ধৃত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক দেবেন্দ্র শর্মা। ছবি: সংগৃহীত।
কতগুলো খুন করেছেন গুনতে গিয়ে বার বার গুলিয়ে ফেলছিলেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক দেবেন্দ্র শর্মা। বার বার ৫০-এ গিয়েই থেমে যাচ্ছিলেন তিনি। অনেক মনে করার চেষ্টা করেও শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়ে পুলিশকে জানান, এর পরে আর কতগুলো খুন করেছেন সেই সংখ্যাটাই নাকি মনে করতে পারছেন না! বহু খুনে অভিযুক্ত সেই দেবেন্দ্রকেই বুধবার দিল্লির বাপরোলা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের ধারণা, ১০০টিরও বেশি খুন করেছেন দেবেন্দ্র।
জয়পুরের সেন্ট্রাল জেলে ১৬ বছর কারাদণ্ডের পর এ বছরের জানুয়ারিতে ২০ দিনের জন্য প্যারোলে ছাড়া পেয়েছিলেন উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ের বাসিন্দা দেবেন্দ্র। দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, প্যারোলের সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সেন্ট্রাল জেলে না ফিরে নিজেরই গ্রামের বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলেন। গোপন সূত্রে পুলিশ দেবেন্দ্রর ঠিকানা পায়। বুধবারই সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশের অপরাধ দমন শাখা।
দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) রাকেশ পাওয়েরিয়া বলেন, “মার্চ পর্যন্ত গ্রামের বাড়িতেই ছিলেন দেবেন্দ্র। তার পর সেখান থেকে দিল্লির মোহন গার্ডেন এলাকায় এক পরিচিতের বাড়ি গিয়ে ওঠেন। পরে সেখান থেকে বাপরোলা চলে যান।” পাওয়েরিয়া আরও জানিয়েছেন, বাপরোলাতে দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় এক বিধবাকে বিয়ে করে নতুন ভাবে জীবন শুরু করেছিলেন। যাঁকে বিয়ে করেছেন, সেই মহিলা দেবেন্দ্রর অপরাধ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, এই বাপরোলাতেই থাকাকালীন জমি-বাড়ির দালালি শুরু করেন। সম্প্রতি কনট প্লেসে মার্শাল হাউস বিক্রির জন্য জয়পুরে এক গ্রাহকের সঙ্গে চুক্তিও হয়ে গিয়েছিল তাঁর।
চিকিৎসক থেকে কী ভাবে এক জন পেশাদার খুনি হয়ে উঠলেন, দেবেন্দ্রর সেই কাহিনি তাবড় ক্রাইম থ্রিলারকেও হার মানাবে।
বিহারের সিওয়ান থেকে ডাক্তারি পাশ করে সোজা রাজস্থানের জয়পুরে চলে যান দেবেন্দ্র। সালটা ১৯৮৪। সেখানে গিয়ে ক্লিনিক খোলেন তিনি। ১৯৯২-তে গ্যাসের ডিলারশিপ নেওয়ার জন্য ১১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করেন। কিন্তু সে ব্যবসায় চোট খান। এর পরই চরম আর্থিক সঙ্কট নেমে আসে তাঁর জীবনে। পুলিশ সূত্রে খবর, টাকা উপার্জনের জন্য এর পরই অপরাধের রাস্তা বেছে নেন দেবেন্দ্র। ১৯৯৪-তে আন্তঃরাজ্য কিডনি পাচারের কাজে নামেন। এই চক্রটি পরিচালনা হত মূলত জয়পুর, বল্লভগড় এবং গুরুগ্রাম থেকে।
আরও পড়ুন: সুস্থ ১০ লক্ষাধিক, দেশে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৫২ হাজার
১৯৯৪-২০০৮ পর্যন্ত ১২৫ জনেরও বেশি মানুষের কিডনি অস্ত্রোপচার করে পাচার করেছেন। প্রতিটি কাজের জন্য ৫-৭ লক্ষ টাকা পেতেন দেবেন্দ্র। এই কাজের পাশাপাশি ১৯৯৫-তে আলিগড়ের ছড়া গ্রামে ভুয়ো গ্যাস এজেন্সি খোলেন তিনি। ২০০১-এ উত্তরপ্রদেশেরই আমরোহাতে আরও একটি ভুয়ো গ্যাস এজেন্সি খোলেন। সেই অভিযোগে গ্রেফতারও হয়েছিলেন দেবেন্দ্র। সেই এজেন্সি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে ফের জয়পুরে গিয়ে ক্লিনিক শুরু করেন। সালটা ২০০৩।
পুলিশ জানিয়েছে, ক্লিনিক চালানোর পাশাপাশি কিডনি পাচারের কাজ করে বেশ আর্থিক দিক থেকে বেশ ফুলে-ফেঁপে উঠেছিলেন দেবেন্দ্র। এতেও ক্ষান্ত হননি। পরিকল্পিত ভাবে অপহরণ এবং খুন করার কাজে নেমে পড়েন। ইতিমধ্যেই তাঁকে এ কাজে সাহায্য করার জন্য বেশ কয়েক জন সঙ্গী জুটিয়ে ফেলেছিলেন দেবেন্দ্র।
পুলিশ জানিয়েছে, দেবেন্দ্রর খুনের ঠিকানা ছিল আলিগড়। সঙ্গীদের নিয়ে ট্যাক্সি ভাড়া করে আলিগড়ে নিয়ে আসতেন। তার পর নির্জন জায়গায় চালকদের খুন করে তাঁদের দেহ লোপাট করার জন্য কাসগঞ্জের হাজরা খালে ফেলে দিতেন কুমিরের খাদ্য হিসেবে। তার পর সেই ট্যাক্সিগুলোকে কাসগঞ্জেরই কোনও গ্রাহকের কাছে ২০-২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিতেন। শুধু তাই নয়, এলপিজি গ্যাসবোঝাই লরি ছিনতাই করে সেই গ্যাসগুলো নিজের এজেন্সি থেকে বিক্রি করতেন। লরিগুলোকে নির্জন জায়গায় ফেলে আসতেন দেবেন্দ্র ও তাঁর সঙ্গীরা।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, বেশ কয়েকটি অপরাধের জন্য গ্রেফতারও হয়েছিলেন দেবেন্দ্র। পরে ছাড়াও পেয়ে যান। কিন্তু ২০০৪-এ কিডনি পাচারের অভিযোগে জয়পুরের বেশ কয়েক জন চিকিৎসকের সঙ্গে দেবেন্দ্রও গ্রেফতার হন। বুধবার গ্রেফতার হওয়ার পর পুরো কাহিনি সামনে আসে। পুলিশের দাবি, জেরায় দেবেন্দ্র তাদের জানিয়েছে, ২০০২-০৪ সালের মধ্যে ৫০টিরও বেশি খুন করেছেন, কিন্তু সঠিক সংখ্যাটা মনে করতে পারছেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy