বিহারে দ্বিতীয় দফা ভোটের আগে এক জনসভায় নীতীশ কুমার ও নরেন্দ্র মোদী। রবিবার সমস্তিপুরে। পিটিআই
উন্নয়ন, আর্থিক সঙ্কট, বেকারি, মূল্যবৃদ্ধি, ক্ষুধা, কৃষক-সমস্যা, পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্কট....। এ সবের কোনওটা নিয়েই কথা নয়। লোকসভা থেকে বিধানসভা, যে কোনও ভোটে জিততে নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপি নেতাদের অস্ত্র সেই জাতীয়তাবাদ, রামমন্দির এবং পাকিস্তানই। দিন কয়েক আগে পাক সংসদে ইমরান খান সরকারের এক মন্ত্রী পুলওয়ামা-কাণ্ডে পাকিস্তান সরকারের ভূমিকা ছিল বলে দাবি করার পর থেকে বিহার ভোটে তেজস্বী-ঝড় নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজেপি নেতাদের মুখে হাসি ফুটেছে।
ভোটের আগে পাকিস্তানের থেকে পাওয়া এমন ‘উপহার’ হাতছাড়া করতে নারাজ তাঁরা। শনিবার গুজরাত থেকে পুলওয়ামা-অস্ত্র প্রয়োগ করে সেটা বুঝিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই। রবিবার বিহারে প্রচারে গিয়েও পুলওয়ামা-অস্ত্রেই শাণ দিলেন তিনি। বিজেপির অন্দরমহলের ইঙ্গিত, বাংলার বিধানসভা ভোটেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পুলওয়ামা-অস্ত্রকেই কাজে লাগাতে চায় তারা।
গত বছর লোকসভা ভোটের আগে পুলওয়ামায় জঙ্গি-হামলায় ৪০ জন সিআরপি জওয়ান নিহত হওয়ার পর রাহুল গাঁধী-সহ বিরোধী নেতানেত্রীরা জওয়ানদের নিরাপত্তায় গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। পাক মন্ত্রীর মন্তব্যের পরেই শনিবার গুজরাতে গিয়ে সর্দার বল্লভভাই পটেলের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পুলওয়ামায় বিরোধীদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। একই হাতিয়ারে রবিবার বিহারে রাহুল গাঁধীর দিকে ইঙ্গিত করে মোদী বলেন, ‘‘যারা রাজনৈতিক স্বার্থে দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল, বীর জওয়ানদের বলিদানে ফায়দা খুঁজছিল, ক্ষমতা-স্বার্থের জন্য বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছিল, সেই একই লোকেরা এ বার বিহারে এসে মানুষের কাছে ভোট চাইছেন।’’
বিজেপি নেতারা বলছেন, রাহুলের মতোই মমতাও পুলওয়ামা-কাণ্ডের পরে জওয়ানদের নিরাপত্তার গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। বিরোধীদের ইঙ্গিত ছিল, লোকসভা ভোটের আগে সরকারই জঙ্গি-হামলা করিয়ে তার জবাবে বালাকোটে বায়ুসেনার হানার কথা বলে রাজনৈতিক ফায়দা তুলেছে।
বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, পাক সংসদে ইমরানের মন্ত্রী মেনে নিয়েছেন, পুলওয়ামার ঘটনায় তাদের হাত ছিল। এ বার মমতা কী বলবেন? বাংলায় মমতাকে এই প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে। সে কথা সোজাসুজিই জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য।
উল্টো দিকে তৃণমূল নেতৃত্বের যুক্তি, মমতা পুলওয়ামায় জওয়ানদের নিরাপত্তার ফাঁকফোকর নিয়ে প্রশ্ন তুলে তদন্ত চেয়েছিলেন। মমতা তখন বলেছিলেন, মোদী-অমিত শাহ পুলওয়ামা হামলার দায় না-নিয়ে রাজনীতি করছেন। মমতার প্রশ্ন ছিল, ‘এত জন জওয়ানকে মেরে দেওয়া হয়েছে, তার পিছনে দুর্বলতা, গাফিলতি, অবহেলা রয়েছে। কেন আড়াই হাজার জওয়ানকে ৭৮টা কনভয়ে এক সঙ্গে যেতে দেওয়া হল? যখন সরকারের কাছে খবর ছিল হামলা হতে পারে! কেন বিমানে বা রেলে নিয়ে যাওয়া হল না?’
কংগ্রেস, তৃণমূলের নেতৃত্বের যুক্তি, পুলওয়ামায় নিরাপত্তায় গাফিলতির প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। মোদী আসলে বিহার নির্বাচনে এ সব বলে বেকারি, পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্কটের মতো রাজ্যের মূল সমস্যাগুলি থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করেছেন। শুধু পুলওয়ামা নয়, সারা দিনে চারটি জনসভায় রামমন্দিরের প্রসঙ্গও টেনেছেন মোদী। ছপরায় পুলওয়ামা-অস্ত্রের পরে চম্পারণে তিনি বলেন, ‘‘রামমন্দিরের কাজ শুরুর পরে এই প্রথম চম্পারণে এসেছি। দীর্ঘ সময়ের তপ-তপস্যার পরে এই সুযোগ এসেছে। কিন্তু যারা রামের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, তাদের ভুলবেন না।’’
এ সবের ফাঁকে বিহারি আবেগও উস্কে দিয়েছেন মোদী। আসন্ন ছট পুজোর প্রসঙ্গ টেনে মহিলাদের মন জিততে বলেন, ‘‘ছট পুজোয় রান্নাঘরে উনুন জ্বলবে কি না, তা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। মা, আপনাদের ছেলে দিল্লিতে রয়েছে। সে সব কিছু খেয়াল রাখবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy