মুম্বইয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস। বুধবার। পিটিআই
বুধবার সকালে মুম্বইয়ের তাজ হোটেলে দাঁড়িয়ে ২৬/১১-এর স্মৃতিচারণ করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তীব্র বা্র্তা দিতে দেখা গেল রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসকে। বারবার জানালেন, “সন্ত্রাসবাদ সর্বার্থেই এক দানব।” আর তাঁর এই বার্তার কয়েক ঘন্টা আগে রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক জঙ্গি তালিকায় লস্কর ই তইবা-র শাহিদ মামুদকে অর্ন্তভুক্ত করতে বাধা দিল চিন। ভারত এবং আমেরিকা যৌথ ভাবে প্রস্তাব এনেছিল, মামুদকে রাষ্ট্রপুঞ্জে আন্তর্জাতিক জঙ্গির তকমা দিতে। কিন্তু সাম্প্রতিক অতীতে আরও তিন বারের মতো এ বারেও সেই প্রস্তাবে জল ঢালল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য চিন।
এর আগে ২০১৬ সালে আমেরিকার তরফে লস্কর জঙ্গি মামুদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সেই সময়ে আমেরিকা জানায়, মামুদ এবং আরও এক লস্কর নেতা জঙ্গি সংগঠনের অর্থের জোগান সচল রাখতে একাধিক বেআইনি কাজের সঙ্গে যুক্ত। এর পরই ভারতও রাষ্ট্রপুঞ্জে শাহিদ মামুদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে ঘোষণার দাবি জানায়। কিন্তু একাধিক বার সেই প্রস্তাবে বাধা দেয় চিন। ইতিপূর্বে মৌলানা মাসুদ আজ়হারের মতো জঙ্গিদেরও আন্তর্জাতিক জঙ্গি হিসেবে তালিকাভুক্তিতে বাধা দিয়েছে শি জিনপিংয়ের দেশ।
সব মিলিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আজ ভারতে জঙ্গি সন্ত্রাসের এক সময়ের রণক্ষেত্র (মুম্বইয়ের তাজ হোটেল) থেকে যত কঠিন বার্তাই দিন, নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার না হলে এ ব্যাপারে তাঁর হাত পা বাঁধা-- এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক শিবির। কূটনীতিকদের মতে, পরিস্থিতি খুবই জটিল। ভূকৌশলগত ক্ষেত্রে আমেরিকা তথা পশ্চিমের সঙ্গে সংঘাত বাড়ছে চিনের। ভারতের সঙ্গেও চিনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সংঘর্ষময়। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের মতো কিছু দেশের পাশে দাঁড়়িয়ে নিজেদের ক্ষমতার পরিধি আরও বৃদ্ধি করতে চাইছে বেজিং। বারবার ভারতের এবং আমেরিকার আনা প্রস্তাবকে কার্যকর করতে ব্যর্থ হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদ।
আজ গুতেরেস বলেন, “কোনও নীতি, মত, আদর্শ, ধর্ম, কারণ দিয়ে সন্ত্রাসবাদকে ব্যাখ্যা করা চলে না। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইকে বিশ্বের অগ্রাধিকার দিয়ে দেখা উচিত।” পাশাপাশি সহিংস চরমপন্থা নিয়েও সরব হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বলেছেন, “বিন্দুমাত্র দ্বিধা ছাড়াই পুরোদমে চরমপন্থার মোকাবিলা করা প্রয়োজন। বৈচিত্রের মধ্যেই একে অন্যের সহাবস্থান প্রয়োজন।” সাউথ ব্লকের বক্তব্য, এই কথাগুলি কথা হয়েই রয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতির বাস্তব মঞ্চে, ভিটো দিয়ে পাক জঙ্গিদের তালিকামুক্ত করে রাখছে চিন। ভারত দীর্ঘদিন ধরে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের শিকার। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যের মর্যাদা না পাওয়া পর্যন্ত ভারত এই নিয়ে কূটনৈতিক স্তরে লড়াইটা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারছে না।
সমস্যার আরও একটি দিকও উঠে আসছে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায়। সেটি হল, আমেরিকার পাকিস্তান প্রশ্নে দ্বিচারিতা বরাবরের মতো এখনও একই ভাবে বিদ্যমান। এক দিকে আমেরিকা করাচির এই লস্কর জঙ্গি শাহিদ মামুদকে রাষ্ট্রপুঞ্জের লাল তালিকায় তুলতে ভারতের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তৎপর। আবার সেই সঙ্গেই হোয়াইট হাউস থেকে ক্ষেত্র বিশেষে পাকিস্তানকে শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে। আমেরিকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মাসুদ খানের সঙ্গে আমেরিকার বিদেশ দফতরের এক কর্তা ডেরেক চোলের বৈঠকের পরে আমেরিকান বিদেশ দফতরের মুখপাত্র বেদান্ত পটেল সাংবাদিকদের বলেন, “পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতাকে মর্যাদা দেয় আমেরিকা। পাশাপাশি এটাও আমেরিকা মনে করে যে পরমাণু অস্ত্র নিরাপদে রাখার বিষয়ে পাকিস্তানের উপরে ভরসা করা যায়।” কিন্তু এই মন্তব্যের কিছু আগেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই বিষয়টি নিয়েই (পরমাণু অস্ত্র) ইসলামাবাদের ভূমিকায় সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy