শীতের মরসুমে কলকাতার সেন্ট পল’স ক্যাথিড্রালে বাচ্চাদের নিয়ে হাজির মায়েরা। মাস্ক পরা নেই কারও মুখে। শুক্রবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
রবিবার কলকাতায় পুরভোট। কিন্তু করোনা সংক্রমণের নিরিখে দেশের যে ১৯টি জেলা কেন্দ্রের ‘উদ্বেগজনক’ তালিকায় রয়েছে, কলকাতা তার অন্যতম। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে ওমিক্রন স্ট্রেনের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। সংশ্লিষ্ট রোগী বালকটি সুস্থ হয়ে গেলেও পুরভোটের কারণে কলকাতায় নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। দিল্লির সতর্কবাণী, সব ধরনের সতর্কতা মেনে হোক পুরভোট। অন্যথায় বিপদ।
এই মুহূর্তে দেশে রাজ্যভিত্তিক অ্যাক্টিভ রোগীর সংখ্যার নিরিখে কেরল ও মহারাষ্ট্রের পরেই রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সারা ভারতের করোনা রোগীদের মধ্যে ৮.৬৯ শতাংশই পশ্চিমবঙ্গের। এর পাশাপাশি, যে ১৯টি জেলায় সংক্রমণের হার পাঁচ শতাংশের বেশি, তার মধ্যে কলকাতাও রয়েছে। মহানগরে সংক্রমণের হার ৫.৮০ শতাংশ। এই আবহে কলকাতায় পুরভোট হলে তাতে সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা যে বেড়ে যায়, ঘরোয়া ভাবে তা স্বীকার করছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, যে কোনও ধরনের ভিড়-জমায়েত ভাইরাসকে ছড়িয়ে পড়তেই সাহায্য করে। অতীতেও অধিকাংশ রাজ্যে নির্বাচনের পরে সংক্রমণের সূচক লাফিয়ে বাড়তে দেখা গিয়েছে। কলকাতাতেও যে এমন হবে না, তা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কেউই।
এই পরিস্থিতিতে আগাগোড়া কোভিড-বিধি পালন করাই রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথ বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুগ্মসচিব লব আগরওয়াল। সংক্রমণ রুখতে কলকাতাবাসীকে সব ধরনের সতর্কতা মেনে চলতে বলেছেন তিনি। লবের কথায়, ‘‘যে কোনও নির্বাচন করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। তার সঙ্গে পারিপার্শ্বিক কিছু বিষয়ও সংক্রমণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই সব স্তরে কোভিড বিধি মেনে চলা হচ্ছে কি না, তা নজরে রাখা খুব প্রয়োজন।’’ করোনা সংক্রমিতদের চিহ্নিতকরণ, রোগী যাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদের চিহ্নিত করা, তাঁদের স্বাস্থ্যের উপরে নিয়মিত নজরদারি, কোথাও সংক্রমণ বেশি ছড়িয়ে পড়লে সেই এলাকাটিকে ‘ক্লাস্টার’ হিসাবে চিহ্নিত করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে পরীক্ষা করার উপরে জোর দিয়েছেন ওই স্বাস্থ্যকর্তা। লব বলেন, ‘‘সংক্রমণ বৃদ্ধির পিছনে একাধিক কারণ থাকে। সবগুলিকে একসঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সংক্রমণ রোখা বেশ মুশকিলের।’’
পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘রাজ্যের সংক্রমণ মূলত শহরকেন্দ্রিক, যেখানে জনঘনত্ব ও বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের যাতায়াত অনেক বেশি। সেই ক্ষেত্রে কলকাতার সংক্রমণ খুব সাংঘাতিক বলা যায় না। যদিও এই বিষয়ে নজর রাখছি। আরও বেশি করোনা পরীক্ষা করা, সংক্রমিত ব্যক্তির আইসোলেশনের ব্যবস্থা করার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ স্বাস্থ্য দফতরের আরও একটি দাবি, কেন্দ্র যত জনকে কলকাতার বাসিন্দা বলে ধরছে, তাঁরা সবাই কিন্তু আদতে শহরের বাসিন্দা নন। কারণ কলকাতা-লাগোয়া উত্তর ২৪ পরগনারও বিস্তীর্ণ অঞ্চলের পিন কোড কলকাতার। সেটা দেখে হিসাব করলে কলকাতায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি হবে। আবার অনেকে শহরের বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা করাচ্ছেন। সেই রিপোর্টগুলিও কলকাতার আওতায় আনা ঠিক হবে না।
দেশে করোনার ওমিক্রন স্ট্রেনের সংক্রমণ ইতিমধ্যেই একশো ছড়িয়েছে। তা আগামী দিনে ভারতে সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউ ডেকে আনতে পারে বলেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। এ দিকে, বছর ঘুরলেই পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। ওমিক্রন যখন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, তখন ওই পরিস্থিতিতে বিধানসভা নির্বাচন করা যুক্তিসঙ্গত কি না, সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে জানতে চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। সূত্রের মতে, কমিশনকে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, অতীতে করোনা-আবহেই একাধিক রাজ্যে ভোট হয়েছে। সেই ভোটের সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রক যে নিয়ম-বিধি বেঁধে দিয়েছিল, তা মেনে চললে ভোট করাতে কোনও সমস্যা নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘অতীতে করোনার মধ্যে বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে মনোনয়ন জমা দেওয়া, বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রচার এমনকি জনসভায় কত লোক থাকবেন, সেই সংখ্যা কার্যত ঠিক করে দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও কমিশন। আগামী দিনে রাজনৈতিক দলগুলি কমিশনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেই নির্দেশিকা মেনে চললে ভোট করানোয় কোনও সমস্যা নেই।’’
কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলি কি সেই নির্দেশিকা মানবে? চলতি বছরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যে হয়ে যাওয়া বিধানসভা ভোটের অভিজ্ঞতা কিন্তু অন্য কথাই বলছে। অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন, কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করে মাদ্রাজ হাই কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘আপনাদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা হওয়া উচিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy