রাজনাথ সিংহ। ছবি: পিটিআই।
কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আবার কথা কিসের!
কার্যত এই প্রশ্ন তুলে দিয়েই আজ প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ জানিয়ে দিলেন, ‘‘পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও আলোচনা হলে, এখন তা পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে হবে।’’ সুর আরও চড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহের টুইট, ‘‘পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের ভারতভুক্তিতে সর্বসম্মতি জানিয়েছে সংসদ। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি জীবদ্দশায় যেন তা দেখে যেতে পারি।’’
এত দিন ভারতের অবস্থান ছিল, কাশ্মীর দ্বিপাক্ষিক বিষয়। তা নিয়ে অন্য কোনও দেশ বা আন্তর্জাতিক মঞ্চের নাক গলানোয় নয়াদিল্লির আপত্তি থাকলেও, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনায় ভারতের আপত্তি ছিল না। আজ রাজনাথ জোরালো অবস্থান নিয়ে বলেছেন, ‘‘পাকিস্তান নিজের মাটিতে ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসে মদত দেওয়া বন্ধ করলেই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু আলোচনা হলে তা পাক-অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে হবে।’’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে ‘পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের জন্য প্রাণ দিয়ে দেব’ বলে মন্তব্যের পর থেকেই বিজেপি প্রচার করছে, এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকার পাক-অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের দখলে নিয়ে আসবে। আজ বস্তুত রাজনাথের মুখেও সেই সুর শোনা গিয়েছে।
দু’দিন আগে রাজনাথই পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার নিয়ে মোদী সরকারের নতুন অবস্থানের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এত দিন আগ বাড়িয়ে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার না-করাই ভারতের নীতি ছিল। রাজনাথ বলেন, ‘‘এত দিন এই নীতি মানা হলেও ভবিষ্যতে কী হবে, তা পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করছে।’’ আজ রাজনাথ হরিয়ানায় বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপির জন আশীর্বাদ যাত্রায় গিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনাতেও মোদী সরকারের অবস্থানের নতুন ইঙ্গিত দিলেন। কারণ ১৯৯৭-তে মলদ্বীপে সার্ক সম্মেলনে ইন্দ্রকুমার গুজরাল ও নওয়াজ় শরিফের আলোচনার পরে দুই দেশ সামগ্রিক আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করে। তাতে জম্মু-কাশ্মীর সহ সব বিষয় নিয়ে আলোচনায় রাজি হয় দু’দেশ।
কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার পরে ভারত সত্যিই কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার টেবিল থেকে কাশ্মীরকে সরিয়ে ফেলবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। কিন্তু অন্তত দেশের মানুষের সামনে মোদী সরকার কাশ্মীর প্রশ্নে আরও কট্টর অবস্থান নিতে চাইছে বলেই মনে করছেন রাজনীতিকেরা। কংগ্রেসের অভিযোগ, সবটাই রাজনীতি। দলের নেতা অভিষেক মনুসিঙ্ঘভি বলেন, ‘‘প্রতিটি বৈঠকে, জনসভায় ওঁরা ৩৭০ নিয়ে কথা বলছেন। তাই মনে হচ্ছে, সবটাই ভোটের দিকে তাকিয়ে করা। যা করেছেন, তা তো হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ক্রমাগত একে মহিমান্বিত করায় আসল উদ্দেশ্য খোলসা হচ্ছে।’’
সরকারি সূত্রের খবর, বিরোধীরা এই অভিযোগ তুলবেন বলেই পরিকল্পনামাফিক রাজনাথ সিংহকে দিয়ে এই ধরনের মন্তব্য করানো হচ্ছে। কারণ রাজনাথ সরকারের বিশ্বাসযোগ্য মুখ। তিনি বললে বোঝানো যাবে, নিছক বাজার গরম করার জন্য এ সব কথা বলছেন না। তিনি যে মুখ ফসকে পরমাণু-অস্ত্রে নীতি বদলের কথা বলেননি, তা বোঝাতে ওই মন্তব্য রাজনাথ পরে টুইটও করে দেন।
রাজনাথ বলেন, ‘‘পাকিস্তান সবার দরজায় কড়া নেড়ে সাহায্য চাইছে। যদিও আমেরিকা ওদের নাকে ঝামা ঘষে বলেছে, ভারতের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে।’’ তাঁর দাবি, পাকিস্তান ভারতে ভাঙন ধরাতে চাইলেও প্রধানমন্ত্রী তাঁর ৫৬ ইঞ্চির ছাতির প্রমাণ দিয়েছেন। পুলওয়ামায় সন্ত্রাসের পরে বালাকোট অভিযানে উচিত জবাব দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy