ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অন্যতম পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত তিনি। বিহার ক্যাডারের ওই আমলা কোভিডে আক্রান্ত পরিজনকে ভর্তি করতে এসে এমস হাসপাতালের চত্বরে আর পাঁচ জনের মতোই লাইনে দাঁড়িয়ে! প্রায় তিন-চার ঘণ্টা অপেক্ষার পরে শয্যা পেলেন তাঁর আত্মীয়া।
ছবি তোলা পেশা। তা করতে গিয়েই করোনা আক্রান্ত হন এক চিত্র সাংবাদিক। সকালে তিন ঘণ্টা দিল্লির এলএজেপি হাসপাতালে স্ট্রেচারে অপেক্ষা করেও অক্সিজেনযুক্ত শয্যা পাননি তিনি। অথচ পালস অক্সিমিটার যন্ত্রে ওই ব্যক্তির অক্সিজেনের মাত্রা তখন আশির ঘরে, যা দুশ্চিন্তার।
দিল্লি ও রাজধানী সংলগ্ন এলাকায় কারও রেমডেসিভিয়ার, কারও অক্সিজেনযুক্ত বেড, কারও অন্য কোনও জীবনদায়ী ওষুধ চেয়ে মোবাইলে জরুরি বার্তা আনাগোনা দিনভর চলছেই। কেবল দিল্লিতেই কাল আক্রান্ত হয়েছেন ২৫ হাজারের বেশি রোগী। নিজের পরিকাঠামোর সর্ব্বোচ্চ সীমায় এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে দিল্লি-গুরুগ্রাম-নয়ডা-গাজিয়াবাদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো।
সব মিলিয়ে করোনা রোগীদের ন্যূনতম পরিষেবার জন্য চরম হাহাকার দেখা দিয়েছে গোটা দিল্লি জুড়ে। রোগীর তুলনায় বেডের অভাব তো ছিলই, গোটা দেশের মতোই অক্সিজেন ও জীবনদায়ী ওষুধ, মূলত রেমডেসিভিয়ারের স্বল্পতাতেও ভুগছে গোটা দিল্লি ও রাজধানী সংলগ্ন এলাকা। দিল্লির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কার্যত ‘ক্রিটিকাল পয়েন্টে’ পৌঁছে যাওয়ায় আজ প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখে অবিলম্বে সাহায্য চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে কেজরীবাল জানিয়েছেন, ‘দিল্লির কোভিড পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কোভিড রোগীর জন্য উপযুক্ত শয্যা ও অক্সিজেন সরবরাহের প্রবল ঘাটতি তৈরি হয়েছে। আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব ছিল, দিল্লি সরকার তাই করেছে। কিন্তু এখন কেন্দ্রীয় সাহায্যের প্রয়োজন।’ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় হাসপাতালে সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার শয্যা রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র ১৮০০ কোভিড রোগীর জন্য সংরক্ষিত। কেজরীবাল চিঠিতে কেন্দ্রীয় হাসপাতালের অন্তত সাত হাজার শয্যা কোভিড রোগীদের জন্য সংরক্ষিত করার জন্য কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। একই সঙ্গে করোনা রোগীদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহের জন্যও আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
গত কাল দিল্লিতে সংক্রমিত হয়েছেন ২৫,৫০০ জন। আজ বিকেল পর্যন্ত সংক্রমিতের সংখ্যা ২৪,৩৭৫ জন। চিঠিতে কেজরীবাল বলেছেন, রাজ্যের হাতে থাকা হাসপাতালগুলির মোট ১৭,৬০৯টি কোভিড শয্যার মধ্যে খালি পড়ে রয়েছে মাত্র ৩,১৪৮টি। ৪,১৩৯টি আইসিইউ বেডের মধ্যে খালি রয়েছে মাত্র ৭৬টি। চিঠিতে কেজরীবালের দাবি, ফি দিন সংক্রমণের হার বাড়ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টায় সংক্রমণের হার ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশ হয়েছে। আপ শিবিরের মতে, এ ভাবে চললে আর কয়েক দিন পরে স্থানাভাবে নতুন রোগীকে ভর্তি করা অসম্ভব হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার বেশ কিছু অভিযোগ সামনে আসতে শুরু করেছে। সংক্রমণ যে হারে ছড়াচ্ছে, তাতে আগামী দিনে ঘরে ঘরে মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা পড়বেন। তাই পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করে অবিলম্বে কেন্দ্রের কাছে অন্তত হাজার খানেক আইসিইউ বেডের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন কেজরীবাল।
কেন্দ্রের সাহায্যের পাশাপাশি আগামী তিন থেকে চার দিনের মধ্যে যমুনা স্পোর্টস কমপ্লেক্স, বিভিন্ন সরকারি স্কুল, রাধাস্বামী সংসঙ্গ প্রতিষ্ঠানে সব মিলিয়ে প্রায় ছয় হাজার অক্সিজেনযুক্ত বেড চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি সরকার। একই সঙ্গে দিল্লির ১৪টি বেসরকারি হাসপাতালকে তাদের অন্তত সত্তর শতাংশ শয্যা কোভিড রোগীদের জন্য সংরক্ষিত করে রাখার নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি সরকার। শয্যা বাড়াতে একই সঙ্গে রেলওয়ে বোর্ডকে আনন্দবিহার ও শকুরবস্তি স্টেশনে দু’টি কোভিড কামরা দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে কেজরীবাল সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy