জগদম্বিকা পাল। —ফাইল চিত্র।
ওয়াকফ সংশোধনী বিলের খসড়া পরিমার্জনের জন্য গড়া যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি)-র চেয়ারম্যান করা হয়েছে বিজেপির লোকসভা সাংসদ জগদম্বিকা পালকে। মঙ্গলবার সংবাদ সংস্থা পিটিআই এ কথা জানিয়েছে। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জগদম্বিকা টানা চার বার ওই রাজ্যের ডুমারিয়াগঞ্জ লোকসভা আসন থেকে জিতেছেন। এর মধ্যে ২০০৯ সালে কংগ্রেস এবং পরবর্তী তিনটি ভোটে বিজেপির টিকিটে।
গত ৮ অগস্ট বিরোধীদের প্রবল আপত্তি ও হট্টগোলের মধ্যেই লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। বিলটি অসংবিধানিক এবং মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী বলে বিরোধীরা একযোগে তা নিয়ে আপত্তি জানান। দীর্ঘ বিতর্কের শেষে ঐকমত্যের লক্ষ্যে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটির (জেপিসি)-র কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।
এই মুহূর্তে সংখ্যালঘু মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কিংবা সিলেক্ট কমিটি গঠন হয়নি। তাই বিতর্ক এড়াতে সরাসরি জেপিসি-তে বিলটি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে যে হেতু নতুন সরকারের জেপিসি এখনও তৈরি হয়নি, তাই স্পিকার ওম বিড়লা আজ জানিয়েছেন, তিনি সমস্ত দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ৩১ সদস্যের (২১ জন লোকসভা এবং ১০ জন রাজ্যসভা সাংসদ) জেপিসি গঠন করেন। নরেন্দ্র মোদী সরকার যে ভাবে বিলটি জেপিসি-তে পাঠিয়েছে, তা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজনীতির অনেকের মতে, সাধারণত কোনও বিল নিয়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হলে সরকার তখন আলোচনার লক্ষ্যে সিলেক্ট কমিটি বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে বিলটি পাঠিয়ে থাকে।
পরিসংখ্যান বলছে, মোদী সরকারের গত দশ বছরে কেবল জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (২০১৬) ও তথ্য সুরক্ষা আইন (২০১৯)-এর বিতর্কিত বিলই জেপিসি-র কাছে পাঠিয়েছিল। সেখানে বিরোধীদের দাবি তোলা মাত্র ওয়াকফ বিলটি জেপিসির কাছে পাঠানো স্পষ্ট করে দিয়েছে, এই সরকার কতটা দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। অন্তত এই মুহূর্তে বিরোধীদের সঙ্গে কোনও ধরনের বিরোধের রাস্তায় যেতে চাইছে না মোদী সরকার। সংশোধিত ওয়াকফ বিলের খসড়ায় ওয়াকফ বোর্ডে দু’জন মহিলার উপস্থিতির পাশাপাশি দু’জন অ-মুসলিম সদস্যও থাকবেন বলে শর্ত রয়েছে। বিরোধীদের প্রশ্ন, ‘‘অন্যান্য ধর্মের নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ভিন্ন ধর্মের ব্যক্তিরা যখন স্থান পান না, তখন ওয়াকফ বোর্ডে অ-মুসলিমদের স্থান দেওয়ার কী প্রয়োজন!’’
নতুন বিলের খসড়া অনুযায়ী, একমাত্র যাঁরা মুসলিম এবং শেষ পাঁচ বছর ধরে ইসলাম ধর্ম পালন করে চলেছেন তাঁরাই সম্পত্তি দান করতে পারবেন। ওই ধারা ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে দাবি করে হায়দরাবাদের এমআইএম দলের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি বলেছেন, ‘‘কেউ যদি সদ্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন, তা হলে তাঁকে দানের জন্য পাঁচ বছর অপেক্ষা করতে হবে। এটা কি ধর্মে হাত দেওয়া নয়?’’ তাঁর দাবি, নতুন আইনে যাবতীয় ক্ষমতা জেলাশাসকের হাতে চলে যাবে। এর ফলে জেলাশাসক ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যানের থেকেও শক্তিশালী হয়ে উঠবেন। যাবতীয় গুরুত্ব হারাবে ওয়াকফ বোর্ড।
বিরোধীরা ওই বিল পেশ নিয়ে আপত্তি জানাবেন, তা প্রত্যাশিত ছিল। তবে ওই বিল নিয়ে শরিক দলের অবস্থানেও সূক্ষ্ম বিভাজন চোখে পড়েছে, যা সরকারের কাছে কিছুটা হলেও উদ্বেগের। নীতীশ কুমারের জেডিইউ ওয়াকফ সংশোধনী বিলকে সম্পূর্ণ ভাবে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিলেও আর এক শরিক টিডিপি ‘বৃহত্তর আলোচনার স্বার্থে’ ওই বিলটি কোনও সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানোর সওয়াল করেছিল। বিলটি সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানোকে সমর্থন জানিয়েছেন বিহারের আর এক শরিক দল এলজেপি-ও। তবে কমিটি গঠন হলেও শেষ পর্যন্ত মোদী সরকার সংখ্যাধিক্যের জোরে বিল পাশ করিয়ে নেবে বলেই মনে করছেন বিরোধী নেতৃত্ব। কারণ, ৩১ সদস্যের কমিটিতে সরকারপক্ষের সদস্য ১৭ জন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy