Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

শান্তি থাকবে তো?

সোমবার সকালে খবরটা পাওয়ার পরও হাসতে হাসতে দুপুরে নমাজ পড়তে চলে গিয়েছি।

প্রহরী: সুনসান শ্রীনগরের রাস্তায় সাইকেলে সওয়ার এক খুদে। মঙ্গলবার।  ছবি: এএফপি।

প্রহরী: সুনসান শ্রীনগরের রাস্তায় সাইকেলে সওয়ার এক খুদে। মঙ্গলবার। ছবি: এএফপি।

রফিক আহমেদ নকাশ
শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৯ ০৪:০৩
Share: Save:

চল্লিশ বছরেরও বেশি কলকাতায় কেটে গেল, এমন পরিস্থিতিতে কখনও পড়েছি বলে মনে আসছে না।

সোমবার সকালে খবরটা পাওয়ার পরও হাসতে হাসতে দুপুরে নমাজ পড়তে চলে গিয়েছি। তার পরে ফের নিউ মার্কেটের দোকানে এসে বসেছি। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) সারা দিন বড্ড অস্থির লাগছে। বিবি-বেটির মোবাইল ফোন, ল্যান্ডলাইন কোথাও সাড়া নেই। দোকানের মালিক মহম্মদ শফি ফরিদের ফোনটাও বার বার নেটওয়ার্ক এরিয়ার বাইরে রয়েছে বলছে।

মুম্বইয়ে ছেলেটাকেও বলেছি বাড়িতে ফোন কর! কিন্তু লাভ হচ্ছে না। শ্রীনগরের শিখবাগে শেষ বার বৌকে ফোনে ধরতে পেরেছি রবিবার রাতে। তখনই বুঝতে পারছিলাম ফের কিছু ঘটবে। তবে এমন কিছু তো আমাদের জীবনে নতুন নয়, তাই ভয় করেনি। বৌকে শুধু বলেছিলাম, চাউল, আলুটালু ঘরে আছে তো! তবে ঠিক আছে। এমন কার্ফু গোলাগুলি আমাদের বহুত দেখা আছে!

এখন মালুম হচ্ছে, কলকাতায় বসে সবার মুখে কাশ্মীর নিয়ে এত বাতচিত আগে কখনও শুনিনি! ৩৭০ তুলে দেওয়া নিয়ে ভালমন্দ যা-ই হোক, শান্তি থাকবে তো, এই ভয়টাই নতুন করে পেয়ে বসছে। পুজোর আগের কয়েকটা মাস আমাদের দোকানে বিজ়নেস একটু ঢিলেঢালাই হয়! তবে চেনাজানা বাঙালিবাবুরা সব অন্য খবর নিতে ভিড় করে। পুজোয় কেউ ‘ভ্যালি’ (উপত্যকা)-তে গেলে একবারটি আমাদের দোকানে তাঁকে আসতে হবেই। চা খেতে খেতে কোথায় কোথায় ঘুরবে, কোন হোটেলে উঠবে তা নিয়েও আড্ডা হয়। এ বার খালি খারাপ খবর আর ভয়!

কাশ্মীরি শাল, স্টোল, স্কার্ফ আর ঘর সাজানোর জিনিসের এই দোকানটাই নিউ মার্কেটের সব থেকে পুরানা! প্রথমে পাশের দোকান আর আমাদেরটা এক ছিল। পরে ভেঙে আলাদা হয়েছে। কলকাতায় কাশ্মীরি শালওয়ালারা আসছেন দেড়শো বছরেরও বেশি দিন। আমদের দোকান পার্টিশনেরও (দেশভাগ) অনেক আগের। এর আগে ’৯০ সালে কাশ্মীরে ঝামেলার সময়েও দেখেছি, ল্যান্ডফোন চালু আছে। এ বার কাশ্মীরের কোনও খবর, বাড়ি ঘরদোর আছে কি না বুঝতে পারছি না। আমি পাঁচ ওয়ক্ত নমাজ পড়া লোক। মার্কেট স্ট্রিটে আমার বাড়ির কাছের মসজিদে যেতে যেতেও মনটা অস্থির লাগছে।

এত সেনা নামিয়ে কি সত্যিই শান্তি আসবে শেষ পর্যন্ত! জওয়ান বা মহল্লার তাজা ছেলে, কারও মরার খবর পেলেই এখন মনে হয় সে তো আমার ছেলেরই বয়সী। আমাদের কাশ্মীরকে লোকে জন্নত বলে। সেই জন্নতে যেন নজর লেগে আছে।

(নিউমার্কেটের একটি দোকানের ম্যানেজার)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy