Advertisement
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Jammu and Kashmir Assembly Election 2024

নজর তফসিলি ভোটে, নির্ণায়ক শক্তি হতে চায় বিজেপি

রাজৌরি এবং পুঞ্চের যথাক্রমে ৫টি এবং ৩টি আসন এ বার ‘খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে’ বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। রাজৌরি, পুঞ্চের মোট আসনের মধ্যে ৫টি সংরক্ষিত তফসিলি জনজাতির জন্য।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল ছবি।

অগ্নি রায়
জম্মু শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৯:৪৩
Share: Save:

সত্তর বছর ধরে জঞ্জাল সাফাই করতে করতে সমাজে চাপা পড়ে যাচ্ছিলেন ওঁরা। না ছিল ভোটাধিকার, না পেতেন কোনও সরকারি প্রকল্পের সুবিধা। পিআরসি অর্থাৎ ‘পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট সার্টিফিকেট’ নেই বলে ব্যবসা-বাণিজ্য, জমি কেনার অধিকারও ছিল না। এক কথায়, ‘নেই মানুষ’ হয়ে ছিলেন জম্মুর বাল্মীকি সম্প্রদায়।

“সেই পঞ্চাশের দশকে পঞ্জাব থেকে জম্মুতে এসেছিলাম। তিন প্রজন্ম সাফাইয়ের কাজ করে পৃথিবী ছাড়লেন। অবশেষে আমাদের ভোটদানের অধিকার মিলল। বিজেপির কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। ২০১৯-এর ৫ অগস্ট যেন আমাদের পুনর্জন্ম হল। ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকত্বের এক বিশেষ সংশোধনীতে আমাদের পিআরসি দেওয়া হল।” বাল্মীকি কলোনি নামে প্রসিদ্ধ জম্মুর গান্ধীনগরে বসে কথাগুলি বলছিলেন এই সমাজের অন্যতম নেতা সুনীল ভাট্টি। তিনি বলে চললেন, “৫৭ সালে জম্মু পুরসভার সাফাই কর্মীরা বিভিন্ন দাবিদাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য হরতালে চলে গেলেন, অমৃতসর গুরুদাসপুরে বসবাসকারী বাল্মীকি সম্প্রদায়কে এখানে নিয়ে আসা হয়। বিদ্যুৎ, জল, কলোনির সব সুবিধা প্রাথমিক ভাবে দেওয়া হয়। কিন্তু এই পর্যন্তই। নতুন প্রজন্ম বলছে গ্র্যাজুয়েট হয়ে কেন তাঁরা ঝাড়ু দেবেন? আমাদের মেধাবী ছাত্রী মীনা গিল ডাক্তারি পড়তে চায়। কিন্তু পিআরসি নেই বলে সে প্রবেশিকা পরীক্ষাই দিতে পারেনি। এনসি, পিডিপি আমাদের ধোঁকা দিয়ে এসেছে।” বাল্মীকি সমাজের শক্তি যে গোটা জম্মুতে প্রবল, বিষয়টা এমন নয়। বিজেপির কৌশল, এর ফলে তফসিলি জাতির উদ্দেশে বার্তা দেওয়া যাবে। একই ভাবে, মুসলমান সমাজকেও ভাঙার চেষ্টা করছে পদ্মশিবির। পাহাড়িদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ঘটনা হল, পাহাড়িদের মধ্যে হিন্দু, শিখ যেমন রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষও।

আগামিকালের ভোটে রাজৌরি এবং পুঞ্চের যথাক্রমে ৫টি এবং ৩টি আসন এ বার ‘খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে’ বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। রাজৌরি, পুঞ্চের মোট আসনের মধ্যে ৫টি সংরক্ষিত তফসিলি জনজাতির জন্য। এখানে পাহাড়িদের সঙ্গে লড়াই গুজ্জর, বাকারওয়ালদের। ভোটের অঙ্ক মাথায় রেখে পাহাড়িদের জনজাতির তালিকাভুক্ত করেছে বিজেপি সরকার। তাদের মধ্যে অন্য ধর্মীয় সম্প্রদায় থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু উচ্চবর্ণের মানুষ। আবার গুজ্জরদের মধ্যেও খয়রাতি চালিয়ে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করেছে বিজেপি।

২০১৪ সালের নির্বাচনে রাজৌরি, পুঞ্চ থেকে ৭টি আসন পেয়েছিল ওমর আবদুল্লার দল এনসি। এ বার ওমরকে প্রতি মুসলিম মহল্লায় বলতে হচ্ছে, ‘তোমরা ভোট ভাগ করো না। হয় এনসি কংগ্রেসকে দাও অথবা পিডিপি-কে দাও।’ জম্মুতে মুসলমান ভোট ভাগ হলে বিজেপি সুবিধা পেয়ে এগিয়ে যাবে। পাশাপাশি, জম্মু (১১) কাঠুয়া (৫) এবং সাম্বা (৩) জেলার মোট ১৯টি আসনে হিন্দু ভোটের শতকরা হার এমনিতেই বেশি। রয়েছে রাজপুত এবং অন্যান্য জাত। সেখানে বিজেপির প্রভাব বেশি।

বিজেপির অফিসে বসে অন্যতম বর্ষীয়ান নেতা কবীন্দ্র গুপ্ত বললেন, “শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ১৯৫৩ সালে যখন এখানে আসেন সেই সময় থেকে প্রজা পরিষদের প্রেমনাথ ডোগরা ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের আন্দোলন করেছেন। এক নিষান এক বিধান এক প্রধানের আন্দোলনের জন্য রামবান, রামনগরে শহিদ হন অনেকে। মানুষের কাছে আমরা এ কথাই তুলে ধরছি যে নিয়ন্ত্রণরেখায় তুলনামূলক ভাবে শান্তি এনেছে বিজেপি। বিকাশ ও পর্যটনের জোয়ার এসেছে উপত্যকায়। অমিত শাহ বলে গিয়েছেন সন্ত্রাসবাদ নয়, পর্যটন এখন জম্মু কাশ্মীরের পরিচয়।”

সরকার গড়ার মতো আসন (ম্যাজিক সংখ্যা ৪৬) একা যে আনা যাবে না জম্মু ও কাশ্মীর মিলিয়ে, তা জানে বিজেপি। কিন্তু একক ভাবে সবচেয়ে বড় দল হওয়ার লক্ষ্যই সামনে রেখে এগোচ্ছে নরেন্দ্র মোদীর দল। তাই বার রার ছুটে আসছেন মোদী। সরকার বিজেপির সমর্থন ছাড়া যেন তৈরি হতে না পারে সেটা আপাতত অগ্রাধিকার। তা ছাড়া, ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের প্রবল বিরোধিতা করা রাজনৈতিক এবং সামাজিক অংশকেও মুখের মতো জবাব দিতে চাইছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jammu and Kashmir Assembly Election 2024 BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE