Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪

বাঁদরামিতে নাজেহাল দিল্লির বাঙালিপাড়া

দুর্গোপুজো শুরুর মুখেই বহিঃশত্রুর আক্রমণ দিল্লির ‘মিনি-কলকাতা’ চিত্তরঞ্জন পার্কে! নাহ্, পাক সেনা নয়। বাঁদর সেনা। জাতে খাঁটি ভারতীয়।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৮
Share: Save:

দুর্গোপুজো শুরুর মুখেই বহিঃশত্রুর আক্রমণ দিল্লির ‘মিনি-কলকাতা’ চিত্তরঞ্জন পার্কে!

নাহ্, পাক সেনা নয়। বাঁদর সেনা। জাতে খাঁটি ভারতীয়।

রাজধানীর প্রবাসী বাঙালি অধ্যুষিত এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঢুকে পড়েছে প্রায় তিনশো স্বাস্থ্যবান বাঁদর। খুব কম করেও ১০-১২টা দুর্গোপুজো তো হয়-ই চিত্তরঞ্জন পার্ক এলাকায়। কালীবাড়ি, মেলা গ্রাউন্ড, নবপল্লী, মিলন সমিতি— পুজোর কর্মকর্তাদের এখন মাথায় হাত। এক বার প্যান্ডেলে এরা ঢুকে পড়লেই হয়ে গেল!

পঞ্চমীর দিন ভোররাতেই জে-ব্লক আর আই-ব্লকের বেশ কিছু বাসিন্দা টের পেয়েছিলেন ছাদে ধুপধাপ। আবছা আলোয় চোখ ছানাবড়া করে তাঁরা দেখেছেন, ছাদের এক কোণে যেন ‘ব্রেক-ডান্স’ জুড়েছে গোটাদশেক বাঁদরের একটা দল। ছাদে শখ করে বাগান করেছিলেন যাঁরা, তাঁরা দেখেছেন টবের শ্রাদ্ধ। একদল তত ক্ষণে জলের ট্যাঙ্কের ঢাকনা খুলে ভেতরে ঢুকে প্রাতঃস্নানে ব্যস্ত। তার পর এক সময়ে ছাদের দৌরাত্ম্য শেষ হয়েছে। আলো ফুটতে এ ডাল-ও ডাল করে খাবার খুঁজতে বেরিয়েছে তারা।

হামলা এ বার এক নম্বর বাজারে ফলের দোকানে। তার পর জে-ব্লকের পার্কে চলে বাঁদরসেনার প্রাতরাশ বৈঠক। প্রমাদ গোনেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পঞ্চমীর সন্ধ্যায় বহু পুজোর মণ্ডপে ‘আনন্দমেলা’ হয়। বাড়ির গৃহিণীরা সেখানে খাবার বানিয়ে স্টল দেন। বিক্রিবাটাও হয় ভাল। সেই আসরের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে যায়। নবপল্লীর দুর্গোপুজো সমিতির প্রধান কান্ডারি উৎপল ঘোষ বলেন, ‘‘এ এক অভিনব সমস্যা। আশা করি খুব বেশি লোকজন দেখলে ওরা ভয় পাবে। খোলা জায়গাতেই ওরা আসে। শুধু যেখানে অনেক লোক, সেখানে আসতে ভয় পায়।’’ তাই ভোগ বিতরণ থেকে সান্ধ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নেই মিটবে বলে আশাবাদী তিনি।

পুজোর সংগঠনগুলি অনেক দিন আগেই একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে। ডেঙ্গি ঠেকাতে বিভিন্ন মণ্ডপ চত্বরে পুরসভাকে দিয়ে বিশেষ রাসায়নিক স্প্রে করানোর ব্যবস্থা করেছে তারা। একই ভাবে এ বার বাঁদর তাড়ানোর রণকৌশলও স্থির করা হচ্ছে বৈঠকে। কালীবাড়ির প্রবীণ কর্মকর্তা স্বপন ঘোষ বললেন, ‘‘বাঁদরদের ভয় দেখাতে ছররা বন্দুক হাতে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় শব্দ করে মিছিল করেছি। আশা করি, বন্দুকের আওয়াজে ওরা এ বার আসতে ভয় পাবে।’’

দিল্লি পুরসভা কী করছে? অরবিন্দ কেজরীবাল দিল্লি সরকারের মুখিয়া ঠিকই। কিন্তু দক্ষিণ দিল্লি পুরসভা এখনও বিজেপির হাতে। এলাকার বিজেপি সাংসদ মীনাক্ষি লেখি বলেন, ‘‘বাঁদর শুধু চিত্তরঞ্জন পার্কে নয়, গোটা দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। লুটিয়েন্স দিল্লিতে সাউথ ও নর্থ অ্যাভিনিউয়ে সাংসদদের পাড়াতেও এখন ওদের দৌরাত্ম্য প্রবল।’’ নর্থ ও সাউথ ব্লকে যে ভাবে বাঁদর তাড়াতে হনুমানদের দিয়ে টহল দেওয়ানো হয়, পুরসভার কেউ কেউ সেই কৌশল ব্যবহারের প্রস্তাব দিচ্ছেন। কিন্তু সেখানে একটা সমস্যা আছে। সরকারি অফিসে কর্মরত এই ‘মুখপোড়া বাহিনী’র সদস্যরা তো খাতায়-কলমে সরকারি কর্মচারি। এদের এক জন পালনকর্তা থাকেন। তিনি হনুমানদের পক্ষ থেকে বেতন গ্রহণ করেন। কর্মচারী হিসেবে হনুমানদের ক্রমিক সংখ্যা পর্যন্ত থাকে! কিন্তু সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সরকারি কর্মচারী এই হনুমানদের দিয়ে চিত্তরঞ্জন পার্কে বেসরকারি কাজ করানো যাবে না। অর্থাৎ লম্বা লেজের লড়াইয়ে চলবে না সরকারি-বেসরকারি ‘পিপিপি’ মডেল।

পশুপ্রেমী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মেনকা গাঁধী বলেন, ‘‘আসল সমস্যাটা হল বন কাটা। দিল্লির আশেপাশে আরাবল্লী পর্বতের গায়ে গায়ে জঙ্গল কেটে আবাসন হচ্ছে। এর ফলে বাঁদরেরা ওখান থেকে পালিয়ে শহরে ঢুকে পড়ছে। বিরক্ত না করে তাদের কী ভাবে নিরাপদে অন্যত্র সরানো যায়, ভাবতে হবে। মনে রাখবেন, আপনারা যেমন ওদের নিয়ে বিরক্ত, ওরাও আপনাদের নিয়ে বিরক্ত।’’

বিদেশমন্ত্রী থাকাকালীন প্রণব মুখোপাধ্যায় এক বার তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনিকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, রাজধানী লাগোয়া বনাঞ্চলগুলিতে ফলের গাছ লাগানো হোক। তা হলে পর্যাপ্ত খাবার পেয়ে বনেই সুন্দর থাকবে বন্যরা। কিন্তু সেই প্রস্তাব আর বাস্তবায়িত হয়নি। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের সম্ভাবনা নিয়ে চর্চা চলছে আজও।

রামায়ণ বলে, রাবণকে বধ করতে দুর্গাপুজো করেছিলেন রাম। বাঁদর সেনা প্রাণপণ লড়ে যুদ্ধে জিতিয়েছিল তাঁকে। কিন্তু দিল্লির বাঙালি মহল্লায় কার্যত ‘সেমসাইড’-এর আশঙ্কা। হানাদারেরা সে কথা বুঝলে তো! দুর্গা দুর্গা!

অন্য বিষয়গুলি:

monkeys bengalis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy