সে দিন তাঁরা পাশাপাশি, চিরাগ পাসোয়ান এবং নীতীশ কুমার— ফাইল চিত্র।
কড়া সুরেই প্রতিক্রিয়া জানালেন বিহার জেডি(ইউ)-র কার্যকরী সভাপতি অশোক চৌধুরী— ‘‘ওঁর বাবা মৌসম বিজ্ঞানী। উনি নন। ভোটের ময়দানে নামলেই বুঝতে পারবেন, কে কোন জায়গায়।’’
রবিবার রাত। দিল্লিতে লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) সভাপতি চিরাগ পাসোয়ানের নেতৃত্বে দলের সংসদীয় বোর্ড সর্বভারতীয় স্তরে এনডিএ জোটে থেকেই বিহার বিধানসভার ভোটে আলাদা লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে খবর পটনায় পৌঁছতেই জেডি(ইউ)-র ‘দলিত মুখ’ অশোকের এমন মন্তব্য। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা এলজেপির প্রতিষ্ঠাতা রামবিলাস পাসোয়ান দিল্লিতে চিকিৎসাধীন। তাঁর অনুপস্থিতিতে ছেলে চিরাগের এই সিদ্ধান্ত যে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের দলকে বিপাকে ফেলেছে বলে বিহারের রাজনীতির কারবারিদের জল্পনা। আর সেই সঙ্গেই উঠে আসছে নয়া ‘সমীকরণের’ তত্ত্ব।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আলাদা লড়লেও বিজেপির বিরুদ্ধে প্রার্থী না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এলজেপি। চিরাগের কথায়, ‘‘নীতীশ কুমারের নেতৃত্ব আমরা মানি না। তাই জেডি(ইউ)-র বিরুদ্ধে লড়ব। ভোটের পর বিজেপি সরকার গড়ার জায়গায় এলে সমর্থন জানাব। আমাদের দল এনডিএতেই রয়েছে এবং থাকবে। সর্বভারতীয় স্তরে মোদীজিই (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) আমাদের নেতা।’’ আর সেখানেই আপত্তি নীতীশের দলের। জেডি(ইউ) নেতা আসলাম আজাদ সোমবার বলেন, ‘‘দু’নৌকায় পা দিয়ে রাজনীতি চলতে পারে না। এলজেপিকে অবিলম্বে এনডিএ জোট থেকে বহিষ্কার করতে হবে।’’ অন্যদিকে এ দিন চিরাগের মন্তব্য, ‘‘বিজেপি এবং এলজেপি মিলেই বিহারে পরবর্তী সরকার গড়বে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বিজেপি নেতৃত্ব এলজেপির বিরুদ্ধে এখনও কোনও কথা বলেনি। বিহারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপি সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র যাদব শুধু বলেন, ‘‘এলজেপির সিদ্ধান্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমরা চেয়েছিলাম, সকলে মিলে এক সঙ্গে লড়তে।’’ নীতীশের অনড় মনোভাবের কারণেই যে রামবিলাসের দলকে ২৯টির বেশি আসন ছাড়া যায়নি, সে কথা রাজ্য বিজেপির অনেকেই আড়ালে বলতে শুরু করেছেন। আর সেই সঙ্গেই সামনে আনছেন ২০০৫ সালের উদাহরণ। রামবিলাসের ‘সৌজন্যে’ সে বার দেড় দশকের লালু-রাজের পতন হয়েছিল বিহারে।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে সে বারও ইউপিএ জোটের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস বিহার বিধানসভায় আলাদা ভাবে লড়েছিলেন। ২০০৫ সালে বিহারের দু’বার বিধানসভা ভোট হয়েছিল। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এলজেপির সহযোগী ছিল কংগ্রেস। মনমোহন সিংহ সরকারের রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদের দল আরজেডির বিরুদ্ধে বিহারের ভোটে প্রচার করেছিলেন ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী!
আরও পড়ুন: বিহারে আরজেডি-কংগ্রেসের জোটে বামেরাও, মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী তেজস্বী
সেই ভোটে ১৭৮টি আসনে লড়ে ২৯টিতে জিতেছিলেন পাসোয়ান। কংগ্রেস ১০ এবং আরজেডি ৭৫টি আসনে জিতেছিল। কিন্তু ভোটের পরেও তিন দল এক হয়ে ত্রিশঙ্কু বিধানসভায় সরকার গড়তে পারেনি। ফলে সে বছরই অক্টোবরে নতুন নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে পাসোয়ানকে ছেড়ে লালুর সহযোগী হয় কংগ্রেস। কিন্তু তাতে ফল হয়নি। এলজেপি ২০৩-টি আসনে লড়ে মাত্র ১০টিতে জিতলেও ১১ শতাংশেরও বেশি ভোট কেটে জেডি(ইউ)-বিজেপি জোটের জয়ের পথ প্রশস্ত করে দেয়।
আরও পড়ুন: রামবিলাসকে দূরে রেখেই নীতীশের সঙ্গে সমঝোতা বিজেপির
চিরাগের এ বারের পদক্ষেপে ইতিমধ্যেই তাই সিঁদুরে মেঘ দেখছে জেডি(ইউ)-র একাংশ। সেই সঙ্গে, ঘটনার নেপথ্যে বিজেপির মদত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠছে। তাদের ব্যাখ্যা, বিহারের বিধানসভা ভোটে বিজেপি বরাবর জোটের ‘ছোট শরিক’ হয়েই থেকেছে। এ বার পরিস্থিতি বুঝে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা এলজেপি’কে ব্যবহার করে ‘বড় শরিক’ হয়ে উঠতে চাইছেন। এনডিএ জোটের সমঝোতা অনুযায়ী দু’দলই প্রায় সমসংখ্যক আসনে লড়তে চলেছে। চিরাগরা যে কৌশল নিয়েছেন, তাতে নিশ্চিত ভাবেই সুবিধা হবে বিজেপির। আর নয়া বিধানসভায় আসন সংখ্যার হিসেবে পিছিয়ে পড়লে নীতীশের দর কষাকষির সুযোগও কমে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy