হরিয়ানার নতুন মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিংহ সাইনি। ছবি: টুইটার থেকে নেওয়া।
হরিয়ানার নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন বিজেপি নেতা নায়েব সিংহ সাইনি। মঙ্গলবার বিকেলে চণ্ডীগড়ের রাজভবনে রাজ্যপাল বন্দারু দত্তাত্রেয় শপথবাক্য পাঠ করান তাঁকে। মঙ্গলবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন মনোহরলাল খট্টর। সাইনি তাঁর স্থলাভিষিক্ত হলেন।
সাইনির সঙ্গেই বিজেপির কানওয়ার পাল, মুলচাঁদ শর্মা, জয়প্রকাশ দালাল, বানোয়ারি লাল এবং নির্দল বিধায়ক রঞ্জিত চৌটালা মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। রঞ্জিত সম্পর্কে সদ্যপ্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্ত চৌটালার কাকা। লোকসভা ভোটে আসন সমঝোতা নিয়ে টানাপড়েনের জেরে মঙ্গলবারই দুষ্মন্তের দল জেজেপি (জননায়ক জনতা পার্টি)-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বিজেপি।
আরএসএসের স্বয়ংসেবক হিসাবে সঙ্ঘ পরিবারে যুক্ত হওয়া সাইনি বর্তমানে হরিয়ানা বিজেপির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। লোকসভা ভোটের আগে অস্থায়ী ভাবে অনিল ভিজকে সেই দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে জল্পনা রয়েছে। অন্য দিকে, সদ্যপ্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী খট্টরকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করা হবে বলে বিজেপির একটি সূত্র জানাচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে চণ্ডীগড়ে খট্টরের বৈঠকে ডাক পাননি দুষ্মন্ত। বিদায়ী উপমুখ্যমন্ত্রী দুষ্মন্তের দল জেজেপির অন্য মন্ত্রী, বিধায়করাও ছিলেন অনাহূত। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি এবং অন্য সহযোগী বিধায়কদের নিয়ে ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফার কথা ঘোষণা করেন খট্টর। তার পরে আর এক প্রবীণ বিজেপি নেতা অনিল ভিজকে নিয়ে রাজভবনে ইস্তফা দিতে যান।
অন্য দিকে, দুষ্মন্ত দিল্লিতে দলের পদাধিকারী এবং বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করে দিল্লিবাড়ির লড়াই ‘একলা চলো’র বার্তা দেন। জেজেপির তরফে জানানো হয়, আসন্ন লোকসভা ভোটে সে রাজ্যের ১০টি আসনেই একক ভাবে লড়বে তারা। যদিও জেজেপির বিধায়কদের মধ্যেই বিজেপি ভাঙন ধরাতে সফল হয়েছে বলে সূত্রের খবর। দিল্লিতে দুষ্মন্তের বাড়ির বৈঠকে হাজির ছিলেন মাত্র চার বিধায়ক। বাকিরা বিজেপির ‘আশ্রয়ে’ রয়েছেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
ভাঙনের সম্ভাবনা এড়াতে হরিয়ানার প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস মঙ্গলবার তাদের বিধায়কদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়েছে। সোমবার হরিয়ানা সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সে রাজ্যের উন্নয়নে মুখ্যমন্ত্রী খট্টরের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমরা দু’জনে এক সময় মোটরসাইকেলে হরিয়ানার গ্রামে গ্রামে ঘুরে সংগঠনের কাজ করেছি।’’
কিন্তু সেই মোদীর মঞ্চে ওঠার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইস্তফা দিতে হল খট্টরকে। চলতি বছরের শেষেই হরিয়ানায় বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন ন’বছরের মুখ্যমন্ত্রী খট্টরের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া রয়েছে হরিয়ানায়। লোকসভা ভোটের আগে তা এড়াতেই তাঁকে ইস্তফা দিতে বলা হয়েছে।
৯০ আসনের হরিয়ানা বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ৪৬। বিজেপির ৪১ জন বিধায়ক রয়েছে। এ ছাড়াও ছ’জন নির্দল এবং হরিয়ানা লোকহিত পার্টির (এইচএলপি)-র বিধায়ক গোপাল কান্ডার সমর্থন রয়েছে বিজেপির কাছে। বিরোধী শিবিরে কংগ্রেসের ৩০ এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদলের (আইএনএলডি) এক জন। জেজেপির ১০ জন বিধায়ক ‘কে কোথায়’ তা এখনও স্পষ্ট নয়।
২০১৯ সালে হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটের পরে জাঠ নেতা দুষ্মন্তের সঙ্গে জোট করে সরকার গড়েছিল বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছিলেন খট্টর। উপমুখ্যমন্ত্রী করা হয় দুষ্মন্তকে। তবে খট্টর এবং দুষ্মন্তের মধ্যে নানা বিষয় নিয়ে মতবিরোধ লেগেই ছিল। সম্প্রতি, লোকসভা ভোটে আসন ভাগাভাগি নিয়ে জেজেপি এবং বিজেপির মধ্যে বিবাদ বাধে। সূত্রের খবর, হিসার এবং ভিওয়ানি-মহেন্দ্রগড় লোকসভা তাঁর দলকে ছাড়ার জন্য দাবি জানিয়েছিলেন দুষ্মন্ত।
কিন্তু বিজেপি তাঁর সেই দাবি মানতে রাজি হয়নি। আসন রফা নিয়ে টানাপড়েনের আবহে কার্যত একতরফা ভাবে জেজেপির সঙ্গে জোটে ইতি টানল পদ্মশিবির। হরিয়ানার রাজনৈতিক ইতিহাস বলছে, ২০০০ সালের বিধানসভা ভোটের আগে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বংশীলালের দল হরিয়ানা বিকাশ পার্টির সঙ্গেও এমনই একতরফা ভাবে সমঝোতায় ইতি টেনে দিয়েছিল বিজেপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy