বিজেপি-র হাতে অস্ত্র তুলে দিল মণীশের বই? ফাইল চিত্র।
সলমন খুরশিদের পরে এ বার মণীশ তিওয়ারি। পঞ্জাবের এই কংগ্রেস সাংসদের বইকে কেন্দ্র করে এক প্রস্ত নতুন বিতর্কে দলীয় নেতৃত্ব। জি-২৩ তথা কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধ নেতাদের গোষ্ঠীর অন্যতম সদস্য মণীশ তাঁর বইয়ে দাবি করেছেন, ২৬/১১ মুম্বই হামলার পরে ভারতের উচিত ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ করা। মণীশের মতে, আবশ্যক হওয়া সত্ত্বেও যা করা হয়নি। উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের মুখে মণীশের এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে সরব হয়েছে বিজেপি। তাদের বক্তব্য, সে সময়ে কড়া জবাব না দিয়ে ভারতের সুরক্ষাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার।
উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে দলের নেতাদের বই প্রকাশ এবং তাতে বিজেপিকেই আখেরে সুবিধে করে দেওয়া দেখে এক কংগ্রেস নেতার আক্ষেপ, “দলে এখন ফাইটারের চেয়ে রাইটার বেশি হয়ে গিয়েছে।” দিন কয়েক আগে ‘সানরাইজ ওভার অযোধ্যা- নেশনহুড ইন আওয়ার টাইমস’-নামে একটি বই প্রকাশ করেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা সলমন খুরশিদ। তাতে তিনি বিজেপি-আরএসএসের হিন্দুত্বের সঙ্গে মুসলিম জঙ্গি সংগঠন আইএস ও বোকো হারামের তুলনা টেনে দলকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিলেন। পরে দফায় দফায় যার ব্যাখ্যা দিতে মাঠে নামতে হয় অন্য কংগ্রেস নেতাদের।
সেই ঘটনার রেশ মেটার আগেই বিতর্কের কেন্দ্রে মণীশের বই। বইয়ের নাম, ‘টেন ফ্ল্যাশ পয়েন্টস, ২০ ইয়ারস’। প্রচ্ছদে রয়েছে একটি ট্যাগলাইনও ‘ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি সিচুয়েশন দ্যাট ইমপ্যাক্টেড ইন্ডিয়া’। প্রকাশনা সংস্থা বইটির যে সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে, তাতে ২০০৮ সালের ২৬ নভেম্বর মুম্বইয়ে পাক জঙ্গিদের হামলার জবাবে তৎকালীন মনমোহন সিংহের সরকারের প্রতিক্রিয়ার সমালোচনা করেছেন মণীশ। তিনি লিখেছেন, ওই হামলার পরে ভারতের উচিত ছিল সামরিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পাকিস্তানকে জবাব দেওয়া। যা হয়নি। পাকিস্তানের প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য, শত শত নিরপরাধ মানুষকে হত্যার পরেও যে রাষ্ট্রের কোনও অনুশোচনা হয় না, এমন একটি দেশের কাছে সংযম কখনওই শক্তি হিসাবে বিবেচিত হয় না। বরং সেটাকে তারা দুর্বলতা গণ্য করে। মণীশের মতে, কখনও এমন সময় আসে, যখন কথার চেয়ে কাজে করে দেখানো প্রয়োজন হয়। ২৬/১১-র হামলার পরে, কথার চেয়ে কাজে করা বেশি জরুরি ছিল। মণীশ লিখেছেন, “তাই আমার মনে হয় ভারতের ৯/১১-এর পরে একটি সামরিক জবাব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল।”
কংগ্রেস তাঁর বদলে অধীর চৌধুরীকে লোকসভায় দলের নেতা নির্বাচিত করায় ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন মণীশ। অতীতে একাধিক বার তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে সেই ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। এখন প্রকাশ্যেই তিনি দলের বিক্ষুব্ধ নেতাদের এক জন। সামনেই উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন। তার আগে মণীশের লেখনিতে দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ব্যর্থতার কথা উঠে আসতেই, সেটাকে প্রচারের অস্ত্র হিসাবে লুফে নিয়েছে বিজেপি। দলের মুখপাত্র গৌরব ভাটিয়া আজ বলেন, ‘‘কংগ্রেস সাংসদের বই থেকেই স্পষ্ট, সে সময়ে কড়া হাতে পরিস্থিতির মোকবিলা না করে ভারতের নিরাপত্তাকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছিল কংগ্রেস-শাসিত মনমোহন সিংহ সরকার। কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী ও রাহুল গাঁধীর উচিত এ নিয়ে মুখ খোলা।”
সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশীর কথায়, ‘‘মণীশ যা বলেছেন তা সত্যি। ইউপিএ জমানায় সন্ত্রাস দমনে ভারতের জবাব ছিল খুবই দুর্বল প্রকৃতির।’’ বিজেপির আইটি শাখার প্রধান অমিত মালব্যের দাবি, ‘‘তৎকালীন বায়ুসেনা প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল ফালি মেজর জানিয়েছেন, ওই হামলার জবাব দিতে সব প্রস্তুতি সেরে ফেলেছিল বায়ুসেনা। কিন্তু ইউপিএ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।”
উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে মণীশ যে ভাবে বিজেপির হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছেন তাতে ক্ষুব্ধ কংগ্রেস নেতৃত্ব। বিজেপির অভিযোগের জবাব দেওয়ার পরিবর্তে আজ বরং মণীশকেই নিশানা করে অধীর বলেন, ‘‘এত দিনে কি হুঁশ ফিরল মণীশ তিওয়ারির? তখন কেন বলেননি এই কথা!”
যাঁর বিরুদ্ধে দলের এই অভিযোগ সেই মণীশের বক্তব্য, ‘‘আজ বিজেপি (মুম্বই হামলা নিয়ে) ৩০৪ নম্বর পাতাটি যে ভাবে কাটাছেঁড়া করেছে, সেই ভাবে মোদী সরকারের জাতীয় সুরক্ষা নীতির যে কঠোর সমালোচনা ওই বইয়ে আমি করেছি, তাকেও কি সমান গুরুত্ব দেবে তারা?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy