দেবগৌড়ার মেজো ছেলে এইচ ডি রেভান্না ও নাতি প্রাজ্জ্বল। নিজস্ব চিত্র
জ্যোতি বসুকে তাঁর দল প্রধানমন্ত্রী হওয়ার অনুমতি দিলে, এইচ ডি দেবগৌড়া কি কোনও দিন প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন?
মাইসুরু থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে হাসন জেলার হোলেনরসিপুরার ঝাঁ চকচকে গ্রাম হারদন্নাহাল্লিতে পা দিয়ে প্রশ্নটা মনে আসতে বাধ্য। কংক্রিটের রাস্তা, সব বাড়ির সামনে সৌর আলো। পাশে সহ্যাদ্রি পাহাড়ের মাথায় হাওয়া-কল। এই গ্রামেই জন্ম হারদন্নাহাল্লি দোদ্দেগৌড়া দেবগৌড়ার। হোলেনরসিপুরা থেকেই বিধায়ক। মুখ্যমন্ত্রী। তার পর ১৯৯৬-এ প্রধানমন্ত্রী এবং বছর পেরনোর আগেই গদিচ্যুত।
তাতে কী? দক্ষিণ কর্নাটকের মাইসুরু, পুরনো মাইসুরু অঞ্চলে এখনও ৮৫ বছরের দেবগৌড়ার দাপটে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খায়। দক্ষিণ কর্নাটকে দেবগৌড়ার নিজস্ব সম্প্রদায় ভোক্কালিগাদের সংখ্যা ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ। তাঁদের প্রায় সিংহ ভাগই চোখ বুজে জেডি(এস)-কে ভোট দেন। তার জোরেই দক্ষিণ কর্নাটকের ৬৭টি আসনের মধ্যে ৪০টি বগলদাবা করার স্বপ্ন দেখছে দেবগৌড়ার দল।
কিন্তু দেবগৌড়ার নিজের পরিবারেই তাঁর কথা চলছে না। তিনি ধর্মনিরপেক্ষ। প্রতিষ্ঠিত দলের নাম জনতা দল (সেকুলার)। কিন্তু ‘সাম্প্রদায়িক’ বিজেপি সংসর্গে আপত্তি নেই তাঁর সেজো ছেলে, দলের বর্তমান কান্ডারি এইচ ডি কুমারস্বামীর। বাবার আপত্তি উড়িয়ে আগেও বিজেপির সমর্থনে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন তিনি। এ বার ত্রিশঙ্কু বিধানসভা হলে জেডি(এস)-ই ‘কিং মেকার’ হতে পারে। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে দর কষাকষি করে কুমারস্বামী নিজেই ‘কিং’ হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি জানেন, জোট হলেও কংগ্রেসের সিদ্দারামাইয়া তাঁকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়বেন না। বরং কংগ্রেসকে
ঠেকাতে, নিজেদের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে বলি চড়াতে পারে বিজেপি।
দেবগৌড়া অবশ্য বলেছেন, বিজেপির হাত ধরলে ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করবেন। মেজো ছেলে, হোলেনরসিপুরার বর্তমান বিধায়ক এইচ ডি রেভান্না আবার বাবার দিকে। হোলেনরসিপুরার বাড়িতে বসে রেভান্না গল্প শোনালেন। কংগ্রেস সমর্থন প্রত্যাহারের পরে ১৯৯৭-তে যখন সরকারের পতন অনিবার্য, অটলবিহারী বাজপেয়ী সংসদে দেবগৌড়াকে নোট পাঠিয়েছিলেন— প্রধানমন্ত্রী থাকুন, বিজেপি সমর্থন দেবে। দেবগৌড়া ইস্তফা দিয়েছিলেন, তবু বিজেপির সমর্থন নেননি।
দু’দশক পরে সেই প্রশ্নেই ফাটল দেবগৌড়া-কূলে। বাপের আমলে এলাকায় যে প্রশ্নাতীত আনুগত্য ছিল, ছেলেদের আমলে তা নেই। হোলেনরসিপুরার স্কুল শিক্ষক জনার্দন গৌড়ার নালিশ, “দেবগৌড়া কোনও বৈষম্য করতেন না। ভোক্কালিগা নেতা হলেও ওবিসি কুরুবাদের গ্রামেও কাজ করাতেন। ছেলেদের আমলে শুধু ভোক্কালিগাদের গ্রামে রাস্তা পাকা হয়। কুরুবা-গ্রাম বাদ পড়ে।” চাপ বুঝেই এবার ভোক্কালিগাদের সঙ্গে দলিত ভোট টানতে মায়াবতীর সঙ্গে জোট হয়েছে। হারদন্নাহাল্লিতে বিরাট শিববন্দির তৈরি করাচ্ছেন রেভান্না। দেবগৌড়ার জন্মভিটে ভেঙে তৈরি হচ্ছে লাইব্রেরি।
২০১৯-এ দেবগৌড়ার হাসন কেন্দ্র থেকে লোকসভার ভোটে লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রেভান্নার ইঞ্জিনিয়ার-পুত্র প্রাজ্জ্বল। তিনি বলেন, “ঠাকুর্দার জনসভায় এখনও তিন-সাড়ে তিন লাখ লোক হয়। মোদী, ইয়েদুরাপ্পা, সিদ্দারামাইয়া— কারও সভায় তার সিকি ভাগও হয় না। তাই শেষ কথা বলবেন ঠাকুর্দাই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy