প্রতীকী চিত্র।
ভিডিয়োকনের কাছে স্টেট ব্যাঙ্ক, আইডিবিআই-সহ একগুচ্ছ ব্যাঙ্কের পাওনা ছিল প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা। ঋণ শোধ করতে না পারায় ব্যাঙ্ক কর্তারা ভিডিয়োকনকে দেউলিয়া ঘোষণা করে, তা বেচে দিয়ে টাকা উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন। শিল্পপতি অনিল আগরওয়ালের বেদান্ত গোষ্ঠী ২,৯০০ কোটি টাকায় ভিডিয়োকন কিনে নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। ৪২ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হলেও ব্যাঙ্ক কর্তারা তাতেই রাজি।
শিবা ইন্ড্রাস্ট্রিজের কাছে আইডিবিআই-সহ একগুচ্ছ ব্যাঙ্কের প্রায় ৪,৮৬৩ কোটি টাকা বকেয়া ছিল। পাওনা আদায়, ধার শোধ নিয়ে বহুদিনের টানাপড়েনের পরে সংস্থার মালিক সি শিবশঙ্করণ জানিয়েছেন, ব্যাঙ্ক যদি নিজের দাবিদাওয়া ছেড়ে দেয়, তা হলে তিনি ৩১৮ কোটি টাকা মিটিয়ে দিতে রাজি। তার মধ্যে আপাতত দেওয়া হবে ৫ কোটি টাকা। বাকিটা ছয় মাসের মধ্যে। ব্যাঙ্ক কর্তারা ৯৩ শতাংশের বেশি পাওনার দাবি ছেড়ে দিতে রাজি হয়ে গিয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদী সরকার দেউলিয়া বিধি এনে দাবি এনে দাবি করেছিল, যে সব ঋণখেলাপি সংস্থা ব্যাঙ্কের থেকে ঋণ নিয়েও শোধ করছে না বা করতে পারছে না, তাদের দেউলিয়া ঘোষণা করে দেওয়ার দাবি নিয়ে ব্যাঙ্কগুলি আদালতে যাবে। তার পরে ওই সংস্থা নিলামে তুলে বকেয়া পাওনা উদ্ধার করতে পারবে। কিন্তু মোদী সরকারের সেই দাবি ছিল নেহাতই কাগজেকমলে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দেউলিয়া বিধি প্রয়োগ করে ব্যাঙ্কগুলি গড়ে মাত্র ২০ শতাংশ বকেয়া উদ্ধার করতে পারছে। ২০১৭-য় দেউলিয়া বিধি চালু হওয়ার পর থেকে পরিসংখ্যান বলছে, গত চার বছরে ব্যাঙ্কগুলিকে বকেয়া পাওনার ৮০ শতাংশ দাবিই ছেড়ে দিতে হয়েছে। কোথাও বকেয়ার মাত্র ১ শতাংশ, কোথাও ৫ শতাংশ উদ্ধার হয়েছে!
এই পরিসংখ্যানই এ বার অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের চিন্তায় ফেলেছে। কারণ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির বকেয়া ঋণ শোধ না হলে ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়বে। দাওয়াই হিসেবে তখন কেন্দ্রকেই নতুন পুঁজি জোগাতে হবে। মোদী সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা কমিয়ে ব্যাঙ্ক বিলগ্নিকরণের পথেও হাঁটতে চাইছে। কিন্তু ব্যাঙ্কের আর্থিক স্বাস্থ্য মজবুত না হলে বিলগ্নিকরণ থেকেও বেশি আয় হবে না।
কেন এত বিপুল পরিমাণ বকেয়া ছেড়ে দিতে রাজি হচ্ছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তারা?
অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক পরিষেবা দফতর সূত্রের ব্যাখ্যা, এ ছাড়া উপায় নেই। না হলে ওইটুকও মিলবে না। ভিডিয়োকনের ক্ষেত্রেই যেমন বেদান্ত গোষ্ঠী সর্বোচ্চ ২,৯০০ কোটি টাকা দিতে রাজি হয়েছে। কোনও ক্রেতা না মিললে, ভিডিয়োকনের সম্পত্তি বেচে ওর থেকেও কম টাকা আয় হত। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১-এর জানুয়ারি থেকে এ বছর মার্চ পর্যন্ত ২৯টি দেউলিয়ার মামলার সমাধান হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলি তাদের পাওনা ১৭,৩৮৯ কোটি টাকার মধ্যে মাত্র ৪,৬০০ কোটি টাকা উদ্ধার করতে পেরেছে। দেউলিয়া বিধি চালুর পর থেকে ২০২১-এর মার্চ পর্যন্ত ৩৪৮টি দেউলিয়ার মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। ব্যাঙ্কগুলি ঋণখেলাপি সংস্থার থেকে পাওনার মাত্র ৪০ শতাংশ অর্থ উদ্ধার করতে পেরেছে। মোট ৫.১৬ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে প্রায় ৩.১ লক্ষ কোটি টাকার দাবি ছেড়ে দিতে হয়েছে।
অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার দাবি, “একদিক থেকে দেউলিয়া বিধির সাফল্য হল, আগে এর থেকেও কম টাকা উদ্ধার হত। দেউলিয়া বিধি চালুর আগে ব্যাঙ্কগুলি ঋণখেলাপিদের থেকে ২৬ শতাংশ টাকা উদ্ধার করতে পারত। আইনি পথে ঋণখেলাপি সংস্থা বন্ধ করিয়ে, তা উদ্ধার করতেও চার বছর লেগে যেত। দেউলিয়া বিধিতে অন্তত সময় কম লাগছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy