ফাইল চিত্র
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভূকৌশলগত বিষয়ে মতৈক্য। নাম না করে পাকিস্তান এবং চিনের ভূমিকার সমালোচনা করে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তায় দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়ানো। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যৌথ পথ চলা শুরু করা। সব মিলিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের দু’দিনের ভারত সফরে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক ধাক্কায অনেকটাই এগোল, এমনটাই দাবি করছে বিদেশ মন্ত্রক। সাংবাদিক সম্মেলনে বরিস জনসন এ কথাও জানিয়েছেন, আগামী দীপাবলির মধ্যেই ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়িত করতে চান তিনি।
এমন একটা সময়ে বরিস জনসনের ভারত সফর যখন রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিপর্যস্ত। রাশিয়া সম্পর্কে ভারতের ভারসাম্যের অবস্থান নিয়ে এর আগে ঘোরতর সমালোচনা করেছিল ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। ব্রিটেন ছিল তার মধ্যে অগ্রগণ্য। কিন্তু শুক্রবার মোদী-বরিস বৈঠকের পর ইউক্রেন প্রশ্নে মতৈক্যের আভাস পাওয়া গিয়েছে দুই নেতার বক্তব্য। যৌথ বিবৃতিতেও এই বিষয়ে এক সুরে কথা বলেছে ভারত-ব্রিটেন। পাশাপাশি বরিসের সফরে ভারতের বড় প্রাপ্তি ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের একাধিপত্য কমানোর উদ্যোগে ব্রিটেনের মতো শক্তিধর দেশকে পাশে টানতে পারা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাগত জানিয়েছেন সমুদ্রপথে ব্রিটেনের শামিল হওয়ার সিদ্ধান্তকে। অন্য দিকে চিনের নাম না করে বরিসের বক্তব্য, “দু’টি দেশই মনে করে উদার, আন্তর্জাতিক আইনের শাসন মানা এবং সমৃদ্ধ ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু গত বছর থেকে এই অঞ্চলে স্বৈরাচারী পদক্ষেপ বেড়েছে। সে কারণেই ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে স্বাধীন এবং উন্মুক্ত রাখতে ভারতের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা বাড়ানোটা জরুরি।”
ইউক্রেন নিয়েও ভারতের অবস্থান নিয়ে মোটের উপর সহিষ্ণুতাই দেখা গিয়েছে ব্রিটেনের। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বরিসকে বলতে শোনা গিয়েছে, “শুধু ইউক্রেন নয়, গোটা বিশ্বেই পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে ভারত এবং ব্রিটেন কিছু না কিছু করতে বাধ্য। রাশিয়া সম্পর্কে ভারতের অবস্থান তো জানাই আছে। সেটা আর বদলাবে না।” অন্য দিকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “ইউক্রেন প্রসঙ্গে আলোচনা এবং কূটনীতি উপর আমরা জোর দিয়েছি। অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির কথাও বলেছি। সমস্ত দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়টিও ফের উঠে এসেছে আলোচনায়।” আফগানিস্তানে তালিবান সরকারের কথা উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক বৈঠকে। বলেছেন, “কাবুলের মাটিকে ব্যবহার করে যাতে অন্য দেশে সন্ত্রাস ছড়ানো না হয়, সে দিকেও নজর রাখতে বলছি আমরা।” উল্লেখ্য, প্রতিটি বিষয়টিই জায়গা করে নিয়েছে ভারত-ব্রিটেন যৌথ বিবৃতিতে।
শীর্ষ বৈঠকের পরে দু’দেশের সরকারের মধ্যে এবং বেসরকারি সংস্থার মধ্যে আণবিক শক্তি ক্ষেত্র, শিক্ষা, বায়ুশক্তি, মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে চুক্তিপত্র সই হয়েছে। এর আগেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতার প্রশ্নে ‘রোডম্যাপ ২০৩০’ তৈরি করে তাকে বাস্তবায়িত করার কাজ শুরু হয়েছিল।
কূটনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, ভারত-ব্রিটেন বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যে বিস্তৃত সমঝোতার কথা বলা হয়েছে তা আজকের ভূকৌশলগত বাস্তবতায় নয়াদিল্লির জন্য স্বস্তিজনক। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ব্রিটেনের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব থেকেছে সাউথ ব্লক। কিন্তু আজ যৌথ বিবৃতিতে পাকিস্তান এবং চিনের আগ্রাসী মানসিকতার কথা মেনে নিয়ে সামরিক ভাবে ভারতের পাশে থাকার কথাও বলেছে ব্রিটেন।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘দুই দেশের নেতাই সন্ত্রাসবাদের প্রশ্নে ‘জ়িরো টলারেন্স’-এ বিশ্বাসী। সন্ত্রাসবাদকে সহায়তা করা, পুঁজি জোগানো এবং তাকে ঘাঁটি
গাড়তে দেওয়ার ঘোর বিরোধিতা করে ভারত ও ব্রিটেন। এই দুই দেশ সমস্ত রাষ্ট্রকে আহ্বান করছে সন্ত্রাসবাদীদের নিরাপদ স্বর্গরাজ্য, পরিকাঠামো, আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসকে ধ্বংস করার জন্য এগিয়ে আসতে।’ পঠানকোট, মুম্বই হামলার কথাও রাখা হয়েছে যৌথ বিবৃতিতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy