ছবি: এপি।
নিরাপত্তা বাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরে শিশুদের বেআইনি ভাবে আটক করে রাখছে বলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন মানবাধিকার কর্মীরা। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলল, মামলাকারীরা কেন সেখানকার হাইকোর্টে যাচ্ছেন না? হাইকোর্টে মামলা করতে গেলে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে— আইনজীবী হাজেফা আহমদির এই অভিযোগ শুনে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ হুঁশিয়ারি দিলেন, তিনি নিজে এ বিষয়ে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা বলবেন। প্রয়োজনে তিনি কাশ্মীরে যাবেনও। কিন্তু হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির রিপোর্টে উল্টো কথা থাকলে, মামলাকারীদের ফল ভুগতে হবে।
যার পরে অন্যতম মামলাকারী, শিশু অধিকার আন্দোলনকর্মী এণাক্ষী গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘উনি যদি শিশুদের বিষয়ে আর্জি শুনতেন এবং তাদের সুরাহা দিতে সাহায্য করতেন, সেটাই ভাল হত।’
কংগ্রেস ইতিমধ্যেই অভিযোগ তুলেছে, সুপ্রিম কোর্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের বিরুদ্ধে মামলার শুনানির জন্য সাংবিধানিক বেঞ্চ গঠন করেছে। কিন্তু শুনানিই শুরু হচ্ছে না। আজ সুপ্রিম কোর্টে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর থেকে কাশ্মীরের জনজীবন স্তব্ধ করা নিয়ে একগুচ্ছ মামলার শুনানি হল। কিন্তু কোনও সুরাহা মিলল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠল।
কাশ্মীর এবং সুপ্রিম কোর্ট*
নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের আটক করছে, এই অভিযোগ শুনে
• আপনারা বলছেন, জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্টে যেতে পারছেন না। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির থেকে রিপোর্ট চাইছি। প্রয়োজনে ওখানে যাব। কিন্তু যদি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির রিপোর্টে উল্টো কথা থাকে, ফল ভোগ করার জন্য তৈরি থাকুন
কাশ্মীরে সংবাদপত্রের কাজে বাধার অভিযোগ
• কেন্দ্র, রাজ্য নিশ্চিত করবে যাতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসে। তবে সবটাই করতে হবে জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে
ফারুক আবদুল্লা মামলায়
• কেন্দ্রকে নোটিস, শুনানি সেই ৩০ সেপ্টেম্বর
গুলাম নবি আজাদ প্রসঙ্গে
• শ্রীনগর, অনন্তনাগ, বারামুল্লা, জম্মুতে যেতে পারবেন। তবে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, রাজনৈতিক না।
মহম্মদ ইউসুফ তারিগামির শ্রীনগর যাওয়া নিয়ে
• যেখানে চলাফেরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানে ইচ্ছেমতো ঘোরাফেরা করতে হলে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে
*প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বেঞ্চ
জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে সুপ্রিম কোর্টে ‘হেবিয়াস কর্পাস’ মামলা করেছিলেন তামিল নেতা ভাইকো। আর্জি ছিল— ফারুককে আদালতে হাজির করা হোক। সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রের বক্তব্য জানতে চেয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দিল। দিল্লিতে যখন শুনানি চলছে, ঠিক সেই সময়ই শ্রীনগরে ফারুককে কঠিন জনসুরক্ষা আইন (পাবলিক সেফটি অ্যাক্ট)-এ আটক করা হল।
কাশ্মীরের শোপিয়ানের তরুণ আবিদ খানকে সম্প্রতি রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে গিয়ে সেনা মারধর করে বলে অভিযোগ। সংবাদ সংস্থা এএফপি সোমবার তাঁর এই ছবি প্রকাশ করেছে।
কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদের পর থেকেই যোগাযোগ ব্যবস্থা স্তব্ধ। মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ। সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে ‘কাশ্মীর টাইমস’ সংবাদপত্রের সম্পাদক অনুরাধা ভাসিন প্রশ্ন তুলেছিলেন, কোন সরকারি নির্দেশিকায় এ সব বন্ধ রাখা হয়েছে? সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে জম্মু-কাশ্মীরে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করতে হবে। তবে সবটাই ‘জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখে’। আইনজীবীদের বক্তব্য, এমন হলে ‘জাতীয় স্বার্থ’-র যুক্তি দেখিয়ে সরকার যত দিন ইচ্ছে মোবাইল-ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে পারে। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন সুপ্রিম কোর্টে এক নোটে জানিয়েছে, ‘যাবতীয় নিয়ন্ত্রণই অস্থায়ী। ধাপে ধাপে তা শিথিল করা হচ্ছে। আমরা এমন একটা ধাপে পৌঁছচ্ছি, যেখানে হয়তো আর কোনও নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন পড়বে না।’
আজ সুপ্রিম কোর্টে একমাত্র সুরাহা পেয়েছেন কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ। কোর্ট তাঁকে শ্রীনগর, অনন্তনাগ, বারামুল্লা ও জম্মু সফরের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু গুলাম নিজেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি কোনও রাজনৈতিক সভা করবে না। শুধু সাধারণ মানুষের পরিস্থিতি দেখে ফিরে আসবেন। সিপিএম নেতা মহম্মদ ইউসুফ তারিগামিকে চিকিৎসার জন্য শ্রীনগর থেকে দিল্লির এইমসে আনার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। তিনি এখন সুস্থ। জম্মু-কাশ্মীর ভবনের অতিথিশালায় রয়েছেন। আজ প্রধান বিচারপতির নির্দেশ, তারিগামি চাইলে শ্রীনগর ফিরে যেতে পারেন। কিন্তু সেখানে কার্ফুর মধ্যে ঘোরাফেরা করতে হলে তাঁকে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে।
শুধু শিশু অধিকার আন্দোলনকারীরা নন। কাশ্মীর টাইমসের সম্পাদকের হয়েও আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার অভিযোগ তোলেন, ইন্টারনেট, গণপরিবহণ বন্ধ বলে সংবাদপত্র প্রকাশে সমস্যা হচ্ছে। কেন্দ্রের অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল যুক্তি দেন, সাংবাদিকদের জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। অন্য সংবাদপত্র প্রকাশ হচ্ছে। যে সব টিভি ও রেডিয়ো চ্যানেল চলছে, তার তালিকাও দেন বেণুগোপাল। বিচারপতি এস এ বোবদে কেন্দ্রকে এ সব তথ্য হলফনামা দিয়ে জানাতে বলেন। বেণুগোপাল জানান, ১৯৯০ থেকে গত ২৯ বছরে জম্মু-কাশ্মীরে ৭১,০৩৮টি সন্ত্রাসবাদী হামলা ঘটেছে। ৪১,৮৬৬ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। তার মধ্যে ১৪,০৩৮ জন সাধারণ নাগরিক। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতার যুক্তি, কাশ্মীরের ১০৫টি থানার ৯৩টি থেকেই ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হয়েছে। জম্মু ও লাদাখে আর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy