Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bharat Jodo Yatra

স্বর্ণমন্দিরে রাহুল গান্ধী, কৈশোরে দেখা ঠাকুমার স্মৃতি জুড়ে গেল ভারত জোড়ো যাত্রায়?

ভারত জোড়ো যাত্রায় স্বর্ণমন্দিরের রাহুলের পদার্পণ ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে এক প্রতীকী দৃশ্যের অবতারণা করল বলে মনে করছেন অনেকেই। যে ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত গান্ধী-নেহরু পরিবারও।

মঙ্গলবার পঞ্জাবের স্বর্ণমন্দিরে রাহুল গান্ধী এবং ছেলেবেলায় ঠাকুমা ইন্দিরার সঙ্গে কিশোর রাহুল।

মঙ্গলবার পঞ্জাবের স্বর্ণমন্দিরে রাহুল গান্ধী এবং ছেলেবেলায় ঠাকুমা ইন্দিরার সঙ্গে কিশোর রাহুল। ছবি: সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
অমৃতসর শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২৩ ২০:২৫
Share: Save:

ঠিক এক বছর আগে, ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসেও অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির দর্শন করেছিলেন তিনি। কিন্তু সে সময় পঞ্জাবে ছিল বিধানসভা ভোটের আবহ। নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির স্বর্ণমন্দিরে প্রার্থনাসভা ও লঙ্গরে যোগ দেওয়ার ‘তাৎপর্য’ নিয়ে আলোচনা হয়নি আলাদা ভাবে।

যেমনটা হল মঙ্গলবার। ভারত জোড়ো যাত্রা পঞ্জাবে প্রবেশের পর স্বর্ণমন্দিরের রাহুলের পদার্পণ ভারতীয় রাজনীতির ইতিহাসে এক প্রতীকী দৃশ্যের অবতারণা করল বলে মনে করছেন অনেকেই। যে ইতিহাসের সঙ্গে গত ৪ দশক ধরে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত গান্ধী-নেহরু পরিবারও।

মঙ্গলবার বিকেলে অম্বালা থেকে অমৃতসরে যান রাহুল। ভারত জোড়ো যাত্রায় তাঁর পরিচিত পোশাক সাদা টি-শার্টের পাশাপাশি তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাহুলের মাথায় ছিল গেরুয়া পাগড়ি। পঞ্জাবের বিরোধী দলনেতা প্রতাপ সিংহ বাজওয়া এবং অমৃতসরের কংগ্রেস সাংসদ গুরপ্রিত সিংহ অউজলাকে সঙ্গে নিয়ে স্বর্ণমন্দির পরিক্রমাও করেন রাহুল। ভারত জোড়ো যাত্রায় টুইটারে লেখা হয়েছে— ‘সতনাম শ্রী ওয়াহে গুরু। আজ স্বর্ণমন্দিরে পৌঁছেছেন রাহুল গান্ধী। দেশে শান্তি ও সৌভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য প্রার্থনা করেছেন।’

১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর। রাহুল তখন ১৪ বছরের কিশোর। দিল্লির সফদরজং রোডের বাংলোয় দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিলেন ঠাকুমা ইন্দিরা। সে দিনের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিবিড় যোগ ছিল এই স্বর্ণমন্দিরের। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরার নির্দেশেই ১৯৮৪ সালের ৩-৮ জুন অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির চত্বরে ঘাঁটি গেড়ে থাকা খলিস্তানি জঙ্গিদের উৎখাত করতে ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় সেনা। নিহত হয়েছিলেন খলিস্তানি জঙ্গি নেতা জার্নেল সিংহ ভিন্দ্রনওয়ালে। আর তারই প্রতিশোধ নিতে ইন্দিরা হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল খলিস্তানপন্থী শিখ গোষ্ঠী। এত বছর পরেও স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযানের সেই ঘটনা শিখ সমাজের বড় অংশের কাছে গভীর ক্ষত।

বস্তুত, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের কাছেও সশস্ত্র খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে শিখদের পবিত্রতম ধর্মস্থানে ইন্দিরার সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়ে আজও প্রশ্ন ওঠে। তাঁদের মতে, জওহরলাল নেহরু যে রকম স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিজের মনের কথা বলতেন, সিদ্ধান্ত নিতেন ইন্দিরা কখনওই তা করতেন না। তাঁর মুখ দেখে মনের ভাব বোঝা যেত না। যা করতেন সুপরিকল্পিত ভাবে, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে করতেন। স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযানের ‘প্রতিক্রিয়া’ আঁচ করতে তিনি কী ভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন, তা নিয়ে বিস্মিত হন তাঁরা। প্রসঙ্গত, শুধু পঞ্জাব জুড়ে বিক্ষোভ নয়, অপারেশন ব্লু স্টারের প্রতিক্রিয়া পড়েছিল ভারতীয় সেনার অন্দরে। প্রতিবাদ জানিয়ে বরখাস্ত হয়েছিলেন তিনশোরও বেশি শিখ সেনা।

ইন্দিরার মতো প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব নয়, নেহরুর আবেগের সঙ্গেই রাহুলের বেশি মিল খুঁজে পান কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা। ৫২ বছর বয়সে ভারতকে জোড়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ১২টি রাজ্য এবং ২টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি পথে তাঁর পদযাত্রার নেপথ্যেও সেই আবেগেরই সন্ধান পাচ্ছেন তাঁরা। বস্তুত, ভারতের অন্তরাত্মার সন্ধানে টানা ছ’মাস ধরে প্রতিদিন গড়ে ৩০ কিলোমিটার করে পদযাত্রার যে রাজনৈতিক কর্মসূচি রাহুল নিয়েছেন, স্বাধীনতা-উত্তর ইতিহাসে তার কোনও তুলনা নেই। মঙ্গলবার একদা খলিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদের প্রাণকেন্দ্র অমৃতসরে এসে নতুন মাত্রা পেল রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা। কৈশোরে দেখা ঠাকুমার স্মৃতিটাও জুড়ে গেল কি?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy