(বাঁ দিক থেকে ডান দিক) অশোক গহলৌত এবং সচিন পাইলট। — ফাইল চিত্র।
রাজস্থানে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটের আগে বিবদমান অশোক গহলৌত ও সচিন পাইলটের প্রকাশ্যে সন্ধির বার্তা দলের কাজ কঠিন করে দিল বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
মরু রাজ্যে গত ২৫ বছর ধরে কংগ্রেস বা বিজেপি পর পর দু’বার ক্ষমতা দখল করতে পারেনি। এ বারে সেই ধারা পাল্টাতে মরিয়া কংগ্রেস নেতৃত্ব। রাজস্থানে গত পাঁচ বছর ধরে গহলৌত এবং পাইলটের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে অস্বস্তিতে পড়েছে কংগ্রেস। ভোটের আগে তা মেটাতে সক্রিয় কংগ্রেস হাইকমান্ড। গত পরশু কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে পাইলটকে। আজ রাজস্থানের টঙ্ক এলাকায় জনসভা করেন তিনি। সেখানে পাইলটের ছবির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী গহলৌতের ছবিও ছিল। রাজ্যের দুই শীর্ষ নেতার মধ্যে বিবাদ যে আর নেই— সেই বার্তা দিতে কংগ্রেস নেতৃত্বের ওই উদ্যোগ। গহলৌতের সঙ্গে তাঁর বিবাদ যে অতীত তা বুঝিয়ে দিয়ে পাইলট সভায় বলেন, ‘‘রাজস্থানে ফের ক্ষমতায় আসতে চলেছে কংগ্রেস। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যখন রাজ্যে তাঁদের দলকে জাগানোর চেষ্টা করছেন, তখন রাজ্য নেতৃত্ব ঘুমিয়ে।’’
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মানছেন যে রাজস্থানে দল নানা গোষ্ঠীতে বিভক্ত। ভোটের আগে কোনও গোষ্ঠী যাতে নিষ্ক্রিয় হয়ে না যায়, তাই প্রধানমন্ত্রীকে প্রচারের ‘মুখ’ করে লড়ার কথা ভাবা হয়েছে। দলকে এক জোট করতে সেপ্টেম্বরের ২, ৩ ও ৪ তারিখে রাজ্যের চার প্রান্ত থেকে পরিবর্তন যাত্রা শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। যা শেষ হবে জয়পুরে ২৫ সেপ্টেম্বরে। ওই দিন সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপস্থিতিতে মেগা জনসভার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে দল। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ২ সেপ্টেম্বর সোয়াই মাধেপুর এলাকার ত্রিনেত্র গণেশ মন্দির থেকে যাত্রার সূচনা করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বাণেশ্বর ধাম থেকে দ্বিতীয় যাত্রার সূচনার দায়িত্বে বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডা। তৃতীয় যাত্রার সূচনা করবেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জয়সলমের সংলগ্ন রামদেওড়া থেকে। হনুমানগড়ের গোগামেডি থেকে চতুর্থ যাত্রাটিকে সবুজ সঙ্কেত দেখাবেন কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী।
পরিসংখ্যান বলছে, রাজস্থানে গত পাঁচ বছরে নারী নির্যাতন ঊর্ধ্বমুখী। এ নিয়ে গহলৌত প্রশাসনের উপরে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে মহিলাদের। এই আবহে বিজেপির একাংশের মতে, মহিলাদের ওই ক্ষোভকে বিজেপির পক্ষে টানতে উচিত ছিল বসুন্ধরা রাজেকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা। কারণ, বসুন্ধরা যে দু’বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন সেই সময়ে মহিলা নিগ্রহ অনেকটাই কমেছিল। কিন্তু সমস্যা হল তাঁকে পদপ্রার্থী করলে অন্য গোষ্ঠীর নেতারা অসন্তুষ্ট হতেন। তাই এ যাত্রায় বসুন্ধরাকে ভোটে ‘মুখ’ করতে ঝুঁকি নেয়নি বিজেপি।
রাজস্থানে জনজাতি ভোটব্যাঙ্কও চিন্তায় রেখেছে মোদী-শাহদের। রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশ লাগোয়া কোটা, ঝালওয়াড়, ভীলওয়াড়া, দুঙ্গারপুরের মতো জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ২৫টি আসন রয়েছে। ১০ বছর আগে ওই এলাকায় সব ক’টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। ২০১৮ সালে সংখ্যাটি নেমে আসে ১৫-তে। বিজেপিকে ওই এলাকায় পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টি। জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় ভাল ফল করতে আদতে গুজরাতের ওই দলকে পাশে নিয়ে এগোনোর পরিকল্পনা নিয়েছে বিজেপি। এ নিয়ে আলোচনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়ালকে।
ভোটে মেরুকরণের লক্ষ্যে গত বছর উদয়পুরে খুন হওয়া দর্জি কানহাইয়া লালের হত্যাকাণ্ডকে নতুন করে প্রচারে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এ ছাড়া ভিন ধর্মে বিয়ের ঘটনা নিয়েও ধারাবাহিক প্রচারে নামা হবে বলে ঠিক করেছে পদ্মশিবির। বিজেপি নেতৃত্বের মতে, রাজ্যের ওবিসি সমাজের বড় অংশ দলের সঙ্গে থাকলেও, তফসিলি জাতি ও মুসলিম সমাজ কংগ্রেসের সঙ্গেই রয়েছে। তবে গহলৌত সরকারের বিরুদ্ধে চাষিদের অসন্তোষ রয়েছে। তা আগামী দিনে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কী ভাবে কাজে লাগানো সম্ভব, সেই পরিকল্পনা তৈরিতে ব্যস্ত রয়েছে বিজেপি। তবে কর্নাটকের ধাঁচে এ রাজ্যেও আগামী দিনে একাধিক প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচারে নামার পরিকল্পনা নিয়েছে কংগ্রেস। যার মধ্যে থাকছে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, সরকারি বাসে বিনামূল্যে যাতায়াত, বেকার যুবকদের ভাতা, কৃষকদের ঋণ মকুবের মতো প্রতিশ্রুতি। এই জনমোহিনী রাজনীতির মোকাবিলা কী ভাবে করা হবে, মরিয়া হয়ে সেই দিশা খুঁজছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy