অমিত শাহকে খোলা চিঠি ইলতিজা জাভেদের। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মায়ের সঙ্গে দেখা হয়নি সপ্তাহ দুয়েক। গৃহবন্দি করা হয়েছে তাঁকেও। নিরাপত্তা বাহিনীর নজরদারিতে রাখা হয়েছে সর্ব ক্ষণ। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের কোনও উপায় নেই। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে খোলা চিঠি লিখলেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা জাভেদ।
উপত্যকায় ডাক যোগাযোগ বন্ধ। ইলতিজার দাবি, তাই তিনি একটি অডিয়ো রেকর্ডিং এবং খোলা চিঠি প্রকাশ করেছেন। তাতে উপত্যকার বিশেষ মর্যাদা বিলোপ করা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। ইলতিজার অভিযোগ, পশুর মতো খাঁচায় বন্দি করে রাখা হয়েছে কাশ্মীরিদের। কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের মানবাধিকার। এমনকি সংবাদমাধ্যমে মুখ খুললে তাঁকেও ফল ভুগতে হবে, এমন হুমকিও পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন ইলতিজা।
উপত্যকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে হলেও, রাজনীতিতে পা রাখেননি ইলতিজা। তা সত্ত্বেও দিন কয়েক আগে গৃহবন্দি করা হয় তাঁকে। তাঁকে কেন গৃহবন্দি করা হয়েছে, এ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও জবাব মেলেনি। তাই বৃহস্পতিবার সরাসরি অমিত শাহকেই খোলাচিঠি লেখেন ইলতিজা। তাতে লেখেন, ‘‘আমাকে কেন বন্দি করে রাখা হয়েছে, একাধিক বার তা জানার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাতে সফল হইনি। তাই চিঠি লেখা ছাড়া অন্য উপায় ছিল না। নিজের মৌলিক অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। আশা করি, তার জন্য নিশ্চয়ই এমন শাস্তি পেতে হচ্ছে না। এর উত্তর আপনি নিশ্চয়ই জানবেন।’’
Dear @AmitShah, I am passing on a letter written by the daughter of @MehboobaMufti to you. We've seen the order jailing Mehbooba; but her daughter, Iltija, wants to know under what law/order you & @narendramodi have placed her under house arrest. Pls tell. https://t.co/BgcOZK1cLW pic.twitter.com/lM9gIqgCIy
— Siddharth (@svaradarajan) August 15, 2019
আরও পড়ুন: কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আজ সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে রুদ্ধদ্বার বৈঠক
কারও সঙ্গে তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ তুলেছেন ইলতিজা। তিনি লিখেছেন, ‘‘কেউ দেখা করতে এলে জানানো পর্যন্ত হয় না। বাইরের দরজা থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ঘরের বাইরে পা রাখার অনুমতি নেই আমার। চিরকাল এক জন দায়িত্বশীল নাগরিকের কর্তব্য পালন করেছি। কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও যুক্ত নই। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, কিছু সংবাদপত্র এবং ওয়েবপোর্টাল আমার সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে, তাই আটক করা হয়েছে আমাকে। ফের সাক্ষাৎকার দিলে ফল ভুগতে হবে বলে ইতিমধ্যে হুমকিও পেয়েছি।’’
ইলতিজার আরও লিখেছেন, অন্ধকার গ্রাস করেছে গোটা কাশ্মীরকে। স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত আমি। বিশেষ করে যাঁরা মুখ খোলার সাহস দেখাচ্ছেন। গত ৫ অগস্ট ৩৭০ ধারা বিলোপের একতরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিনই আটক করা হয় তাঁর মা মেহবুবা মুফতি, জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা এবং উপত্যকার নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের। তাঁর লেখায় রয়েছে, ‘‘এতে হতাশ আমরা। ১০ দিন পেরিয়ে গিয়েছে, এখনও কার্ফু রয়েছে উপত্যকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যোগাযোগের যাবতীয় মাধ্যম। দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে একটা সামগ্রিক জনসংখ্যাকে। আজ দেশ জুড়ে স্বাধীনতা দিবস পালিত হচ্ছে। কিন্তু পশুর মতো বন্দি করে রাখা হয়েছে কাশ্মীরবাসীকে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের মানবাধিকার।’’
ক্ষমতা প্রয়োগ করে কাশ্মীরবাসীর শ্বাসরোধ করা হচ্ছে এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁদের মানহানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন ইলতিজা। তাঁর চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রে সাধারণ মানুষের কি কথা বলারও অধিকার নেই? এত দিন সত্যের জয় হয় বলেই জানতাম আমরা। দেশের সংবিধানও সে কথাই বলে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হল, অপ্রিয় সত্যের জন্য লড়ছি বলেই আজ যুদ্ধ-অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে আমার সঙ্গে।’’
কড়া নিরাপত্তায় মোড়া কাশ্মীর। ছবি: পিটিআই।
আরও পড়ুন: ‘৭০ বছরে যা হয়নি, ৭০ দিনে তা করেছি’, কাশ্মীর নিয়ে দাবি মোদীর
গত ৫ অগস্ট উপত্যকা জুড়ে কার্ফু জারি করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট, মোবাইল এবং ল্যান্ডলাইন পরিষেবাও। আটক করা হয় উপত্যকার দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাকে। পরে গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। সেই থেকে গত কয়েক দিনে বহু রাজনীতিককে একে একে আটক করা হয়েছে। বুধবার বিদেশ যাওয়ার পথে দিল্লি বিমানবন্দরে আটক করা হয় প্রাক্তন আইএএস অফিসার শাহ ফয়জলকে। প্রথমে গৃহবন্দি করা হয় তাঁকে। তার পর বৃহস্পতিবার সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শ্রীনগরের অস্থায়ী ‘ডিটেনশন সেন্টার’-এ। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই উপত্যকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে দাবি কেন্দ্রীয় সরকারের। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেখানে প্রবেশের অনুমতি পায়নি সংবাদমাধ্যম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy