প্রতীকী ছবি
কোভিড সংক্রমণের পরে সংক্রমিত রোগীদের শরীরে ছত্রাক সংক্রমণের মতো সেকেন্ডারি ইনফেকশন রোখাই যে এখন অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ তা উঠে এলে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর গবেষণায়। দেখা যাচ্ছে, কোভিডের পরে যে রোগীরা মিউকরমাইকোসিসের মতো ছত্রাক সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন, তাতেই তাঁদের ৫৬.৭ শতাংশের মৃ্ত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, করোনা রোগীদের চিকিৎসার সময়ে যথেচ্ছ ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ব্যবহার তাঁদের শরীরে ‘ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স’ বা ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু তৈরি করছে। যা পরবর্তী সময়ে সেকেন্ডারি ইনফেকশনের জন্য দায়ী।
কোভিডে আক্রান্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগী, মূলত যাঁদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হচ্ছে, কিংবা স্টেরয়েডের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হচ্ছে, তাঁরা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকজনিত সংক্রমণের শিকার হচ্ছেন। ঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু না-হলে ছত্রাক সংক্রমিতদের বড় অংশের মৃত্যু হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে দেশের ১০টি হাসপাতালে প্রায় ১৭,৫৩৪ জন রোগীর উপরে সমীক্ষা চালায় আইসিএমআর। দেখা গিয়েছে, ওই রোগীদের প্রায় ৩.৬ শতাংশ কোভিডের পরে মিউকরমাইকোসিসের মতো কোনও না কোন ছত্রাকের বা ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। ওই গবেষণার দায়িত্বে থাকা আইসিএমআরের বিজ্ঞানী কামিনী ওয়ালিয়ার মতে, শতাংশের হিসেবে সংখ্যাটি কম মনে হলেও, গোটা দেশের প্রেক্ষিতে দেখলে দেশে এক লক্ষের কাছাকাছি রোগী ছত্রাক সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। যাঁদের ৫৬.৭ শতাংশকে বাঁচানো যায়নি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন গত এপ্রিলে দাবি করেছিলেন, এ দেশে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার ১.১১ শতাংশ। বিশ্বে করোনা সংক্রমণে মৃত্যুর হার ১০ শতাংশ। সেখানে ছত্রাক সংক্রমণে কারণে মৃত্যুহারের পরিসংখ্যান দেখে উদ্বেগে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া করোনা রোগীদের ছত্রাক সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানোকেই এখন মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে আইসিএমআর। মূলত করোনা সংক্রমিত হয়ে আইসিইউ-এ ভর্তি, অক্সিজেনের সাহায্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন এমন ব্যক্তিরাই দশ দিনের মাথায় ওই ছত্রাকজনিত সংক্রমণের শিকার হয়ে থাকেন।
গবেষণা বলছে, সংক্রমিত ব্যক্তিদের শরীর সাধারণ ওষুধে সাড়া না-দেওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি বড় সংখ্যক রোগীকে সুস্থ করতে গিয়ে কড়া অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের প্রয়োগ করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া ছত্রাক সংক্রমিত ৫২ শতাংশকে রোগীকে সুস্থ করার জন্য এমন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হচ্ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু-র ‘ওয়াচ’ তালিকায় রয়েছে। এই ওষুধগুলিকে প্রয়োজনবোধে সতর্ক ভাবে ব্যবহারের নির্দেশ রয়েছে হু-র। গবেষণায় এ-ও দেখা গিয়েছে, ‘ওয়াচ’ তালিকার ওষুধ পাঁচ জন আক্রান্তের মধ্যে এক জনের ক্ষেত্রে কাজ করে না। সে ক্ষেত্রে ‘লাস্ট রেসর্ট’ তথা শেষ ভরসা বলে ধরা হয়, এমন কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন চিকিৎসকেরা। গবেষকদের মতে, বেশ কিছু ক্ষেত্রে তা প্রয়োজনীয় হলেও, অনেক ক্ষেত্রে অহেতুক ও যথেচ্ছ ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল ওষুধের ব্যবহার শরীরে মিউকরমাইকোসিসের মতো ছত্রাক সংক্রমণকে ডেকে আনছে।
এমসের চিকিৎসক নবীন নিশ্চলের কথায়, শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহারে উল্টে উপকারী ব্যাকটেরিয়া নষ্ট হয়ে যায়। যার ফলে সুযোগসন্ধানী রোগগুলি শরীরে অনায়াসে হামলা চালাতে সক্ষম হয়। তাই গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ যা ছত্রাক সংক্রমণকে ডেকে আনছে, সেগুলি যথা সম্ভব কম ব্যবহার করার উপরে জোর দিয়েছে কেন্দ্র। গবেষক ওয়ালিয়ার মতে, ছত্রাক সংক্রমণ নিয়ে জনমানসে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। যা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের একটি প্রধান কারণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy