গান্ধীনগরের একটি সরকারি স্কুলে নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
আম আদমি পার্টির দাবি, অনুকরণ। আর বিজেপির দাবি, সরকারি শিক্ষাব্যবস্থার ভোল বদলাতে নেওয়া প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। দাবি পাল্টা দাবির মধ্যে অনেকেই মনে করছেন, যে ভাবে দিল্লির সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার সাফল্য নিয়ে গুজরাতে ভোটের আগে আপ নেতৃত্ব প্রচার চালিয়েছে, তাতে ভোট ঘোষণার প্রাক্কালে সরকারি শিক্ষা পরিকাঠামো সুদৃঢ় করতে দশ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে বাধ্য হয়েছে শাসক শিবির। সব ছেড়ে ছাত্রদের সঙ্গে একই বেঞ্চে বসে মনোযোগী পড়ুয়া হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে বাধ্য হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যে ভাবে এত দিন মাঝে মাধ্যেই সরকারি স্কুলে গিয়ে ক্লাসে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াকে।
ভোটের ঠিক মুখে গুজরাতবাসীর মন জয়ে টানা দু’দিন গুজরাতের জন্য একাধিক প্রকল্প ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়ে নিজ রাজ্যে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আজ গান্ধীনগরে ডিফেন্স এক্সপোর উদ্বোধন, বনসকান্ঠার দিসা-য় বায়ুসেনা ঘাঁটির শিলান্যাস করার পরে গুজরাতের সরকারি শিক্ষাব্যবস্থায় দশ হাজার কোটি বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত জানান প্রধানমন্ত্রী মোদী। ওই কাজে আর্থিক সহায়তা দেবে বিশ্ব ব্যাঙ্কও।
আজ ‘মিশন স্কুল অব এক্সেলেন্স’ প্রকল্পের ঘোষণার লক্ষ্যে গান্ধীনগরের একটি সরকারি স্কুলে পৌঁছে যান নরেন্দ্র মোদী। সেখানে একটি ক্লাসে প্রবেশ করে এক ছাত্রের পাশে বসে সে কী পড়াশুনো করছে তা জানতে চান তিনি। মোদীর ওই ছবির সঙ্গে সিসৌদিয়ার ক্লাসে পড়ুয়াদের সঙ্গে বসে থাকার একটি ছবি জুড়ে টুইট করেন কেজরীওয়াল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ওই ছবির কোলাজে কোনও মন্তব্য করেননি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী।
সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতিতে ওই অর্থের মাধ্যমে গুজরাতে পঞ্চাশ হাজার ক্লাসরুম, দেড় লক্ষ স্মার্ট ক্লাসরুম, কুড়ি হাজার কম্পিউটার রুম ও পাঁচ হাজার গবেষণাগার তৈরি হবে বলে জানান মোদী। প্রধানমন্ত্রী আজ সব রাজ্যকে এ ধরনের আধুনিক শিক্ষা পরিকাঠামো গড়ে তোলার জন্য আহ্বান করেন। যে প্রস্তাব লুফে নেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীওয়াল। তিনি টুইট করে বলেন, “পাঁচ বছরে দিল্লিতে শিক্ষা ব্যবস্থায় আমরা উল্লেখযোগ্য ভাল কাজ করেছি।। পাঁচ বছরে দিল্লির সমস্ত স্কুলকে আধুনিক মানে উত্তীর্ণ করতে সক্ষম হয়েছি। ঠিক এ ভাবেই পাঁচ বছরে পুরো দেশের স্কুলের চেহারা পাল্টে দেওয়া সম্ভব। আমার কাছে অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনি আমায় এ কাজের জন্য ব্যবহার করতে পারেন। আসুন একসঙ্গে কাজ করি।দেশের জন্য।”
কেজরীওয়াল ওই প্রস্তাব দিলেও, রাজনীতির অনেকের মতে, আসলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা বিশেষ করে খোদ প্রধানমন্ত্রীর রাজ্যের সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা যে বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে, তা বোঝাতে চেয়েছেন আপের ওই নেতা। খোদ মণীশ সিসৌদিয়া টুইট করেন, গুজরাতে বিজেপির ২৭ বছরের শাসনে ৪৮ হাজার স্কুলের মধ্যে ৩২ হাজারের হাল অত্যন্ত খারাপ। যার মধ্যে ১৮ হাজার স্কুলে পর্যাপ্ত ক্লাসঘর পর্যন্ত নেই। নেই শিক্ষক। এই সব স্কুলে নাম লেখানো এক কোটি পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। আপ নেতৃত্বের দাবি, শিক্ষা নিয়ে সরব হওয়ার পরেই এ নিয়ে টনক নড়েছে প্রধানমন্ত্রীর। শিক্ষা যে এখন নির্বাচনী প্রচারের অন্যতম একটি অঙ্গ হয়ে উঠেছে সে জন্য কৃতিত্ব তাঁদের দলের। যে কারণে বাধ্য হয়ে রাজ্যে তিন দশকের বিজেপি শাসন ও কেন্দ্রে প্রায় আট বছর শাসন করার পরেও শেষ প্রহরে এসে শিক্ষাখাতে বিনিয়োগ করতে বাধ্য হচ্ছেন শাসক শিবির।
সম্প্রতি প্রচারে এসে সৌরাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকারি স্কুল ঘুরে সেগুলির সঙ্গে দিল্লির সরকারি স্কুলের পরিকাঠামোর যে আকাশপাতাল পার্থক্য রয়েছে তা ভিডিয়োগ্রাফি করে প্রচার চালান দিল্লির শিক্ষামন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া। আপ শিবিরের মতে, এতে জনমানসে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে তা দূর করতেই শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় মাপের বিনিয়োগে করেছে সরকার।
দিল্লির আপ বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, “শিক্ষা ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ভাল। কিন্তু তা সরকারের শেষবেলায় কেন? আসলে এই সরকারের আপের ভাল কাজের সামনে চাপে পড়ে গিয়েছে। সেই কারণে যে কোনও ভাবে মণীশকে গ্রেফতারির ছক কষছে বিজেপি।” আজ গান্ধীনগরের স্কুলের ওই অনুষ্ঠানের পরে মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র পটেলকে সঙ্গে নিয়ে রাজকোট এলাকায় দীর্ঘ এলাকা রোড শো করেন মোদী। আগামিকাল রাজকোট-সহ সৌরাষ্ট্রের পরিকাঠামোগত উন্নতিতে একাধিক প্রকল্পের ঘোষণা করার কথা রয়েছে তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy