Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Nikki Yadav Murder Case

শ্মশানে নিক্কিকে খুন করে ৩৩ মিনিট অপেক্ষা! গাড়ির সামনের আসনে বসিয়ে দেহ ধাবায় নিয়ে যান সাহিল

১৫ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি সাহিলকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নিমাণে বেরিয়েছিল পুলিশ। নিক্কিকে নিয়ে কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন সাহিল, সব জায়গার রেকি করেন তদন্তকারীরা। তখন পুলিশকে এ কথা জানিয়েছেন সাহিল।

নিক্কিকে খুনের অভিযোগে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন সাহিল গহলৌত।

নিক্কিকে খুনের অভিযোগে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন সাহিল গহলৌত। ফাইল চিত্র।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:৫৪
Share: Save:

নিক্কি যাদবকে খুন করার জন্য শ্মশানকেই বেছে নিয়েছিলেন সাহিল গহলৌত। দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় তাদের কাছে এমনটাই দাবি করেছেন খোদ অভিযুক্তই।

দিল্লির সবচেয়ে বড় শ্মশান নিগমবোধ ঘাট। দিনে ৭০-৮০টি মৃতদেহ দাহ করা হয় এখানে। এই ঘাটে গাড়ি রাখার জন্য বড় জায়গাও আছে। দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, অনেক পরিবারের মহিলা দাহকাজের সময় শ্মশানের ভিতরে না ঢুকে ওই পার্কিংয়েই গাড়ির ভিতরে বসে অপেক্ষা করেন। বেলা বাড়তেই শ্মশানে ভিড় বাড়তে থাকে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি নিক্কিকে ওই শ্মশানঘাটে নিয়ে যান সাহিল। গত ১৫ এবং ১৬ ফেব্রুয়ারি সাহিলকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নিমাণে বেরিয়েছিল পুলিশ। নিক্কিকে নিয়ে কোথায় কোথায় গিয়েছিলেন সাহিল, সব জায়গার রেকি করেন তদন্তকারীরা।

১০ ফেব্রুয়ারি

জেরায় পুলিশের কাছে সাহিল দাবি করেছিলেন, ১০ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরি গেটে সকাল ৯টায় নিক্কিকে খুন করেছিলেন। কিন্তু কাশ্মীরি গেটের মতো ব্যস্ত জায়গায় দিনের আলোয় কী ভাবে নিক্কিকে খুন করেছিলেন, তা নিয়ে সন্দেহ জাগে তদন্তকারীদের মনে। তার পরই তাঁরা সাহিলকে নিয়ে ঘটনার পুনর্নিমাণে বার হন। তখনই আসল ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। পুলিশ সূত্রে খবর, রেকি করার সময়ই সাহিল শ্মশানঘাটের কথা উল্লেখ করেন।

পুলিশ সূত্রে খবর, ১০ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরি গেটে নয়, নিগমবোধ শ্মশানঘাটে নিক্কিকে নিয়ে গিয়েছিলেন সাহিল। তখন সময় সকাল ৮টা ৫৭ মিনিট। শ্মশানের মূল গেট দিয়ে গাড়ি নিয়ে ঢুকে বাঁ দিকে পার্ক করান। নিক্কি সামনের আসনে বসে ছিলেন। গাড়িটি কালো কাচে ঢাকা ছিল। পার্কিংয়েও সাহিল এবং নিক্কির মধ্যে ঝামেলা হয়। তার পরই গাড়ির ডেটা কেবল দিয়ে নিক্কিকে শ্বাসরোধ করে মারেন বলে অভিযোগ। এর পর ৩৩ মিনিট ওই পার্কিংয়েই অপেক্ষা করেন সাহিল। সাড়ে ৯টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে শ্মশানঘাট থেকে বেরিয়ে যান। শ্মশানঘাটের এক নিরাপত্তরক্ষী পুলিশকে জানিয়েছেন, ১০ ফেব্রুয়ারি কালো কাচে ঢাকা সাহিলের ওই গাড়িটিকে দেখেছিলেন পার্কিংয়ের জায়গায়। সামনে এক জন মহিলাকেও বসে থাকতে দেখেছিলেন। ওই নিরাপত্তারক্ষীর দাবি, তিনি ভেবেছিলেন হয়তো দাহকাজে এসেছেন ওই মহিলা। শ্মশানে না ঢুকে গাড়িতেই অপেক্ষা করছেন।

শ্মশানে ৪৪টি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। ঘটনাচক্রে যে জায়গায় সাহিল গাড়ি পার্ক করেছিলেন, সেই জায়গাটা কোনও ক্যামেরার আওতায় ছিল না। সাহিল কখন শ্মশানে ঢুকেছেন, কখন বেরিয়েছেন, সব ফুটেজ পুলিশ পেয়েছে। কিন্তু ওই সময়ের কোনও ফুটেজ তাদের হাতে আসেনি বলে পুলিশের এক সূত্রের খবর। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সাড়ে ৯টায় শ্মশানঘাট থেকে বেরিয়ে সাহিল গাড়ি নিয়ে ৪৪ কিলোমিটার সফর করেন। শুধু তা-ই নয়, নিক্কিকে খুনের পর তাঁর দেহ গাড়ির সামনের আসনেই সিটবেল্ট দিয়ে বেঁধে রেখেছিলেন সাহিল, যাতে কারও সন্দেহ না হয়। সকাল ১১টা নাগাদ মিত্রাও গ্রামে পৌঁছন সাহিল। সেখান থেকে সোজা ধাবায় চলে যান গাড়ি নিয়ে।

১১-১২ ফেব্রুয়ারি

ওই আধিকারিক আরও জানিয়েছেন, এর পর ধাবাতেই গাড়ি রাখেন সাহিল। নিক্কির দেহ ডিকিতে ঢুকিয়ে রাখেন। তার পর বাড়ি চলে যান। জামাকাপড় বদলে বিয়ের অনুষ্ঠানে সামিল হন। বিয়ে সেরে রাতে বাড়ি ফেরেন। আত্মীয়স্বজন সকলে যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, ভোর সাড়ে ৩টের সময় অন্য একটি গাড়ি নিয়ে ধাবায় যান সাহিল। তার পর ধাবায় দাঁড় করিয়ে রাখা গাড়ির ডিকি থেকে নিক্কির দেহ বার করে ধাবার ভিতরে নিয়ে গিয়ে ফ্রিজের মধ্যে দেহ ঢুকিয়ে দেন। ফ্রিজের দরজা দেওয়ালের দিকে ঠেসে দেন যাতে দেহ বেরিয়ে না আসে। ১১ এবং ১২ ফেব্রুয়ারি দু’বার ধাবায় গিয়ে দেখে আসেন দেহ ঠিক জায়গায় আছে কি না।

পুলিশ জানিয়েছে, সাহিলের পরিকল্পনা ছিল বাড়ি থেকে আত্মীয়স্বজন চলে গেলেই বড় ব্যাগে ভরে দেহ পাচার করে দেবেন। কিন্তু সেই সুযোগ মিলছিল না। কারণ তাঁর সঙ্গে সব সময়ই কোনও না কোনও আত্মীয় থাকছিলেন।

১৩ ফেব্রুয়ারি

রাত ১০টায় রাজৌরি গার্ডেন ক্রাইম ব্রাঞ্চের ইনস্পেক্টর সতীশ কুমারের কাছে গোপন সূত্রে ফোন আসে। ওই সূত্র পুলিশের কাছে দাবি করে, তিনি সাহিল এবং নিক্কিকে চেনেন। তাঁরা স্বামী-স্ত্রী এ কথাও জানেন। কিন্তু সাহিলের বিয়ের কথা শুনে আশ্চর্য হন। তা ছাড়া বিয়ের কয়েক দিন আগে থেকেই নিক্কিকে সাহিলের সঙ্গে দেখতে পাননি বলেও জানান ওই সূত্র। এর পরই ইনস্পেক্টর তাঁর দলবল নিয়ে সাহিলের বাড়িতে তল্লাশি অভিযানে যান। কিন্তু সেই সময় সাহিল বাড়িতে ছিলেন না। এর পর ১৪ ফেব্রুয়ারি সাহিলের মোবাইলের টাওয়ারের অবস্থান চিহ্নিত করে পুলিশ। তার পর তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। চেপে ধরতেই গোটা ঘটনাটি পুলিশকে জানান সাহিল। তার পরই সাহিলকে নিয়ে ধাবায় পৌঁছে নিক্কির দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয় সাহিলকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Nikki Yadav Murder Case Delhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy