ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কৃষি আইন প্রত্যাহারের আচমকা ঘোষণায় বিভ্রান্ত দল। যে বিজেপি নেতা-কর্মীদের কাছে দলীয় নেতৃত্ব এত দিন কৃষি আইনের সুফল ব্যাখ্যা করে এসেছেন, তারাই এখন উল্টো পথে হাঁটার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। গত এক বছর যে কৃষি আইনের পক্ষে দিনরাত এক করে সরব ছিল দল, সেই বিজেপি গত কালের সিদ্ধান্তের পরে কৃষি আইনকে ব্রাত্য করে কৃষকদরদি প্রধানমন্ত্রীর ছবি তুলে ধরার কৌশল নিয়ে এগোনোর পরিকল্পনা করছে। বিজেপি শিবিরের জল্পনা, তৃণমূল স্তর থেকে দীর্ঘদিন ধরে ওই আইন বাতিল করার দাবি জানানো হচ্ছিল। কিন্তু শীর্ষ নেতৃত্বের একগুঁয়েমি তাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যার ফলেই সিদ্ধান্ত নিতে এই দীর্ঘসূত্রতা।
দু’পক্ষই মনে করছে, তিন কৃষি আইন শেষ পর্যন্ত প্রত্যাহার হল। কিন্তু অনেক দেরিতে। আন্দোলনরত কৃষকেরা বলছেন, অনেক আগেই এই সিদ্ধান্ত নিতে পারত সরকার। এখন ভোটের মুখে উত্তরপ্রদেশে পরাজয় নিশ্চিত বুঝেই পিছু হটতে বাধ্য হল মোদী সরকার। জয়ের স্বাদ পাওয়া কৃষক নেতারা এ বার তাই ফসলের ন্যূনতম দামের প্রশ্নে আইনি নিশ্চয়তা পাওয়ার আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। অন্য দিকে, বিজেপি নেতারাও ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করে নিচ্ছেন, ভোট ঘোষণার ঠিক আগে আইন প্রত্যাহার স্পষ্ট করে দিয়েছে উত্তরপ্রদেশে দল ভাল অবস্থায় নেই। যদি থাকত, তা হলে কোনও ভাবেই ওই আইন প্রত্যাহার করে নিত না সরকার। দলের এক নেতার কথায়, “কৃষকদের অনড় মনোভাব অনুধাবন করে অন্তত ছ’মাস আগে আইন তিনটি প্রত্যাহার করা উচিত ছিল। সে ক্ষেত্রে বুক বাজিয়ে দল কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিতে পারত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সরকার তথা দল যে দাবিই করুক, মানুষ বুঝতে পারছে, লখনউয়ের মসনদ রক্ষা করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে মোদী সরকার।
সূত্রের মতে, সঙ্ঘ পরিবার থেকে দলের নিচুতলার কর্মীরা দীর্ঘ সময় ধরে বার্তা দিয়ে আসছিলেন যে, কৃষক আন্দোলন ঘিরে সরকারের অসংবেদনশীল মনোভাব কৃষক সমাজের কাছে নেতিবাচক বার্তা দিয়ে চলেছে। যে কৃষকেরা ২০১৪-২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে দলের পাশে ছিলেন, তাঁদের সমর্থনে ধস নামতে শুরু করেছে। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করার প্রয়োজন বোধও করেননি শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু একের পর এক উপনির্বাচনে হার, উত্তরপ্রদেশে পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধীদের ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা, ক্রমশ স্পষ্ট করে দিয়েছে যোগী রাজ্যে জমি হারাচ্ছে বিজেপি। বিশেষ করে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের কৃষিনির্ভর জাঠ বলয়ে বিজেপির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়। পরিস্থিতি দেখে শেষ পর্যন্ত আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন নরেন্দ্র মোদী।
প্রশ্ন উঠেছে, এর পর? গত কাল কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণার পরে উত্তরপ্রদেশের মাহোবা এলাকার জনসভায় আইন বাতিল নিয়ে একটি শব্দও খরচ করেননি মোদী। বিরোধীদের মতে, যে ভাবে জনসমক্ষে নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন, তার পরে আর কী ভাবে এ নিয়ে মুখ খুলতে পারেন প্রধানমন্ত্রী! আগামী দিনে দলও প্রচারের ক্ষেত্রে এই প্রত্যাহারের বিষয়টিকে মোদীর কৃষকদরদি ও মানবদরদি চেহারা হিসাবে তুলে ধরার চেষ্ট চালাবে। দলের এক নেতার কথায়, “দেরিতে হলেও সরকার যে কৃষকদের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার সাহস দেখিয়েছে, সেই বিষয়টি মানুষকে বোঝাতে হবে।”
কিন্তু তাতে লাভ কতটা হবে তা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ে দল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy