Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বিজেপির ইস্তাহারে ফুঁসছে উত্তর-পূর্ব, নিশানায় মোদী

ছাপার ভুল বললেও মিটছে না ক্ষোভ। দিল্লির ভোটে বিজেপি ইস্তাহারে উত্তর-পূর্বের লোকেদের ‘ইমিগ্রান্ট’ (অভিবাসী) ও ‘মাইগ্রান্ট’ (ভিন্ রাজ্যের মানুষ) হিসেবে চিহ্নিত করায় ফুঁসছে নরেন্দ্র মোদীর ‘অষ্টলক্ষ্মী’। লোকসভা ভোট-প্রচারে এসে দেশের উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যকে ওই নামই দিয়েছিলেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী।

দিল্লির অম্বেডকর নগরে প্রচারে নরেন্দ্র মোদী এবং কিরণ বেদী। ছবি: পিটিআই

দিল্লির অম্বেডকর নগরে প্রচারে নরেন্দ্র মোদী এবং কিরণ বেদী। ছবি: পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০৩:০৫
Share: Save:

ছাপার ভুল বললেও মিটছে না ক্ষোভ।

দিল্লির ভোটে বিজেপি ইস্তাহারে উত্তর-পূর্বের লোকেদের ‘ইমিগ্রান্ট’ (অভিবাসী) ও ‘মাইগ্রান্ট’ (ভিন্ রাজ্যের মানুষ) হিসেবে চিহ্নিত করায় ফুঁসছে নরেন্দ্র মোদীর ‘অষ্টলক্ষ্মী’। লোকসভা ভোট-প্রচারে এসে দেশের উত্তর-পূর্বের আটটি রাজ্যকে ওই নামই দিয়েছিলেন গুজরাতের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী। আজ সে সব রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় পুড়েছে মোদী, রাজনাথ সিংহের কুশপুতুল। ক্ষোভ প্রশমনে তৎপর দিল্লির বিজেপি নেতৃত্ব। এ দিন একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভুল স্বীকার করেছেন। আসরে নেমেছেন খোদ মোদীও। তবে, ভুল স্বীকার বা ক্ষমা চাওয়ার পথে না হেঁটে, তিনি আক্রমণ শানিয়েছেন সমালোচকদের উদ্দেশে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “ভোট আসবে-যাবে। কিন্তু দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা নষ্ট হতে দেব না। আমি গোটা উত্তর-পূর্ব ভারত ঘুরেছি। ৬০ বছরে সেখানে যা উন্নতি হয়নি তা করে দেখাব। ছাপার ভুল নিয়ে রাজনীতি করে লাভ নেই।”

বিজেপি-র প্রথম সারির দুই নেতা রবিশঙ্কর প্রসাদ ও নির্মলা সীতারামনও পরপর সাংবাদিক বৈঠকে দুঃখপ্রকাশ করেন। এ দিন হিন্দিতে প্রকাশিত হয় বিজেপি-র ইস্তাহার। তাতে ওই সব শব্দের উল্লেখই করা হয়নি। নির্মলা বলেন, “উত্তর-পূর্বের মানুষের কাছে অনুরোধ, সামান্য মুদ্রণ বিভ্রাটের জন্য আমাদের সদিচ্ছাকে ছোট করে দেখবেন না। আপনাদের প্রতি আমরা বরাবর যত্নশীল।” তাঁর মন্তব্য, “বিজেপি ইস্তাহারের ভুল তুলে ধরে রাজনীতি করছেন কংগ্রেস, আম আদমির নেতারা। তাঁদের কাছে প্রশ্ন, আপনাদের ইস্তাহারে উত্তর-পূর্বের জন্য কেন একটিও বাক্য খরচ করা হয়নি?” গত কাল বিজেপি সাফাই দেয়, ইস্তাহারে ‘ভিন্ রাজ্যের মানুষের’ বদলে ছাপার ভুলে ‘অভিবাসী’ লেখা হয়েছে। কিন্তু, তাতে পরিস্থিতি বদলায়নি। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি হাতে নতুন ‘অস্ত্র’ পেয়ে যায়। উত্তর-পূর্বের বিদ্বজ্জন মহল দাবি করেন, ওই দু’টি শব্দই বিচ্ছিন্নতাবাদী।

গুয়াহাটি-সহ বিভিন্ন জেলায় রাস্তায় নামে অসম গণ পরিষদ, কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি, যুব কংগ্রেস, আমসু, আসু। কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির প্রধান অখিল গগৈ বলেন, “এত দিন ভিন্ দেশ থেকে বেআইনি ভাবে আসা লোকেদের অনুপ্রবেশকারী বলে চিনতাম। দেশের রাজধানীতে আমাদের একই পঙ্ক্তিতে বসিয়ে দিল বিজেপি। ভিন্ রাজ্যের মানুষ বললেও মেনে নেওয়া যায় না। তা হলে, দিল্লির মারোয়াড়ি বা পঞ্জাবিদেরও তা বলা হোক।” এর জেরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে সর্বানন্দ সোনোয়াল, কিরেণ রিজিজুর মতো উত্তর-পূর্বের প্রতিনিধিদের ইস্তফা দেওয়ার দাবি উঠেছে। আসু-র উপদেষ্টা সমুজ্জ্বল ভট্টাচার্য বলেন, “উত্তর-পূর্বের বাসিন্দাদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে বিজেপিকে। তবে, মানুষ তাঁদের ক্ষমা করতে পারবেন কি না সন্দেহ!”

প্রদেশ কংগ্রেসও এ দিন প্রতিবাদ মিছিল করে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেন, “আমরা ভারতীয় না বহিরাগত, তা ঠিক করার অধিকার বিজেপির নেই।” যুব কংগ্রেস কর্মীরা প্রদেশ বিজেপির সদর দফতর ঘেরাও করেন। পোড়ানো হয় বিজেপির পতাকা। সব মিলিয়ে শোচনীয় হাল উত্তর-পূর্বের বিজেপি নেতাদের। দলীয় ইস্তাহারে ভুলের ধাক্কায় তাঁরা বেসামাল। অসমের বিজেপি সভাপতি সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য দাবি করেন, ‘অভিবাসী’ এবং ‘ভিন্ রাজ্যের মানুষের’ মধ্যে যথেষ্ট ফারাক রয়েছে। অরুণাচলের নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু কাল বলেছিলেন ‘ক্ল্যারিক্যাল ভুল’। আর আজ তাঁর বক্তব্য, “উত্তর-পূর্বের মানুষ বিদেশি হলে, আমি কেন্দ্রে কী করে মন্ত্রী হলাম?” কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও ভুল স্বীকার করেন।

বিজেপির ইস্তাহারের এই ভুল শুধু রাজনীতির ময়দানে বিতর্ক ছড়িয়েছে তা নয়, উস্কে দিয়েছে বিচ্ছিন্নতাকামী ভাবনাও। আলফা সভাপতি অরবিন্দ রাজখোয়া আজ বলেন, “অপ্রিয় সত্যি বলে দেওয়ার জন্য বিজেপিকে ধন্যবাদ। আন্তরিকতাহীন এই সম্পর্কই অসম-ভারত দ্বন্দ্বের মূল কারণ।”

অন্য বিষয়গুলি:

bjp northeast manifesto Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE