Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Isro Satellite Xposat

ইসরোর ‘কবিতা’, অন্যতম রূপকার বঙ্গসন্তান বিশ্বজিৎ

কৃষ্ণগহ্বরের অন্ধকারে উঁকি দিতে সোমবার মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিশেষ কৃত্রিম উপগ্রহ তথা মহাকাশ পর্যবেক্ষণাগার ‘এক্সপোস্যাট’।

An image of Biswajit Pal

বিশ্বজিৎ পাল। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২৪ ০৯:০৫
Share: Save:

নতুন বছরের প্রথম দিনে ‘কবিতা’ উপহার দিল ইসরো।

কৃষ্ণগহ্বরের অন্ধকারে উঁকি দিতে সোমবার মহাকাশের উদ্দেশে পাড়ি দিল ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিশেষ কৃত্রিম উপগ্রহ তথা মহাকাশ পর্যবেক্ষণাগার ‘এক্সপোস্যাট’। এ দিন ৯টা ১০ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধওয়ন উৎক্ষেপণ কেন্দ্র থেকে তাকে নিয়ে মহাকাশ পাড়ি দেয় পিএসএলভি-সি৫৮ রকেট। ৯টা ৩২-এই ইসরো ঘোষণা করে, ৬৫০ কিলোমিটার দূরত্বে ৬ ডিগ্রি হেলে থাকা নির্দিষ্ট কক্ষপথে পৌঁছে গিয়েছে এক্সপোস্যাট। এক্স হ্যান্ডলে ইসরো লেখে, ‘দ্য পোয়েম-৩ ইজ় বিয়িং স্ক্রিপ্টেড’। পোয়েম, অর্থাৎ ‘পিএসএলভি অরবিটাল এক্সপেরিমেন্টাল মডিউল’। উল্লেখ্য, ইসরোর এক্সপোস্যাট অভিযানের অন্যতম কান্ডারি এক বাঙালি বিজ্ঞানী, বেঙ্গালুরুর ‘রামন রিসার্চ ইনস্টিটিউট’-এর জ্যোতির্বিজ্ঞানী বিশ্বজিৎ পাল।

আগামী পাঁচ বছর এক্সপোস্যাট অভিযান চলবে। এক্সপোস্যাটে রয়েছে দু’টি পেলোড— পোলিক্স (পোলারিমিটার ইনস্ট্রুমেন্ট ইন এক্স-রেজ়) এবং এক্সস্পেক্ট (এক্স-রে স্পেকট্রোস্কোপি অ্যান্ড টাইমিং)। পোলিক্স তৈরির পরিকল্পনা, পেলোডটির নকশা, সবটাই বিশ্বজিতের মস্তিষ্কপ্রসূত। বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, কসমিক এক্স-রে’র পোলারাইজ়েশন (তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরণের তরঙ্গের ন্যায় প্রকৃতির জন্য যে ঘটনা ঘটে, তা হল পোলারাইজ়েশন) নিয়ে খুবই কম গবেষণা হয়েছে। ২০২১ সালে নাসা ‘ইমেজিং এক্স-রে পোলারিমেট্রি এক্সপ্লোরার’ (আইএক্সপিই) উৎক্ষেপণ করেছে। তার পরেই এটিই দ্বিতীয় অভিযান।

বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘মহাকাশে যে এ ধরনের পেলোড পাঠানো যেতে পারে, ২০০৬ সালে প্রথম সেই প্রস্তাব দিয়েছিলাম। অনুমোদন মেলে ২০১৬ সালে। মাঝের সময়ে প্রোটোটাইপ মডেল তৈরি করা হয়েছিল। পরীক্ষাগারে দেখানো হয়েছিল, বিষয়টা বাস্তবায়িত করা সম্ভব। ২০১৭-’১৮ থেকে মূল কাজ শুরু হয়ে যায়। লক্ষ্য ছিল ২০২১ সালের মধ্যে অভিযান সম্পন্ন করা। কিন্তু কোভিডের জন্য তা পিছিয়ে যায়।’’

উত্তরবঙ্গের ইসলামপুরে বড় হওয়া বিশ্বজিতের। রায়গঞ্জ কলেজ থেকে স্নাতক। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতকোত্তরের পরে ‘টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ’ বা টিআইএফআর থেকে পিএইচডি করেন। তার পরেই রামন রিসার্চ ইনস্টিটিউটে যোগ দেন তিনি। বিশ্বজিৎ জানান, শুধু দৃশ্যমান আলোয় সব কিছু দেখা যায় না। বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো প্রয়োজন। তিনি জানিয়েছেন, এক্সপোস্যাটে থাকা পোলিক্স পেলোডটি এক্স-রে ও তার পোলারাইজ়েশন ব্যবহার করে নিকটবর্তী কৃষ্ণগহ্বর (ব্ল্যাক হোল) ও নিউট্রন স্টার থেকে ধেয়ে আসা বিকিরণ খুঁজে বার করবে ও গবেষণা চালাবে। উল্লেখ্য, প্রকাণ্ড দৈত্যাকার কোনও নক্ষত্রের জ্বালানি যখন ফুরিয়ে যায়, মরে যায় তারাটি, নিজের মাধ্যাকর্ষণের টানে তারাটি ধ্বংস হয়ে যায়, তখন পড়ে থাকে নিউট্রন স্টার বা তৈরি হয় কৃষ্ণগহ্বর। ব্রহ্মাণ্ডে কৃষ্ণগহ্বরের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে বেশি। নিউট্রন স্টারের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। ইসরো জানিয়েছে, এই অভিযানে মহাকাশের অতি-চরমভাবাপন্ন পরিবেশ (আল্ট্রা এক্সট্রিম এনভায়রনমেন্ট) সম্পর্কে জানা যাবে।

এক্সপোস্যাটের দ্বিতীয় পেলোড অর্থাৎ এক্সস্পেক্ট তৈরি করেছে ‘ইউ আর রাও স্যাটেলাইট সেন্টার’। স্পেকট্রোস্কোপিক পদ্ধতির মাধ্যমে কসমস থেকে ধেয়ে আসা এক্স-রের বিশ্লেষণ করবে এই পেলোড। ইসরো জানিয়েছে, এক্সপোস্যাট অভিযানের লক্ষ্য হল ৫০টি সম্ভাব্য কসমিক উৎস থেকে ছড়িয়ে পড়া ৮-৩০ কিলোইলেকট্রনভোল্ট এনার্জি
ব্যান্ডের এক্স-রে পোলারাইজ়েশন পরিমাপ করা।

উৎক্ষেপণ সফল হওয়ার পরেই মিশন কন্ট্রোল রুম থেকে ইসরোর চেয়ারম্যান এস সোমনাথ বলেন, ‘‘সকলকে শুভ নববর্ষ। ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি আরও এক বার সফল হল পিএসএলভি।’’ পিএসএলভি-র এটি ৬০তম উৎক্ষেপণ। অভিযানের ডিরেক্টর জয়কুমার এম বলেন, ‘‘দারুণ সাফল্য।’’ ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ‘পোয়েম-২’ পরীক্ষা চালিয়েছিল ইসরো। ‘পিএসএলভি অরবিটাল এক্সপেরিমেন্টাল মডিউল-৩’ সংক্ষেপে ‘পোয়েম-৩’-এ নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। জয়কুমার বলেন, ‘‘এ বারে সিলিকন-বেসড হাই এনার্জি ব্যাটারি, জ্বালানি সেল ব্যবহার করা হয়েছে।’’ এই ‘পোয়েম’-এর সাহায্যেই পরে বিজ্ঞানীরা কক্ষপথের উচ্চতা ৬৫০ কিলোমিটার থেকে কমিয়ে ৩৫০ কিলোমিটারে নিয়ে আসবে।

এই অভিযানে মহিলা বিজ্ঞানীদের ভূমিকা নিয়েও উচ্ছ্বসিত জয়কুমার। তিনি জানিয়েছেন, কৃত্রিম উপগ্রহটির নকশা তৈরি করেছে কেরলের তিরুঅনন্তপুরমের ‘এলবিএস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ফর উইমেন’। আরও একটি বিষয়ে যথারীতি বাজিমাত করেছে ইসরো। ২০২১ সালে নাসার আইএক্সপিই অভিযানে ১৮ কোটি ৮০ লক্ষ ডলার খরচ হয়েছিল। এক্সপোস্যাট অভিযানে ইসরো ব্যয় করেছে ৩ কোটি ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ২৫০ কোটি টাকা। ইসরোর প্রাক্তন চেয়ারম্যান জি মাধবন জানিয়েছেন, বিশ্বাসযোগ্যতা ও কম খরচ, দুই ক্ষেত্রেই গোটা বিশ্বে সবচেয়ে এগিয়ে পিএসএলভি
রকেট সিস্টেম।

অন্য বিষয়গুলি:

ISRO Bengali scientist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE