Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

বিদেশিনি সাংবাদিক অসম ছাড়ায় ধোঁয়াশা

সরকার শান্ত বলে দাবি করে এলেও কাশ্মীর যে অশান্ত তা বিদেশি সংবাদমাধ্যমেই প্রথম সামনে এসেছিল।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:১৬
Share: Save:

কাশ্মীরের পর এ বার কি অসম! রাজ্য জুড়ে এনআরসি সংক্রান্ত গরমিলের ঘটনা সামনে আসতেই সংবাদমাধ্যমের মুখ বন্ধ করার অভিযোগ উঠল নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, প্রথম ধাক্কায় মূলত সরকারের কোপে পড়েছেন বিদেশি সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকদেরা। সরকার শান্ত বলে দাবি করে এলেও কাশ্মীর যে অশান্ত তা বিদেশি সংবাদমাধ্যমেই প্রথম সামনে এসেছিল। সেই খবরকে অস্ত্র করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হয় পাকিস্তান।

অস্বস্তিতে পড়ে সরকার। অস্বীকার করে সব অভিযোগ। জানায়, দেশি-বিদেশি কোনও সংবাদমাধ্যমের উপরেই বিধিনিষেধ জারি করা হয়নি। কাশ্মীরের পরে অসমে এনআরসি নিয়েও এই ধরনের কোনও সংবাদ প্রকাশ হোক তা মোটেই কাম্য নয় সরকারের কাছে। পাকিস্তান জানিয়ে রেখেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদের আসন্ন অধিবেশনে বিষয়টি নিয়ে সরব হবে। ওই বৈঠকের আগে মানবাধিকার লঙ্ঘন-সংক্রান্ত কোনও তথ্য যেন বিদেশি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ না পায়, তার জন্য তলে-তলে সক্রিয় রয়েছে নয়াদিল্লি। অভিযোগ উঠেছে, নেতিবাচক খবর রুখতে সব বিদেশি সাংবাদিককে অসম ছাড়তে বলা হয়েছে। বিদেশি সংবাদমাধ্যমের এক বিদেশিনি সাংবাদিককে পুলিশ পাহারায় বিমানবন্দরে ছেড়ে আসা হয়েছে। অসমকে সংরক্ষিত এলাকা বা‘প্রোটেকটেড এরিয়া’ বলে দেখানোর অভিযোগও উঠেছে। যেখানে যেতে নিতে হবে ‘প্রোটেকটেড এরিয়া পারমিট (পিএপি)’।

বিদেশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। অসমের স্বরাষ্ট্র দফতরও জানিয়েছে, কোনও বিদেশি সাংবাদিককে রাজ্য থেকে বার করে দেওয়া হয়নি। অসমকে ‘প্রোটেকটেড এরিয়া’ ঘোযণা করে কোনও নির্দেশও জারি হয়নি। যাদের সাংবাদিককে বার করে দেওয়া হয়েছে বলে খবর, সেই সংস্থাও জানায়, ওই সাংবাদিক স্বেচ্ছায় অসম থেকে ফিরে এসেছেন। তাঁকে জোর করা হয়নি।

একটি বিষয় স্পষ্ট, ভবিষ্যতে সরকার-বিরোধী খবর রুখতে চাইলে বিধিনিষেধ জারি করতে পারে কেন্দ্র। বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা পবনকুমার বাধে আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘শুধু অসমই নয়, জম্মু-কাশ্মীর ও উত্তর-পূর্বের সব রাজ্যে যাওয়ার ক্ষেত্রেই বিদেশ মন্ত্রকের অনুমতি নিতে হয় বিদেশি সাংবাদিকদের। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনার পরে সেই অনুমতি দেওয়া হয়। এটা নতুন নিয়ম নয়। এর সঙ্গে এনআরসির সম্পর্ক নেই।’’ এ প্রসঙ্গে তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিজ্ঞপ্তির ৮২ নম্বর ধারা উদ্ধৃত করেন। পরে মন্ত্রক টুইট করে জানায়, খবরটি ভুয়ো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ‘প্রোটেকটেড এরিয়া’র তালিকায় হিমাচলপ্রদেশ, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড ও জম্মু-কাশ্মীরের অংশবিশেষ, অরুণাচল, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিমের নাম থাকলেও অসম নেই। তবে কেন অসমে আসতে ‘পিএপি’-র ধাঁচে অনুমতিপত্র লাগবে? স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মুখ খোলেনি। পবন জানান, ‘পিএপি’ ও এই অনুমতিপত্র এক নয়। বিদেশি সাংবাদিকদের উত্তর-পূর্বে যে কোনও এলাকায় আসতেই অনুমতি লাগে।

আন্তর্জাতিক সমালোচনা রুখতে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার আগেই বলেছেন, এনআরসির সঙ্গে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার সম্পর্ক নেই। তা সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশিত ও পরিচালিত প্রক্রিয়া। তাঁর দাবি, মানবাধিকার ভঙ্গের কোনও ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু মুখ বন্ধ করা যাচ্ছে না অসমের মানুষের। চুপ নেই সংবাদমাধ্যমগুলিও। তাই প্রশ্ন উঠছে, মন্ত্রকের ‘সূত্র’ মারফত ইচ্ছাকৃত ভাবেই কি ছড়ানো হল ঘটনাহীন রটনা! যাতে অন্তত বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে কৌশলে অসম থেকে দূরে রাখা যায়!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy