শোপিয়ানে আম জনতার সঙ্গে অজিত ডোভাল। ছবি: টুইটার থেকে
নিস্তব্ধ, সুনসান গোটা চত্বরে বন্ধ দোকানপাট। জলপাই রঙা উর্দি ঘিরে রেখেছে এলাকা। তারই মধ্যে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে জনা দশেক লোক। চলছে কথোপকথন। অধিকাংশই শ্রোতা। বক্তা এক জনই। হাতকাটা জ্যাকেট পরা এক ব্যক্তি। অজিত ডোভাল। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। পরিস্থিতি বুঝতে যিনি এখন ভূস্বর্গে।
বিপুল সংখ্যক আধাসেনা দিয়ে গোটা কাশ্মীর উপত্যকা মুড়ে দিয়েছে কেন্দ্র। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত বলেই দাবি তাদের। ইন্টারনেট, মোবাইল, এমনকি ল্যান্ডলাইনও কার্যত বন্ধ থাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে কাশ্মীরের সঙ্গে বাকি দেশের যোগাযোগ প্রায় নেই। ফলে অন্য সূত্র থেকে খবর মেলার সম্ভাবনাও কমে এসেছে। দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমের উপরে কড়া নজর রাখছে নিরাপত্তাবাহিনী।
তার মধ্যেও খোদ শ্রীনগর থেকে আজ দফায়-দফায় বিক্ষোভ মিছিলের খবর এসেছে। বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের খবর এসেছে পুঞ্চ, কার্গিল, কুপওয়ারা থেকেও। কেন্দ্রের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে সড়কে নামতে শুরু করেছেন বিক্ষোভকারীরা। গ্রেফতার হয়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। অভিযোগ, বিক্ষোভকারীদের হটাতে ফের ছররা বন্দুকের ব্যবহার করেছে আধাসেনা। ছররার আঘাতে শ্রীনগরের হরি সিংহ হাসপাতালে নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ডজনখানেক বিক্ষোভকারী। যাঁদের মধ্যে বেশ কয়েক জন দৃষ্টিশক্তি হারানোর মুখে বলে জানা গিয়েছে। কাশ্মীরি সাংবাদিক আদনান বাট বুধবার টুইটে দাবি করেছেন, ছররা গুলির আঘাতে গুরুতর জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি একাদশ শ্রেণির ছাত্র আজ়রার খান। হাসপাতালে জখম ছাত্রের ছবিও টুইট করেছেন তিনি। আদনানের দাবি, প্রাণে বাঁচলেও আজ়রারের দু’টি চোখই নষ্ট হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
খেতে-খেতে: স্থানীয়দের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। বুধবার কাশ্মীরের শোপিয়ানে। ছবি: পিটিআই।
পর্যবেক্ষকদের মতে, বড় মাপের না হলেও ছোট ছোট বিক্ষোভ-ধর্না শুরু হয়েছে কাশ্মীর জুড়েই। এর মধ্যে সোমবার ঝিলম নদীতে ডুবে ওসেইফ আলতাফ নামে এক কিশোরের মৃত্যুর খবরও সামনে এসেছে। ঘটনাচক্রে সে দিনই রাজ্যসভায় কাশ্মীর সংক্রান্ত বিলগুলি পেশ করেন অমিত শাহ। পালপোরার বাসিন্দা আলতাফের পরিবারের অভিযোগ, সে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল। ফেরার পথে ধাওয়া করে আধাসেনা। ভয়ে তারা ঝিলমের জলে ঝাঁপ দেয়। বাকিদের উদ্ধার করা গেলেও, সাঁতার না-জানায় ডুবে যায় আলতাফ।
ডোভাল উবাচ
• ডোভাল: কী মনে হচ্ছে আপনাদের?
এক ব্যক্তি: শান্তিতে থাকতে চাই।
• ডোভাল: শান্তিতে থাকুন। আল্লা যা করেন, ভালর জন্যই করেন।
এক ব্যক্তি: তাই প্রার্থনা করি।
• ডোভাল: ভাল মানুষের প্রার্থনা সব সময় মঞ্জুর হয়। আপনাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেওয়াই আমাদের লক্ষ্য। আপনি, আপনার সন্তান, সন্তানের সন্তান এখানে শান্তিতে থাকতে পারে, উন্নতি করতে পারে, দুনিয়ায় সুনাম কুড়াতে পারে... সব শেষে যেন ভাল মানুষ হতে পারে। রোজ রোজ ধর্মঘটের পরিবর্তে নতুন পরিবেশ আসুক।
কেন্দ্র অবশ্য আজ ‘স্বাভাবিক’ কাশ্মীরের ছবিই প্রকাশ করেছে। সুষমা স্বরাজের অন্ত্যেষ্টি শেষ হতেই সংবাদমাধ্যমের পর্দায় ভিডিয়োটি চলতে দেখা যায়। তাতে দেখা যায় জঙ্গিদের অন্যতম ‘আঁতুড়ঘর’ শোপিয়ানের রাস্তায় হাজির ডোভাল। কথা বলছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। তাঁদের জানাচ্ছেন, কাশ্মীরের উন্নয়নের স্বার্থেই যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। তার পর রাস্তায় দাঁড়িয়েই সকলের সঙ্গে সারছেন মধ্যাহ্নভোজন।
NSA Ajit Doval eating lunch with Kashmiri locals in Shopian of South Kashmir this afternoon. Normalcy being slowly restored in the valley. What a remarkable gesture by the NSA! Interacting with people on ground and checking on their safety, security and well being! #Peace pic.twitter.com/MqVmhu1B2h
— Aditya Raj Kaul (@AdityaRajKaul) August 7, 2019
অনেকের মতে, শুধু এ দেশ নয়, আন্তর্জাতিক মহলের সামনেও কাশ্মীর যে স্বাভাবিক, সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার দায় রয়েছে মোদী সরকারের। সেই কারণেই এমন ভিডিয়ো প্রকাশ। সুষমার মৃত্যুর কারণে আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর সংক্রান্ত বক্তব্য রাখতে পারেননি। সূত্র জানিয়েছে, কাল বা পরশু দেশবাসীর উদ্দেশে ভাষণ দিতে পারেন তিনি।
পথ-লিখন: জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ ও পুনর্গঠন বিল নিয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ। বুধবার দিল্লির রাস্তায়। ছবি: এএফপি।
আধাসেনা দিয়ে গোটা কাশ্মীর মুড়ে দিয়ে আপাত শান্তির ছবি তুলে ধরলেও, এই মুহূর্তে কেন্দ্রের মূল দুশ্চিন্তা দু’টি। প্রথমত, সোমবার ইদ। দ্বিতীয়ত, বৃহস্পতিবার স্বাধীনতা দিবস। ইদের সময়ে টানা কার্ফু চললে জনমানসে নেতিবাচক বার্তা যাওয়ার আশঙ্কা। মার খাবে ব্যবসা। বিষয়টির সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগও জড়িত। এখনও কাশ্মীর-সিদ্ধান্তে দেশের বৃহত্তর মুসলিম সমাজ নীরব। তাই মেপে পা ফেলার পক্ষপাতী সরকার। ইদ উদ্যাপনে কাশ্মীরি জনগণকে কতটা ছাড় দেওয়া হবে, তা নিয়ে দ্বিধায় কেন্দ্র। কারণ, ছাড় দিলে পরে তা বিক্ষোভে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না গোয়েন্দারা। আর স্বাধীনতা দিবসে কাশ্মীরে যে বিক্ষোভ হবে, তা এক প্রকার ধরেই নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র কর্তারা। তা রোখার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy