—ফাইল চিত্র।
রামমন্দির প্রসঙ্গকে সে ভাবে লোকসভা ভোটের অস্ত্র করেননি নরেন্দ্র মোদী। আরএসএস-প্রধান মোহন ভাগবত ভোটের সময় রামমন্দির আন্দোলনে বিরতি টানার কথাও ঘোষণা করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্ট আজ অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের পক্ষেই রায় দিল। বিজেপির এতে লাভ না ক্ষতি? এ বার তাদের লক্ষ্য কী হবে?
রায় ঘোষণার সময় করতারপুর করিডর উদ্বোধনে ব্যস্ত ছিলেন মোদী। ফাঁক পেয়ে টুইট করলেন, ‘‘রায় কারও জয় বা পরাজয় নয়। রামভক্তি হোক বা রহিম-ভক্তি, রাষ্ট্রভক্তিকেই শক্ত করতে হবে।’’ দিল্লি ফিরেই সিদ্ধান্ত নিলেন, ফের আসবেন টিভির পর্দায়। জাতির উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিতে। আর সেখানেই স্পষ্ট করলেন, গেরুয়া শিবিরের নতুন লক্ষ্য। গত কয়েক দিন ধরেই মুসলিমদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন আরএসএসের শীর্ষ নেতারা। আজ ইশারায় সেই মুসলিমদের হাত ধরেই হিন্দুদের এগোতে বললেন প্রধানমন্ত্রী।
বিজেপি শিবির অনেক দিন ধরেই বলছিল, আগের মতো আর রামমন্দির নিয়ে আবেগ কোথায়? থাকলে তো ভোটেই অস্ত্র হত। বিজেপিকে রামমন্দির নিয়ে রাজনীতি না-করতে বলছে কংগ্রেস। এক অর্থে বিজেপি সে রাজনীতি তো আগেই বর্জন করেছে। কিন্তু সেই কংগ্রেসই এখন মন্দির নির্মাণের পক্ষে বলছে। আর বিজেপি সংখ্যালঘুর মন জয় করে নতুন জমির সন্ধানে নামছে। অযোধ্যা রায়কে সামনে রেখে সেই অঙ্কই কষা হচ্ছে। এতে সম্প্রীতিও থাকে, বিজেপির ভোট পরিসরও বাড়ে। আবার একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলেও কদর বাড়ে প্রধানমন্ত্রীর।
বিজেপি বলছে, জাতির উদ্দেশ্যে বক্তৃতায় এই সব ক’টি বিষয়ই আসলে স্পষ্ট করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী বলেন, ‘‘৯ নভেম্বরই বার্লিনের দেওয়াল ভেঙে দুই বিপরীত বিচার ধারা একজোট হওয়ার পণ করেছিল। আজ ৯ নভেম্বর যে করতারপুর করিডর খুলে গেল, তাতে ভারত-পাকিস্তান দু’দেশেরই সহযোগ রয়েছে। অযোধ্যার রায়ও আমাদের একসঙ্গে এগোনোর শিক্ষা দিচ্ছে। আজকের ভারত যুক্ত করার, মিলেমিশে বাঁচার। দুনিয়া আজ জেনে গেল, ভারতের গণতন্ত্র কত শক্তিশালী। বিবিধতায় ঐক্যের ছবি দেখল বিশ্ব। গর্বের বিষয়।’’
মুসলিম যুবক, ধর্মগুরু, পেশাদারদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার প্রক্রিয়া গত কয়েক দিন ধরেই শুরু করেছে আরএসএস। যার আয়োজনের নেপথ্যে ছিল মোদী সরকারই। মোদী এ দিন বললেন, ‘‘কারও মনে কোথাও কোনও কটু ভাব থাকলে আজ তিলাঞ্জলি দেওয়ার দিন। নতুন ভারতে ভয়, কটুতা, নেতিবাচক কিছুর স্থান নেই। নতুন প্রজন্মকে ‘নতুন ভারত’ নির্মাণে সামিল হতে হবে। ‘সবকা বিশ্বাস’ অর্জনের নীতিতে অটল থেকে খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের সঙ্গে চলতে গিয়ে কেউ পিছিয়ে পড়ে নেই তো?’’ প্রধানমন্ত্রী এরই সঙ্গে আগামিকাল ইদের শুভেচ্ছাও দিলেন।
ঘটনাচক্রে সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত থেকে শুরু করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতারাও আজ একই সুরে বলেছেন, এই রায়কে কারও জয়-পরাজয়ের দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়। অতীতের সব কথা ভুলে মিলেমিশে রামজন্মভূমির উপর মন্দির তৈরিকেই কর্তব্য বলে ধরতে হবে সকলকে। আগের ঘোষণা মাফিক আজ কোনও বিজয়-উৎসবও করতে দেয়নি সঙ্ঘ পরিবার। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাংবাদিক বৈঠকেও শুধু পাঁচটি প্রদীপ জ্বালানো হয়েছে।
তবে কি রামমন্দির নিয়ে ধর্মীয় আস্থা তথা বিশ্বাসের রাজনীতিতে ইতি টানল গেরুয়া শিবির? ভবিষ্যতে কি আর কাশী-মথুরা নিয়ে নতুন কোনও আন্দোলন করবে না সঙ্ঘ?
ভাগবতের জবাব, ‘‘আরএসএস আন্দোলন করে না। মানুষ গঠনের কাজ করে।’’ আর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কার্যনির্বাহী সভাপতি অলোক কুমার বলছেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে আজ মন্দির নির্মাণের বাধা দূর হয়েছে। কিন্তু এখন রামমন্দির নির্মাণই আমাদের মূল লক্ষ্য। বাকি বিষয়ে মন দেওয়ার বিন্দুমাত্র সময় নেই।’’ অযোধ্যায় রামজন্মভূমির অধিকার পাওয়ার পর সঙ্ঘ পরিবারের একাংশের ধারণা, হিন্দুরা এমনিতেই নাগালে। বিজেপির নতুন জমি মুসলিম মন। গেরুয়া শিবিরের পরের আন্দোলনে বিরতি সম্ভবত সে কারণেই।
প্রশ্ন হল, এই বিরতি কি সাময়িক? রাজনাথ সিংহ কিন্তু এ দিনই ঘোষণা করে দিয়েছেন, তাঁদের পরের লক্ষ্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy