ছবি পিটিআই।
প্রকল্পের উদ্বোধন হোক বা শিলান্যাস। রাজ্যের নাম বিহার হোক কিংবা উত্তরপ্রদেশ। প্রায় সমস্ত ক্ষেত্রে ‘বিজ্ঞাপন’ সেই ‘ডাবল এঞ্জিন’ সরকারেরই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার ভোট প্রচারেও কেন্দ্র এবং রাজ্যে একই দল ক্ষমতায় থাকার সুবিধার কথা বার বার তুলবে বিজেপি। তা না-থাকার অসুবিধা তুলে ধরে যার গৌরচন্দ্রিকা ইতিমধ্যেই করে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
আজ এক ভিডিয়ো-অনুষ্ঠানে উত্তরপ্রদেশের বিন্ধ্যাঞ্চলের ২,৯৯৫টি গ্রামে ‘প্রতি বাড়িতে কল থেকে পানীয় জল’ প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের দাবি, দু’বছরের মধ্যে ৫,৫৫৫ কোটি টাকার এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে, উপকৃত হবেন ৪২ লক্ষ বাসিন্দা। প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়েছেন, ‘জল জীবন মিশনের’ আওতাভুক্ত এই প্রকল্পের দৌলতে পাইপ বেয়ে পানীয় জল পৌঁছেছে দেশে ২.৬ কোটি পরিবারের দরজায়। যার একটি বড় অংশ উত্তরপ্রদেশে। এই প্রকল্প দ্রুত কার্যকর করা ছাড়াও, করোনা মোকাবিলার মতো বিভিন্ন বিষয়ে যোগী সরকার যে ভাবে কেন্দ্রের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে লড়েছে, তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন মোদী।
রাজনৈতিক মহলের মতে, কেন্দ্র-রাজ্যের ‘পারস্পরিক প্রশংসার এই মডেল’ শুধু উত্তরপ্রদেশ কিংবা জল জীবন মিশনে সীমাবদ্ধ নয়। বিহারে বিধানসভা ভোটের প্রায় বছর দেড়েক আগে থেকে একের পর এক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন ওই রাজ্যের জন্য করেছে মোদী সরকার। এখন এই একই কৌশল ক্রমশ দেখা যাচ্ছে গুজরাত, উত্তরপ্রদেশের ক্ষেত্রে। এই দু’রাজ্যেই ভোট হওয়ার কথা ২০২২ সালে। কিন্তু এখন থেকেই নিয়মিত তাদের জন্য প্রকল্প ঘোষণার পাশাপাশি ‘ডাবল এঞ্জিন’ সরকার বজায় রাখার কথা আকারে-ইঙ্গিতে বলতে শুরু করেছে বিজেপি।
আবার যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপি কিংবা এনডিএ জোটের সরকার নেই, বিহার-গুজরাত-উত্তরপ্রদেশে ‘ডাবল এঞ্জিন’ সরকারের ফায়দা তুলে ধরার চেষ্টা হচ্ছে সেখানে। যেমন, কেন্দ্র ও রাজ্যে একই দলের সরকার না-থাকার খেসারত পশ্চিমবঙ্গকে কী ভাবে গুনতে হচ্ছে, সম্প্রতি কলকাতায় তা বলে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধিতে বছরে ৬,০০০ টাকা সরাসরি নিজেদের অ্যাকাউন্টে পান চাষিরা। আয়ুষ্মান প্রকল্পে বছরে ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমার কভারেজে উপকৃত অনেকে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পথ আগলে দাঁড়িয়ে থাকায় এই সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা থেকে বাংলার মানুষ বঞ্চিত। বিজেপি ক্ষমতায় এলে, সেই সমস্যা মিটবে বলে ইতিমধ্যেই দাবি তাঁর। যদিও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বক্তব্য, রাজ্যের নিজস্ব স্বাস্থ্য বিমা কিংবা দরিদ্রদের পাশে দাঁড়ানোর প্রকল্প কেন্দ্রীয় প্রকল্পের তুলনায় ঢের ভাল বলেই সেগুলি চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
যে রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রচারেই যান না কেন, জন-ধন অ্যাকাউন্ট, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-সহ সমস্ত কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কথা ফলাও করে বলেন মোদী। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, প্রথমত, তাতে এই সমস্ত জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া মানুষের ভোট ঝুলিতে পোরার তাগিদ থাকে। দ্বিতীয়ত, তুলে ধরা যায় ‘ডাবল এঞ্জিন’ সরকারের কার্যকারিতা। কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রকল্পের পরিকল্পনা আর সিংহ ভাগ খরচ জোগানোর কৃতিত্ব কেন্দ্রের ঝুলিতে যায়। রাজ্য প্রশংসা কুড়োয় তার দ্রুত রূপায়ণের জন্য। আর যেখানে বিরোধী দলের সরকার, প্রকল্প পরিকল্পনা মাফিক কার্যকর না-হওয়ার দায় অনায়াসে চাপিয়ে দেওয়া যায় তাদের কাঁধে। পশ্চিমবঙ্গে যে প্রচারের সম্ভবানা প্রবল বলেই রাজনৈতিক মহলের ইঙ্গিত।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের আরও ব্যাখ্যা, এই ‘যুগলবন্দির কথা’ তুলতে পারলে, আরও একটি রাজনৈতিক লাভ হয় বিজেপির। মোদীকে মুখ হিসেবে তুলে ধরে ভোটে গেলে যে বিজেপি অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় থাকে, গত দুই লোকসভা নির্বাচনে তা প্রমাণিত। অনেকেই বলেন, বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা ভোটে মুখ হিসেবে মোদীকে তুলে ধরা যায় না বলে অনেক ক্ষেত্রে প্রায় ১২ থেকে ১৬ শতাংশ বিন্দু ভোট কমে যায় বিজেপির। হোঁচট খেতে হয় মাঝেমধ্যেই। কিন্তু কৌশলে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারের কথা ভোটারদের মনে এক বার গেঁথে দিতে পারলে, রাজ্যের উন্নয়নের সঙ্গে কিছুটা সংযোগ তৈরি করে দেওয়া যায় মোদীরও। এমন ধারণা তৈরির চেষ্টা হয় যে, রাজ্যে বিজেপি কিংবা এনডিএ জোট ক্ষমতায় এলে, তখন অনেক বেশি করে কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়ে আসতে পারবেন মোদী। খানিকটা নজরদারি করতে পারবেন তার রূপায়ণে।
তাই উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতে যদি ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের গুণগান বিজেপির কৌশল হয়, তবে তা না-থাকার ক্ষতি তুলে ধরার চেষ্টা হয়তো তাদের অন্যতম অস্ত্র হবে পশ্চিমবঙ্গের ভোট প্রচারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy