Advertisement
E-Paper

BJP: গুজরাতে মুখ ভূপেন্দ্র, ভোট মেপে আস্থা পটেলে

কর্নাটকে লিঙ্গায়েত। উত্তরপ্রদেশে ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর জাতি)। আর এ বার গুজরাতে পাটীদার। 

ভূপেন্দ্র পটেল। পিটিআই

ভূপেন্দ্র পটেল। পিটিআই

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৮:২৭
Share
Save

কর্নাটকে লিঙ্গায়েত। উত্তরপ্রদেশে ওবিসি (অন্যান্য অনগ্রসর জাতি)। আর এ বার গুজরাতে পাটীদার।
বিধানসভা নির্বাচনের অনেক আগেই আরও এক বার সংশ্লিষ্ট রাজ্যের প্রভাবশালী সম্প্রদায়কে ‘পাশে রাখার’ কৌশল নিল বিজেপি। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বিজয় রূপাণীর ইস্তফার পরে রবিবার ভূপেন্দ্র পটেলকে ওই রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নিলেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।

পাটীদার সম্প্রদায়ের নেতা ভূপেন্দ্র প্রথম বারের বিধায়ক। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে গুজরাত বিধানসভা নির্বাচনের ১৫ মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী বদল করে ওই রাজ্যের মানুষের মধ্যে সরকার-বিরোধী ক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত করার চেষ্টা করল বিজেপি। একই সঙ্গে, রাজ্যের প্রভাবশালী পটেল বা পাটীদার সম্প্রদায়ের নেতাকে সরকারের শীর্ষ পদে এনে তাঁদেরও বার্তা দিল নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দল।

ভূপেন্দ্র গুজরাতের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেন পটেলের (বর্তমানে উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল) ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত। সোমবার তিনি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন। বরাবর ক্ষত্রিয়-হরিজন-আদিবাসী-মুসলমান (সংক্ষেপে কেএইচএএম বা ‘খাম’) ভোটব্যাঙ্কের ভরসায় থাকা কংগ্রেস এ বার পাটীদার আন্দোলনের নেতা হার্দিক পটেলকে রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি করে ওই সম্প্রদায়ের ভোট টানার চেষ্টা করছে। তাতে বাঁধ দিতে জৈন সম্প্রদায়ের রূপাণীকে সরিয়ে পাটীদার ভূপেন্দ্র পটেলকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে নিয়ে এল বিজেপি।

বিজেপি নেতাদের মতে, ‘নতুন মুখ’ ভূপেন্দ্রকে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসানো থেকে স্পষ্ট, ২০২২ সালেও নরেন্দ্র মোদীকে সামনে রেখেই দল গুজরাতের ভোটে লড়বে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ২০২২ সালে মোদী-শাহের নিজের রাজ্য গুজরাতে বিজেপি হেরে গেলে, সারা দেশে নেতিবাচক বার্তা যাবে। তাই আগেই রাজ্য রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নিলেন মোদী।

শনিবার আচমকা রূপাণী মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে কোভিড মোকাবিলায় ব্যর্থতা ও প্রশাসনিক ঢিলেমির অভিযোগ উঠছিল। বিজেপি নেতারা মনে করছেন, তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের (মূলত মোদী-শাহ) প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। তাঁর মৃদুভাষী স্বভাবও রূপাণীর বিরুদ্ধে গিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে যে সব নাম নিয়ে জল্পনা চলছিল, তার মধ্যে ভূপেন্দ্র ছিলেন না। কারণ, তিনি দীর্ঘদিন আমদাবাদ পুরসভার কাউন্সিলর ও আমদাবাদ নগরোন্নয়ন সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন না। প্রথম বারের বিধায়ক। ফলে রাজ্য প্রশাসনে কাজের অভিজ্ঞতা নেই।

কিন্তু রবিবার কার্যত সকলকে চমকে দিয়ে ভূপেন্দ্রর নাম ঘোষণার পরে বিজেপির মধ্যেও প্রশ্ন, তিনি কি ১৫ মাসে গুজরাত সরকারের কাজে গতি আনতে পারবেন?

কংগ্রেস নেতারা বলছেন, গুজরাত সরকার আগের মতোই ‘রিমোট কন্ট্রোলে’ চলবে। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা তেমন না থাকলেও, পাটীদার সম্প্রদায়ের মধ্যে ভূপেন্দ্রর প্রভাব তাঁর পক্ষে গিয়েছে বলে বিজেপি নেতাদের মত।

গুজরাতের জনসংখ্যার প্রায় ২০-২৫ শতাংশ পাটীদার। তাঁরা বরাবরই গুজরাতে বিজেপির প্রধান ভোটব্যাঙ্ক। ১৯৯৫ সালে বিজেপি প্রথম বার এখানে ক্ষমতায় আসার পরে পাটীদার নেতা কেশুভাই পটেল প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। বিধানসভার ১৮২টি আসনের মধ্যে ৭০-৮০টিতে পাটীদাররাই ভোটের ফলের দিশানির্দেশ করতে পারে। গুজরাতের বহু শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী পাটীদার সম্প্রদায়ের। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির ভূপেন্দ্র পাটীদারদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে জড়িত সংগঠন সর্দারধাম বিশ্ব পাটীদার কেন্দ্রের অছি পরিষদের অন্যতম সদস্যও।

পাটীদারদের প্রধান দু’টি গোষ্ঠী— লেউভা ও কড়ভা। এদের মধ্যে লেউভাদের দাপট বেশি। ভূপেন্দ্র অবশ্য কড়ভা পাটীদার। কংগ্রেসের হার্দিক পটেলের মতো। এটিও তাঁর পক্ষে গিয়েছে।

কর্নাটকে লিঙ্গায়েত সম্প্রদায়কে পাশে রাখতে বি এস ইয়েদুরাপ্পাকে সরালেও বিজেপি বাসবরাজ বোম্মাইকে মুখ্যমন্ত্রী করেছে। উত্তরপ্রদেশে ওবিসি ভোট জিততে চেষ্টার কসুর করছে না। একই ভাবে গুজরাতেও পাটীদার সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকেই মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়া হল।

২০১৪ সালে মোদী দিল্লি চলে আসার পরে তিনি আনন্দীবেন পটেলের উপরে আস্থা রেখে তাঁকেই মুখ্যমন্ত্রী করেছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ১৫-১৬ মাস আগে তাঁকে সরিয়ে শাহের আস্থাভাজন রূপাণীকে মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। এ বারও ২০২২ সালের ভোটের ১৫ মাস আগে বিজেপি ফের মুখ্যমন্ত্রী বদল করল। পাঁচ বছর আগে মুখ্যমন্ত্রীর গদি হারানো আনন্দীবেনের ঘনিষ্ঠ ভূপেন্দ্রই ওই পদে বসছেন। আনন্দীবেনের ছেড়ে যাওয়া আমদাবাদের ঘাটলোডিয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকেই ২০১৭ সালে প্রায় ১.১৭ লক্ষ ভোটে জিতে বিধায়ক হন ভূপেন্দ্র। এই কেন্দ্র শাহের গাঁধীনগর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেও পড়ে।

এর রাজনৈতিক সুফল কি ঘরে তুলতে পারবে বিজেপি?

পাঁচ বছর আগে আনন্দীবেনকে সরিয়ে রূপাণীকে এনে বিজেপি গুজরাতে সরকার-বিরোধী ক্ষোভ প্রশমনের চেষ্টা করেছিল। তার পরেও ১৮২ আসনের বিধানসভায় কান ঘেঁষে ৯৯টি আসনে জিতে তারা ক্ষমতায় ফেরে। দলের ময়না-তদন্তে বলা হয়েছিল, পাটীদারদের ক্ষোভই এর কারণ। ২০১২ সালে বিজেপি পাটীদারদের ৮০ শতাংশ ভোট পেলেও, ২০১৭ সালে পেয়েছিল ৫৫ শতাংশ। তার পরে কংগ্রেসের একাধিক বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দিয়ে উপনির্বাচনে জেতায় বিজেপির আসন সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু রূপাণীর সরকারের কাজে মানুষ খুশি ছিলেন না বলেই বিজেপি নেতৃত্বের মত। পুর-নির্বাচনে সুরাতে আম আদমি পার্টির জয়ে তা স্পষ্ট। এর পরেই মোদীর আস্থাভাজন সি আর পাটিলকে রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। সাংগঠনিক রদবদল করে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাল ফল করে বিজেপি। কিন্তু তার পরেও রূপাণীর উপরে ভরসা রাখা হল না।

বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা পরেশ ধনানীর বক্তব্য, “এ থেকে স্পষ্ট, গুজরাতে বিজেপি সরকার ব্যর্থ। এখন তা ঢাকতে মুখ্যমন্ত্রীর মুখবদল হচ্ছে। দিল্লি থেকে রিমোটে কন্ট্রোলে গাঁধীনগরে সরকার চালানো হবে।”

gujrat BJP Narendra Modi

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।