বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। —ফাইল চিত্র
লাল দুর্গ হিসেবে পরিচিত জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনটি ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সেখানকার জার্নালে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে জেএনইউ-র দিনগুলি তাঁর জীবনে ‘সব চেয়ে বেশি প্রভাব’ ফেলেছে। ক্যাম্পাসে তাঁর পরিচিতি ছিল ‘মুক্ত চিন্তক’ হিসেবে, যিনি উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া কোনও আদর্শে বিশ্বাসী নন।
পরবর্তী কালে জয়শঙ্করকে দেখা গিয়েছে মনমোহন সিংহ সরকারের অন্যতম কুশলী কূটনীতিক হিসাবে। ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি রূপায়ণের জন্য যাঁরা কূটনৈতিক দৌত্য চালিয়ে গিয়েছেন তাঁদের মধ্যে জয়শঙ্কর ছিলেন অগ্রগণ্য।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বদলানোয় দক্ষ সেই ‘মুক্ত চিন্তক’ আজকের বিদেশমন্ত্রী, মোদী জমানায় পরিণত হয়েছেন এক কার্যকরী বিজেপি নেতায়— এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিবির। সূত্রের বক্তব্য, অগস্ট মাসে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ থেকে শুরু করে দিল্লির হিংসা পর্যন্ত— কখনও সরবে কখনও রাজনীতিক সুলভ আড়ালে, মোদী সরকারের হয়ে বিশ্বের সামনে ব্যাটিং করে যাচ্ছেন ধারাবাহিক ভাবে। প্রবল আন্তর্জাতিক চাপ তাঁর দেশের উপরে তৈরি হচ্ছে তা বুঝতে পেরে মোকাবিলায় নেমেছেন কার্যত প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্র হয়ে। সিএএ-এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশে তৈরি হওয়া ক্ষোভ নিরসনে জয়শঙ্করকেই কাজে লাগিয়েছেন মোদী। অক্টোবরে যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আসেন তখন তাঁর প্রতিনিধি দলের তরফে বারবার বলা হয়েছিল, এনআরসি নিয়ে জয়শঙ্কর যা বলছেন তার সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্যের মিল নেই। সূত্রের দাবি, গুজরাতের পোড় খাওয়া নেতা অমিতের কাছ থেকে ভিন্নধর্মী কথা বলার ছাড়পত্র তখনই পেয়ে গিয়েছিলেন জয়শঙ্কর।
সিএএ প্রসঙ্গে সরব হয়ে ব্রিটেন-সহ ইউরোপের বেশ কিছু দেশ, মার্কিন কংগ্রেসের একাংশ, ওআইসিভুক্ত বিভিন্ন দেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে চাপ বাড়াচ্ছে। ভাবমূর্তি রক্ষায় লড়ে যাচ্ছেন জয়শঙ্করই।
গুজরাত থেকে রাজ্যসভায় জিতিয়ে আনা হয়েছে তাঁকে। গত কাল আমদাবাদে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে জাতীয়তাবাদের জয়গান করেছেন জয়শঙ্কর। বলেছেন, ‘‘বর্তমানে ভারতে সংরক্ষণশীলদের তুলনায় উদারপন্থীরাই পরিবর্তনকে বেশি বাধা দিচ্ছেন।’’ অবশ্যই সিএএ-বিরোধী প্রতিবাদ বা দিল্লির সাম্প্রতিক হিংসার প্রসঙ্গ সরাসরি তোলেননি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি-র আদর্শকেই তুলে ধরেছেন প্রকারান্তরে। জানিয়েছেন, জাতীয়তাবাদ বর্তমান বিশ্বব্যবস্থার একটি প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেছে। তাঁর যুক্তি, প্রত্যেকটি দেশের জাতীয়তাবাদের ধারণা পৃথক। ‘‘আমাদের কাছে জাতীয়তাবাদ হল দীর্ঘদিন চাপের মধ্যে থাকার পরে বিশ্বে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর হাতিয়ার। তাছাড়া গোটা বিশ্বেই নিজেদের শিকড় এবং স্বাধীনতা খুঁজে পাওয়ার সঠিক মাধ্যম হল জাতীয়তাবাদ।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সমাজে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে তথাকথিত সংরক্ষণশীলদের তুলনায় উদারপন্থীরা পরিবর্তনের বেশি বিরোধিতা করছেন। শুধুমাত্র নিরাপত্তা বা রাজনৈতিক বিষয়ে নয়, সামাজিক এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রেও। পরিবর্তন-বিরোধিতার মধ্যে একটা যেন নৈতিকতার তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy