টুইটে ইংরেজিতে বহুল প্রচলিত ‘অ্যামিকেব্ল’ শব্দটির প্রতি টান দেখে মহারাষ্ট্রের এক বিধায়কের কটাক্ষ, সবই জয় শাহকে (অমিত শাহের পুত্র) দেশের ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সচিব পদে দেখার সুফল। সব ক্রিকেটারই ‘অ্যামিকেব্ল সলিউশন’ বা শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির মানেটা শিখে ফেলেছেন।
হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি তথা একদা রাজ্যের ‘স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি’র চেয়ারম্যান সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আদালতে অ্যামিকেব্ল সেট্লমেন্ট শব্দটির প্রয়োগ বহু দিনের। সাদা বাংলায়, মিটমাট। আইনের বিধানে অনেক কিছুর ফয়সালা হতেই বিরাট সময় লাগে। চটজলদি মুশকিল আসানের জন্যই অনেক সময়ে আদালতও সালিশির পরামর্শ দেয়।’’ সমরেশবাবুর বক্তব্য, আমেরিকাতেও ১১ শতাংশ মামলায় কোর্ট হস্তক্ষেপ করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দু’পক্ষই সালিশির আশ্রয় নেয়। ইংরেজি ও ফরাসি সাহিত্যের শিক্ষক চিন্ময় গুহের মতে, ‘‘অ্যামিকেব্ল শব্দটি পনেরো শতক নাগাদ ল্যাটিন ‘অ্যামিক্যাবিলিস’ থেকে ইংরেজিতে ঢুকছে, যার অর্থ বন্ধুত্বপূর্ণ। ফরাসিতে শব্দটির প্রচলন আঠেরো শতক নাগাদ। ইংরেজি সাহিত্যের প্রথম যুগের উপন্যাস, হেনরি ফিল্ডিংয়ের টম জোন্স বা লরেন্স স্টার্নের ট্রিস্ট্রাম শ্যান্ডিতেও শব্দটির ব্যবহার রয়েছে। এডমান্ড বার্ক, জন স্টুয়ার্ট মিলের মতো চিন্তাবিদেরাও এই শব্দটি ব্যবহার করেছেন।’’
ইংরেজি, ফরাসিতে কয়েক শো বছর ধরে চেনা অ্যামিকেব্ল-ই এখন এ দেশে ফেসবুক, টুইটারে জনপ্রিয় লব্জের প্রথম সারিতে। চিন্ময়বাবু বলছিলেন, ‘‘এমনিতে তো শব্দটিতে দোষ নেই! কিন্তু সকলেই এক সঙ্গে বলতে শুরু করলে কেমন তোতাপাখির মতো লাগে! সেটাই সন্দেহের...!’’
কৃষি আন্দোলন মোকাবিলায় মোদী সরকারের ভূমিকা নিয়ে রিহানা, গ্রেটা থুনবার্গের মতো তারকা বা সমাজকর্মী টুইটারে সরব হতেই এ সব ভারতের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা বা অপপ্রচার বলে সরব হয়েছে বিদেশমন্ত্রক। এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিচিত এ দেশের সেলিব্রিটিদেরও মুখ খুলতে দেখা যাচ্ছে। তবে সচিন তেন্ডুলকরও সরকারপক্ষের হয়ে ব্যাটিং করার জন্য টুইটারে ধিকৃত হয়েছেন। কেউ তাঁকে বলছেন, চাষিদের আর্জি দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার হলে, গৃহহিংসাতেও বাইরের লোকে কিছু বলতে পারবে না। অ্যামিকেব্ল বা বন্ধুত্বপূর্ণ মিটমাটের নমুনা হিসেবে অনেকেই টুইটারে গাজ়িপুর সীমানায় দিল্লি পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকার কথাও তুলে ধরেছেন। সমাজমাধ্যম জুড়ে দম্পতিদের অ্যামিকেব্ল বিচ্ছেদ নিয়েও চলছে মস্করা।
তারকাদের তোতা-কাহিনিতে প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি সত্যিই মিটমাট চায়? না, অ্যামিকেব্ল শব্দটির মোড়কে ভাবমূর্তি চুনকাম করার চেষ্টা চলছে। জরুরি অবস্থার সময়ে ‘আপাতত শান্তিকল্যাণ’ কবিতায় শঙ্খ ঘোষ লেখেন, ‘তরল আগুন ভরে পাকস্থলী / যে-কথাটাই বলাতে চাও বলি / সত্য এবার হয়েছে জমকালো’! অনেকেই সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy