স্বামী, শাশুড়িকে খুনের পর দেহ টুকরো করেন বন্দনা, এমনই অভিযোগ উঠেছে। ছবি সংগৃহীত।
যে বাড়িতে স্বামীকে খুন করেছিলেন, সেখানেই ঘটা করে সত্যনারায়ণ পুজো করেছিলেন বন্দনা কলিতা। অসমে স্বামী এবং শাশুড়িকে খুনের ঘটনায় বন্দনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তদন্তে নেমে এমন তথ্যই হাতে পেয়েছে পুলিশ। স্বামী এবং শাশুড়িকে খুনের পর দেহ টুকরো করে দেহাংশগুলি মেঘালয়ের জঙ্গলে ফেলে দেন বলে অভিযোগ উঠেছে বন্দনার বিরুদ্ধে। এই কাজে তাঁকে সাহায্য করেছিলেন বন্দনার প্রেমিক ধাঁতি কলিতা এবং বন্ধু অরূপ দাস। দিল্লিতে শ্রদ্ধা ওয়ালকর হত্যাকাণ্ড ঘিরে চর্চার মধ্যে অসমে এই খুনের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে সোমবার।
পুলিশ সূত্রে খবর, ৩২ বছরের বন্দনা পেশায় জিম প্রশিক্ষক। ঠান্ডা মাথায় প্রথমে শাশুড়ি শঙ্করী দে এবং পরে স্বামী অমরজ্যোতি দে’তে খুন করেন বলে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে। ধাঁতি নামে যুবকের সঙ্গে বন্দনার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক ছিল। সেই কারণেই খুন কি না খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
গত ২৬ জুলাই গুয়াহাটির চাঁদমারি এলাকায় বন্দনার শাশুড়ি শঙ্করীকে প্রথমে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সেখানে ২ কামরার ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন শঙ্করী। গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার দিগন্ত বোরা জানিয়েছেন, বন্দনা এবং অরূপ প্রথমে বালিশ চাপা দিয়ে শঙ্করীর শ্বাসরোধ করেন। তার পর রোলিং পিন দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। শঙ্করীর মৃত্যুর পর তাঁর দেহ ৫ টুকরো করে পলিথিনের ব্যাগে ভরা হয়। খুনের সময় বাড়ির বাইরে পাহারা দিচ্ছিলেন ধাঁতি। এর পর শঙ্করীর দেহাংশগুলি ধাঁতির গাড়িতে তোলা হয়। পেশায় চালক ধাঁতি এর পর ২৭ জুলাই সেই দেহাংশগুলি মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে ভোররাতে ফেলে দেন। ইতিমধ্যেই শঙ্করীর দেহাংশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে এখনও বন্দনার স্বামী অমরজ্যোতির দেহাংশের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের ১৭ অগস্ট স্বামী অমরজ্যোতিকে খুন করেছিলেন বন্দনা। নারেঙ্গিতে তাঁরা থাকতেন। সেখানে ধাঁতি এবং অরূপের সাহায্যে লোহার রড দিয়ে স্বামীকে খুন করেন বলে অভিযোগ বন্দনার বিরুদ্ধে। খুনের পর অমরজ্যোতির দেহও টুকরো করা হয়। তার পর তা লোপাট করেন অভিযুক্তরা। তবে খুনের পর দেহ টুকরো করে ফ্রিজে রাখেননি বন্দনা। প্রথমে পুলিশ জানিয়েছিল, দেহ টুকরো করে ফ্রিজে রাখা হয়েছিল।
নিজেই স্বামী এবং শাশুড়ির নামে নুনমাটি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি দায়ের করেন বন্দনা। তবে প্রথমে এই ঘটনায় তেমন কিছুই আঁচ করতে পারেনি পুলিশ। গত ২১ নভেম্বর বন্দনার শাশুড়ির এক আত্মীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন যে, শঙ্করীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা হয়েছে। এর পর আবার পুলিশের দ্বারস্থ হন বন্দনা। তিনি অভিযোগ কেন যে, তাঁর শাশুড়ির ভাই ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়েছেন। এর পরই সন্দেহ হয় পুলিশের। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ কমিশনারের দফতরে গিয়ে তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চান বন্দনা। পরে তদন্তকারীরা জানতে পারেন যে, শঙ্করীর অ্যাকাউন্ট থেকে বন্দনাই টাকা তুলেছেন। পরে গ্রেফতার করা হয় বন্দনাকে। তাঁর প্রেমিক ধাঁতি এবং বন্ধু অরূপকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
খুনের পর স্বাভাবিক ভাবেই জীবন কাটাচ্ছিলেন বন্দনা। নারেঙ্গির যে বাড়িতে স্বামীকে খুন করেছিলেন, সেখানেই গত অক্টোবর মাসে সত্যনারায়ণের পুজো করেছিলেন বন্দনা। পুজোয় যোগ দিয়েছিলেন বন্দনার বাবা-মা। এমনকি, ওই বাড়িতে নির্মাণকাজও করান তিনি। এই তথ্যও হাতে পেয়েছে পুলিশ।
বন্দনার কীর্তি প্রকাশ্যে আসার পর ভেঙে পড়েছেন তাঁর বাবা কামিনি কলিতা। বলেছেন, ‘‘আমি আমার খুনি মেয়েকে চাই না।’’ পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, অমরজ্যোতি মাদকাসক্ত ছিলেন। তাঁর অনেক বান্ধবীও ছিল। সেই কারণেই তাঁদের ১২ বছরের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি বেধেছিল। নিজের মায়ের সঙ্গেও অমরজ্যোতির সম্পর্ক ভাল ছিল না। ঠিক কী কারণে খুন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy