Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Rafale Scam

Rafale: রাফালে ‘ঘুষ’, ঠুঁটো সিবিআই

মিডিয়াপার্ট-এর তদন্তে বলা হয়েছে, যে ভারতীয় দালালের মাধ্যমে ভারত সরকারের সঙ্গে দাসো-র রাফাল বিমান কেনার চুক্তি হয়েছে, তাঁর নাম সুষেণ গুপ্ত।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২১ ০৬:০৩
Share: Save:

রাফাল বিমান কেনার জন্য বিপুল পরিমাণ ঘুষ লেনদেন হয়েছে। যে ভারতীয় দালাল রাফাল নির্মাতা দাসো অ্যাভিয়েশন-এর কাছ থেকে সেই ঘুষ নিয়েছেন, তাঁর নাম, তাঁর টাকা পাওয়ার নথি, এমনকি যে ভাবে এই লেনদেন হয়েছে তার সবিস্তার তথ্য হাতে পাওয়ার পরেও তদন্তে এগোনো থেকে বিরত থেকেছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের অধীনে থাকা সিবিআই এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বেসরকারি ভাবে তদন্ত চালিয়ে ফরাসি অনলাইন সংবাদমাধ্যম মিডিয়াপার্ট এই সব তথ্য সামনে আনার পরে ফের এক বার রাফাল কেলেঙ্কারি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বুক ঠুকে দেওয়া ‘না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা’ স্লোগান নিয়েও হাসাহাসি হচ্ছে। সরকারের তরফে সোমবার গোটা দিনে অভিযোগের জবাব দিতে অবশ্য কেউ এগিয়ে আসেনি। আসরে নেমে ব্যাখ্যা চেয়েছে কংগ্রেস।

মিডিয়াপার্ট-এর তদন্তে বলা হয়েছে, যে ভারতীয় দালালের মাধ্যমে ভারত সরকারের সঙ্গে দাসো-র রাফাল বিমান কেনার চুক্তি হয়েছে, তাঁর নাম সুষেণ গুপ্ত। নরেন্দ্র মোদীর আমলে রাফাল চুক্তিটি চূড়ান্ত হওয়ার পরে বিমান নির্মাতা সংস্থা দাসো এই সুষেণকে ৭৫ লক্ষ ইউরো ‘কাটমানি’ দিয়েছে, ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ৬৪ কোটি ২৯ লক্ষ টাকার সমান। দু’টি ছদ্ম-কোম্পানির মাধ্যমে এই টাকা লেনদেন হয়েছে। ফরাসি সংবাদমাধ্যমটির তদন্তে উঠে এসেছে, শুধু রাফাল বিমানই নয়, ভিভিআইপি-দের জন্য অগুস্তা ওয়েস্টারল্যান্ডের কাছ থেকে হেলিকপ্টার কেনার সময়েও এই সুষেণই দালালের ভূমিকায় ছিলেন, মোটা কমিশনও পেয়েছেন সে জন্য। মিডিয়াপার্ট জানাচ্ছে, এই কপ্টার কেনার কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমেই সিবিআই এবং ইডি রাফাল ক্রয়ে বেআইনি ভাবে কমিশন আদানপ্রদানের সুনির্দিষ্ট তথ্য, টাকার পরিমাণ, এমনকি ভুয়ো ইনভয়েস পর্যন্ত পায়। ২০১৮-র ১১ অক্টোবর এই সব তথ্যপ্রমাণ সিবিআই ও ইডি-র হাতে আসে। কিন্তু তার পরেও বিষয়টির তদন্ত না-করার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। সিবিআইকে নিয়ন্ত্রণ করে নরেন্দ্র মোদীর দফতর পিএমও। সুতরাং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ও নির্দেশ ছাড়া কোনও কাজে এগোনো এই তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয়। একই ভাবে অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে হওয়ায় ইডি-র পক্ষেও শাহের নির্দেশ ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ অসম্ভব। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কাকে আড়াল করতে এই দুই কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থাকে রাফাল কেলেঙ্কারি নিয়ে না-এগোনোর নির্দেশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারের দুই শীর্ষ নেতা?

কী ভাবে রাফাল নির্মাতা দাসো-র সঙ্গে দালাল সুষেণের লেনদেন হয়েছিল, তা সবিস্তার উঠে এসেছে মিডিয়াপার্ট-এর তদন্তে। ইন্টারস্টেলার টেকনোলজিস নামে একটি ছদ্ম কোম্পানি খুলে মরি‌শাসে তা নথিভুক্ত করা হয়। এই ধরনের কোম্পানি কেবল টাকা লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে বলে এদের বলা হয় ‘শেল কোম্পানি’। ইন্টারস্টেলারের মালিক হিসেবে নাম রাখা হয় গুপ্ত পরিবারের এক জনকে, যিনি আপাতত দক্ষিণ আফ্রিকায় বসবাস করছেন। কংগ্রেস আমলে ২০০৭-এ রাফাল কেনার বিষয়ে কথাবার্তা শুরু হওয়ার পর থেকেই ২০১২ পর্যন্ত সেখানে টাকা জমা পড়ে। কিন্তু ২০১৫-য় বিজেপি সরকারের আমলে যখন বেশ কিছু সংশোধন নিয়ে চুক্তিটি চূড়ান্ত হয়, তার পর থেকেই লেনদেন সন্দেহজনক হয়ে ওঠে। সেই লেনদেনটি হয় সিঙ্গাপুরের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাকে পরিষেবা দেওয়ার বিনিময়ে দাম দেওয়ার ছলে।

সংবাদমাধ্যমটির তদন্তে উঠে এসেছে, একই ভাবে অগুস্তাও কমিশন দিয়েছিল গুপ্তকে। ইন্টারস্টেলারের ব্যাঙ্কের হিসেবের নথিতেই এই লেনদেনের কথা রয়েছে। ভুয়ো ইনভয়েসের সঙ্গে সেই হিসেবও সিবিআই-ইডি-র হাতে পৌঁছেছিল।

এই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেই কংগ্রেস উঠে পড়ে লেগেছে সরকারের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি অগুস্তার মালিক ফিনমেকানিকা সংস্থাকে কালো তালিকা থেকে রেহাই দিয়েছে কেন্দ্র। কংগ্রেসের দাবি— এই সংস্থার সঙ্গে বিজেপির কী সম্পর্ক, তা সামনে আনতে হবে। রাহুল গাঁধী টুইটে বলেছেন, ‘এর আগে অগুস্তা ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত, বিজেপির লন্ড্রিতে কেচে তার সব ময়লা উঠে গিয়েছে!’ কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী অগুস্তাকে বলেছিলেন দুর্নীতিগ্রস্ত, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভুয়ো সংস্থা। একের পর এক মন্ত্রী সংসদে এই কোম্পানিকে কেলেঙ্কারির জনক বলেছিলেন। বিজেপির সঙ্গে অগুস্তা ও ফিনোমেকানিকার কী বোঝাপড়া হয়েছে, সেটা প্রকাশ্যে আনতে হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE