Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
সীমান্ত রক্ষায় সেনাকে পূর্ণ স্বাধীনতা

গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে তোপ দাগলেন বিলাবল

অস্থির সীমান্ত ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত রাজ্যে রাজ্যে ভোট প্রচারে, গত কাল থেকেই এমন অভিযোগ করে আসছে শিব সেনা। এ বার সেই সমালোচনার জবাব দিল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যে রকমটা দাবি করছে, ঠিক সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে।

পড়শি দেশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছে বাড়ি। বুধবার জম্মুর সাম্বা জেলায়। ছবি: পিটিআই।

পড়শি দেশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়েছে বাড়ি। বুধবার জম্মুর সাম্বা জেলায়। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৬
Share: Save:

অস্থির সীমান্ত ছেড়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যস্ত রাজ্যে রাজ্যে ভোট প্রচারে, গত কাল থেকেই এমন অভিযোগ করে আসছে শিব সেনা। এ বার সেই সমালোচনার জবাব দিল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যে রকমটা দাবি করছে, ঠিক সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেনা ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে। সরাসরি এ নিয়ে মুখ না খুললেও আজ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

কংগ্রেস তরফে কালই শাকিল আহমেদ সমালোচনা করেছিলেন মোদীর। আর আজ নিজেদের মুখপত্রে প্রধানমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করে শিব সেনা লিখেছে, “আমরা কি পাকিস্তানকে কড়া জবাব দিতে চলেছি, নাকি শুধু সেনাদের মৃতদেহই গুনব? মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে মাথা না ঘামিয়ে এখন সীমান্তে যা চলছে, তাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত।”

তবে শুধু ঘরেই নয়, সমালোচনার তির এসেছে পড়শি দেশ থেকেও। গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলে আজ মোদীকে এক হাত নিয়েছেন প্রয়াত পাক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোর পুত্র বিলাবল ভুট্টো।

এর মধ্যে আজও সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে ফের গোলাগুলি চলল সীমান্তে। আর তার জেরে মৃত্যু হয়েছে আরও দুই ভারতীয়ের। সেনা সূত্রে খবর, আজ সকাল সাতটা নাগাদ পাক সীমান্ত লাগোয়া জম্মুর জেলার সাম্বার চিলারি গ্রামে মর্টার হামলা শুরু করে পাক রেঞ্জার্স বাহিনী। সেই হামলায় মারা গিয়েছেন শকুন্তলা দেবী নামে এক গৃহবধূ ও তাঁর ছেলের বউ পলি দেবী। আহত শকুন্তলা দেবীর স্বামী, ছেলে ও দুই নাতি।

ভারতীয় সেনা সূত্রে খবর, কাল রাত থেকে মোট ৫০টি বর্ডার আউট পোস্ট ও ৩৫টি সীমান্ত লাগোয়া গ্রামে মোট ১৯২ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মর্টার হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের রেঞ্জার্স বাহিনী। আজকের ঘটনায় আহতের সংখ্যা ১৫। যাঁদের মধ্যে বিএসএফের তিন জন জওয়ান রয়েছেন। আহতদের প্রত্যেককেই স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। গত এক সপ্তাহ ধরে সীমান্তে চলা সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘনের জেরে এখনও পর্যন্ত মোট আট জন ভারতীয়ের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। আহতের সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়েছে। প্রায় ১৬ হাজার মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি ত্রাণ শিবিরে। তবে শুধু সকালেই নয়, আজ গভীর রাত পর্যন্ত জম্মু জেলার কানাচক আর পারগোয়াল সাব সেক্টরে পাক রেঞ্জার্স বাহিনী হামলা চালিয়েছে বলে ভারতীয় সেনার তরফে জানানো হয়েছে। তবে ভারতীয় সেনাও পাল্টা গুলি চালিয়ে পাক হামলার জবাব দিচ্ছে।

আজ সকালেই নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর জম্মু-কাশ্মীরের গ্রামগুলি ঘুরে দেখেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। সেনার উচ্চপদস্থ অফিসারদের সঙ্গে এক প্রস্ত আলোচনাও করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, হামলাকারী রেঞ্জার্স বাহিনীর পিছনে সরাসরি হাত রয়েছে পাক সেনার। তাঁর বক্তব্য, সেনার প্রত্যক্ষ মদত ছাড়া এত সংগঠিত হামলা চালানোর ক্ষমতা রেঞ্জার্স বাহিনীর হবে না। তবে এর বেশি কোনও কথা তিনি বলতে চাননি। শুধু বলেছেন, “এটা ভারী ভারী রাজনৈতিক মন্তব্য করার সময় নয়।”

তবে যাঁর নীরবতা নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সরব হয়েছে, আজ স্বয়ং মুখ খুলেছেন তিনি। আজ রাজধানীতে বায়ুসেনার একটি অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে খুব সংক্ষেপে মোদী বলেছেন, “খুব তাড়াতাড়ি সব ঠিক হয়ে যাবে।” তবে সীমান্তের পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী পুরোপুরি ওয়াকিবহাল বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র জানিয়েছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে আজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল এবং সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগের।

এর মধ্যেই সরকারের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ইসলামাবাদের সঙ্গে আলোচনার রাস্তা নয়াদিল্লি তখনই খুলবে যখন কোনও তৃতীয় পক্ষ সেখানে থাকবে না। কালই রাষ্ট্রপুঞ্জের সামরিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর শরণাপন্ন হয়েছিল পাকিস্তান। রাষ্ট্রপুঞ্জকে তৃতীয় পক্ষ আখ্যা দিয়ে মূলত আজ তারই জবাব দিয়েছে ভারত। রাষ্ট্রপুঞ্জে আজ বেশ কড়া ভাবেই তারা জানিয়েছে, বিনা প্ররোচনায় পাকিস্তানের তরফ থেকে যে ভাবে হামলা হয়েছে, তার যথার্থ জবাব দিতে প্রস্তুত ভারতও।

এই অবস্থায় আজ সুর চড়িয়েছে পাকিস্তানও। বেনজির-পুত্র বিলাবল ভুট্টো আজ কার্যত তোপ দেগেছেন মোদীর বিরুদ্ধে। গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ টেনে আজ বিলাবল জানিয়েছেন, পাকিস্তান প্রত্যুত্তর দিতে জানে। তাদের অবস্থা গুজরাত দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের মতো একেবারেই নয়। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে আজ ২৬ বছরের এই তরুণ লিখেছেন, “নিয়ন্ত্রণরেখায় আবার হামলা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত ইজরায়েল মডেল নিচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে। মোদীর বোঝা উচিত গুজরাত দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের মতো আমাদের অবস্থা নয়। হামলার পাল্টা জবাব আমরা দিতে জানি।” সপ্তাহ দু’য়েক আগে গোটা কাশ্মীরকে তাঁর দল পিপিপি নিজেদের দখলে নেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন বিলাবল। আজ আবার তোপ দাগলেন মোদীর বিরুদ্ধে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কানে কি সেই বার্তা পৌঁছল? তার উত্তর অবশ্য জানা যায়নি। তবে দু’দেশের এই টানাপড়েন দ্রত শেষ হোক, এমনটাই চাইছেন সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। আর্নিয়া সেক্টরের এক সরকারি স্কুলে ঠাঁই হওয়া গিরধারি লাল যেমন বললেন, “নিজের ভিটে, নিজের বাড়ি থাকতেও সরকারি ত্রাণ শিবিরে থাকতে কার ভাল লাগে বলুন তো? আমরা তিতিবরক্ত। শুধু চাই ভারতীয় সরকার যত দ্রুত সম্ভব সমস্যার সমাধান করুক।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy