ঐতিহ্যের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকতে উত্তরোত্তর আরও নাম জুড়ছেন নরেন্দ্র মোদী।
লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই নেহরু-গাঁধী পরিবারকে আক্রমণের জন্য সর্দার বল্লভভাই পটেলকে হাতিয়ার করেছিলেন মোদী। ক্ষমতায় এসেও ইতিহাসের পাতা থেকে কংগ্রেস-বিরোধী রাজনৈতিক চরিত্রদের বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের ঐতিহ্য কেড়ে নেওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন। সরকারের প্রথম বাজেটেই শ্যামপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পাশাপাশি পটেল, জয়প্রকাশ নারায়ণ, পণ্ডিত মদনমোহন মালব্যের নামে প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল। এমনকী, একসময় যে কংগ্রেস নেতা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নরসিংহ রাওকে ব্রাত্য করেছিল কংগ্রেস, তাঁর নামে দিল্লিতে স্মারক গড়ার তোড়জোড়ও করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় নতুন সংযোজন দেখা গেল গত তিন দিনে। কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি কে কামরাজের জন্মবার্ষিকীতে সামিল হলেন বিজেপি-র শীর্ষ নেতারা। আর গতকাল জম্মুতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির শ্বশুর কংগ্রেস নেতা গিরিধারী লাল ডোগরার জন্মশতবর্ষে জম্মুতে ছুটে গেলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
গতকাল জম্মুর অনুষ্ঠানে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে আজাদ বোঝানোর চেষ্টা করেন, কংগ্রেসের উত্থানের জন্য ডোগরার ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পর ক্ষণেই মোদী তাঁর জবাব দিয়ে বলেন, মঞ্চস্থলে যে প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে, তাতে ডোগরার সঙ্গে বিরোধী দলের নেতাদের ছবিই বেশি দেখা যাচ্ছে। অরুণ জেটলির সঙ্গে মতাদর্শগত ফারাক থাকলেও নিজের মেয়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে দিয়েছেন, তাতে স্পষ্ট, নিজের রাজনৈতিক বিচারধারার উর্ধ্বে উঠে তিনি কাজ করতেন। ঠিক একই ভাবে তিন দিন আগে তামিলনাড়ুতে রাজনাথ সিংহ ও বেঙ্কাইয়া নায়ডুও চলে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি কে কামরাজের জন্মবার্ষিকী পালনে। সেখানে বেঙ্কাইয়া কামরাজের সঙ্গে সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর তুলনা টেনে বসেন। বেঙ্কাইয়া বলেন, ‘‘যে ভাবে কামরাজ গরিবদের উন্নয়ন করেছেন, সেচ ও শিল্পের প্রসার ঘটিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও একই ভাবে সেই চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’’
বিজেপি-র শীর্ষ সূত্রের মতে, লোকসভা নির্বাচন থেকেই দলের লক্ষ্য ছিল কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়ার। তাই শুধু বিজেপি বা জনসঙ্ঘের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরই স্বীকৃতি দিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছে না দল, বরং ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে এনে এমন ব্যক্তিদেরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, যাঁরা একসময়ে কংগ্রেসে থাকলেও পরে কংগ্রেসের বিরোধিতা করেছেন অথবা কংগ্রেস তাঁদের ভুলে গিয়েছে। নরসিংহ রাওয়ের মৃত্যুর পর তাঁর অন্ত্যেষ্টি যাতে দিল্লিতে গাঁধী পরিবারের আশপাশে না হয়, তা সুনিশ্চিত করেছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসে ব্রাত্য সেই রাও-এর স্মারক তৈরিতেই এ বারে উদ্যোগী হয়েছে মোদী সরকার। বিজেপি-র এক নেতার কথায়, ‘‘নরসিংহ রাওকে নিয়ে বিজেপি-র এই তৎপরতা দেখে এখন কংগ্রেসও এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করতে বাধ্য হচ্ছে। কংগ্রেস যে ইতিহাস ভুলে যেতে চাইছে, সেটিকেই আমরা নতুন করে পুনরুজ্জীবিত করছি। কংগ্রেস জমানায় সরকারের সিংহভাগ প্রকল্প নেহরু-গাঁধী পরিবারের কারও না কারও নামে করা হয়েছে। বাকি নেতাদের পুরোদস্তুর ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। আমরা সেই চল ভাঙতে চাইছি। ভবিষ্যতে রামমনোহর লোহিয়া কিংবা এন টি রামা রাও-এর নামেও সরকারি প্রকল্প ঘোষণা হতে পারে। আরও ব্যক্তিত্বের নামও ভাবা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy