কৃষক বিক্ষোভের জেরে বিধ্বস্ত গাড়িটি দেখতে ভিড় করেছেন স্থানীয়েরা। লখিমপুর খেরির তিকুনিয়ায়। পিটিআই
গত কালের সংঘর্ষের ঘটনায় খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় কুমার মিশ্র ও তাঁর ছেলে আশিসের নাম জড়ানোয় রীতিমতো বেকায়দায় যোগী আদিত্যনাথ প্রশাসন তথা বিজেপি নেতৃত্ব। সদ্য মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া অজয়ের ইস্তফার দাবিতে বিরোধীরা অনড়। কিন্তু নিজের মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে এখনও নীরব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সূত্রের মতে, তদন্তে আশিসের ভূমিকা পাওয়া গেলে, পিতা অজয়ের পক্ষে মন্ত্রিত্ব বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়তে পারে। অন্তত লখনউ তাই চাইছে বলে সূত্রের খবর। সে ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে একমাত্র যে ব্রাহ্মণ মুখ ঠাঁই পেয়েছে, তাকে বাদ দিতে হতে পারে নরেন্দ্র মোদী, শাহকে। এতে ব্রাহ্মণ ভোট হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। ভোটের আগে কৃষকদের স্বার্থে ব্রাহ্মণদের চটানোর সাহস বিজেপি দেখাবে কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন রাজনীতির অনেকের কাছে।
প্রায় এক বছর ধরে চলা কৃষক আন্দোলনের কারণে গোড়া থেকেই প্রশ্নের মুখে মোদী সরকারের কৃষি নীতি। সেই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে একাধিক হত্যার ঘটনা এবং তাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও তাঁর ছেলের নামে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হওয়ার ঘটনা ভোটের আগে উদ্বেগ বাড়িয়েছে দলে। বিজেপির একাংশের আশঙ্কা, কৃষক আন্দোলনের প্রভাব এ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে। কিন্তু লখিমপুরের অপ্রীতিকর ঘটনার প্রভাব পড়তে চলেছে গোটা রাজ্যেই।
পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি আজ মৃত কৃষকের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ, সরকারি চাকরি দেওয়া ও দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে যোগী সরকার। রাজনীতির অনেকের মতে, উত্তরপ্রদেশে ৭৭% মানুষ গ্রামে থাকেন। যাঁদের অধিকাংশ কৃষি নির্ভরশীল। তাই কৃষকদের দিকে দায় ঠেললে হিতে বিপরীত হতে পারে। এই আশঙ্কা থেকে বিজেপি নেতাদের দাবি, পাকিস্তানের মদত পাওয়া খলিস্তানপন্থী সংগঠন বব্বর খালসার হাত রয়েছে গত কালের রক্তপাতের পিছনে। তারাই শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকে সংঘর্ষে পরিণত করার উস্কানি জুগিয়েছে। এই অভিযোগের সমর্থনে বিজেপির জাতীয় সচিব ওয়াই সত্যকুমার সংঘর্ষস্থলে উপস্থিত এক শিখ যুবকের ছবি টুইট করেছেন। তাতে দেখা যাচ্ছে, ওই যুবকের পরনে অপারেশন ব্লু স্টারে নিহত খলিস্তানি নেতা ভিন্দ্রেনওয়ালের ছবি আঁকা টি-শার্ট। টুইটে সত্যকুমারের কটাক্ষ, ভিন্দ্রেনওয়ালা তো কৃষক ছিলেন না! তাঁর অভিযোগ, উত্তরপ্রদেশে গুন্ডারা যে ভাবে কৃষক সেজে হিংসাত্মক আন্দোলন করছে, তার পিছনে জেহাদি ও খালিস্তানপন্থীদের সুনির্দিষ্ট হাত রয়েছে। তারা অশান্তি বাঁধাতে চাইছে।
অভিযুক্ত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীরও দাবি, গত কালের ঘটনার পিছনে খলিস্তানপন্থী বব্বর খালসার হাত রয়েছে। গোটা ঘটনায় তাঁর ও ছেলে আশিসের যুক্ত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অজয়। আশিসের নামে গাড়ি চালিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠলেও গোড়া থেকেই তাঁর দাবি, তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আশিস সেখানে থাকলে ভিড় পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করত।’’
উত্তেজনা প্রশমনে কৃষকদের দাবি প্রশাসন মানলেও, বিজেপির আশঙ্কা, লখিমপুরের ক্ষত যাতে বিধানসভা ভোট পর্যন্ত দগদগে থাকে, বিরোধীরা সে জন্য দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনে নামবে। ফলে আগামী দিনে লখিমপুর যোগীকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে ফেলতে পারে। ২০১৭-য় মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে পুলিশের গুলিতে বিক্ষোভকারী কৃষকদের মৃত্যুর ঘটনা তাড়া করে বেড়িয়েছিল শিবরাজ সিংহ চৌহানকে। এর জেরে ২০১৮-য় মধ্যপ্রদেশে পরাস্ত হয় বিজেপি। লখিমপুরে কাণ্ডের জেরে এ বার কি যোগীর পালা? প্রশ্নটা উঠেছে বিজেপির অন্দরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy