গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত। —ফাইল চিত্র।
সারদা-রোজ ভ্যালির মতো চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি এক সময় পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বিজেপির প্রধান হাতিয়ার ছিল।
এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকারের মন্ত্রী গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াতের বিরুদ্ধে রাজস্থানে চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত শুরু হওয়ায় প্রবল অস্বস্তিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। কারণ সঞ্জীবনী ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামক অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত শেখাওয়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই সংস্থায় শুধু মাত্র রাজস্থান নয়, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের রাজ্য গুজরাতেরও হাজার হাজার মানুষ টাকা রেখে সর্বস্বান্ত হয়েছেন।
জয়পুরের উচ্চ দায়রা আদালত চলতি সপ্তাহেই সঞ্জীবনী ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি নামক অর্থলগ্নি সংস্থার ৮৮৪ কোটি টাকার কেলেঙ্কারিতে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী শেখাওয়াতের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কংগ্রেস তাঁকে বরখাস্তের দাবি তুলেছে। শেখাওয়াত পুরোটাই ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বিরোধীরা যে মোদী সরকারের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের ফায়দা তুলবে, তা-ও বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতারা। কেন্দ্রীয় সরকারের এক মন্ত্রী বলেন, ‘‘শেখাওয়াতকে সরাতে গেলে অভিযোগ মেনে নেওয়া হবে। রাজস্থানে বিজেপির দলীয় অভ্যন্তরীণ অঙ্কও গুলিয়ে যাবে। কারণ শেখাওয়াত রাজস্থান বিজেপিতে বসুন্ধরা রাজে-র বিপরীত মেরুর। তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী করে দলে ভারসাম্য রাখা হয়েছে। যাতে বসুন্ধরা একা ছড়ি ঘোরাতে না পারেন।’’
আরও পড়ুন: শিলান্যাসের আগের রাতেই ‘দীপোৎসব’ অযোধ্যায়
আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপতি ভবনে ধর্নার হুমকি গহলৌতের
ঠিক কী অভিযোগ শেখাওয়াতের বিরুদ্ধে? রাজস্থানে সঞ্জীবনী ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি তৈরি হয় ২০০৮-এ। ২০১৯-এর ৩০ জুন পর্যন্ত গুজরাত ও রাজস্থানের ২ লক্ষ ১৪ হাজারের বেশি মানুষ সংস্থায় ৮৮৩ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা জমা করেছিলেন। কিন্তু তার ক’দিন আগে, ১ জুন থেকেই সংস্থা লগ্নিকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া বন্ধ করে দেয়। সংস্থার সিএমডি বিক্রম সিংহ ও চার কর্তাকে পুলিশ আগেই গ্রেফতার করেছে। রাজস্থানে বিক্রমের সঙ্গে শেখাওয়াতের ঘনিষ্ঠতা সুবিদিত। আদালত এ বার শেখাওয়াত, তাঁর স্ত্রী নওনন্দ কানোয়ার ও তাঁদের দুই ঘনিষ্ঠের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
কংগ্রেস নেতা পবন খেরার অভিযোগ, সঞ্জীবনীতে সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের টাকা গজেন্দ্র সিংহ শেখাওয়াত ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের সংস্থার অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। সেই টাকায় কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি তৈরি হয়েছে বা বিলাসবহুল ইমারত তৈরি হয়েছে। প্রথমে সঞ্জীবনীর অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সংস্থার সিএমডি ও অন্য কর্তাদের অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়। তার পর তা শেখাওয়াত ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের সংস্থা নবপ্রভা বিল্ডটেক, সূর্যভূমি বিল্ডইনফ্রা, লুসিড ফার্মা-র মতো সংস্থায় পাঠানো হয়।
সারদা-রোজ ভ্যালির ক্ষেত্রে যেমন আমানতকারীদের টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ উঠেছিল, সঞ্জীবনীর ক্ষেত্রেও তেমন হয়েছে বলে অভিযোগ। সঞ্জীবনীর টাকায় নবপ্রভা একটি শাখা সংস্থার মাধ্যমে ইথিওপিয়ায় ২৫০০ হেক্টর জমি কিনে সেখানে কলার চাষ করছে। সারদা-রোজ ভ্যালিতে তৃণমূলের নেতানেত্রী ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগাযোগের ফলেই সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সঞ্জীবনীর ক্ষেত্রেও পুলিশের কাছে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা সংস্থার সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের যোগাযোগ দেখেই টাকা রেখেছিলেন।
কংগ্রেসের অভিযোগ, রাজস্থান পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে পারে টের পেয়েই শেখাওয়াতের নেতৃত্বে বিজেপি সেখানে কংগ্রেসের সরকার ফেলতে মরিয়া হয়ে ওঠে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের মন্তব্য, ‘‘প্রথমে বিধায়ক ভাঙানোর অডিয়ো টেপে গজেন্দ্র সিংহের নাম এসেছিল। এ বার নতুন মামলা। তার পরেও কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, তাঁকে বরখাস্ত করছে না, সেটাই চিন্তার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy