Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

মায়ের সঙ্গে সাপে-নেউলে, বুঝতে দিলেন না অনুপ্রিয়া

মুক্তোর মালা, খোলা চুল আর ফুল-ছাপ শাড়িতে চুঁইয়ে পড়ছে আত্মবিশ্বাস। রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলে আজ তাঁকে দেখে বোঝার জো নেই, নিজের মায়ের সঙ্গে গত সাত বছর ধরে রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন!

অনুপ্রিয়া পটেল

অনুপ্রিয়া পটেল

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:৫৬
Share: Save:

মুক্তোর মালা, খোলা চুল আর ফুল-ছাপ শাড়িতে চুঁইয়ে পড়ছে আত্মবিশ্বাস। রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলে আজ তাঁকে দেখে বোঝার জো নেই, নিজের মায়ের সঙ্গে গত সাত বছর ধরে রাজনৈতিক লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন! এমনকী, যে দলের হয়ে নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার অন্যতম কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন, সেই ‘আপনা দল’ থেকেই তাঁকে তাড়িয়ে দেওয়ার লাগাতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দলীয় সভাপতি, স্বয়ং তাঁর মা কৃষ্ণা পটেল। এ সব কিছুকে বিন্দুমাত্র পাত্তা না দিয়ে উত্তরপ্রদেশের মির্জাপুরের এই সাংসদ অনুপ্রিয়া পটেল হেসে বললেন, ‘‘আজ এখানে পৌঁছতে পেরেছি মায়ের আশীর্বাদেই। বাবা-মায়ের পরিশ্রমেই আজ আমাদের দল শক্তিশালী।’’

উত্তরপ্রদেশের কুর্মি সম্প্রদায়কে (অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণিভুক্ত) আসন্ন নির্বাচনে পাশে পেতে মোদীর এ বারের তাস এই অনুপ্রিয়া। যাঁকে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক শিবির লম্বা দৌড়ের ঘোড়া বলে চিহ্নিত করছে। বয়স ৩৫, জাত-রাজনীতির সমীকরণকে চেনেন হাতের তেলোর মতো। পড়াশোনা করেছেন দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজে। কুর্মি নেতা সোনেলাল পটেলের (যাঁর হাতে তৈরি এই ‘আপনা দল’) একটি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরে ঘরে-বাইরে লড়ে প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে চলে এসেছেন সোনেলালের এই ছোট মেয়ে। বিজেপির শরিক হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন নিজের দলকে। আজ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পরে এ কথা স্পষ্ট যে, উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগেই বিজেপির সঙ্গে মিশে যাবে ‘আপনা দল’।

২০১২ সালে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে লড়ে বিধায়ক হয়েছিলেন অনুপ্রিয়া। তারপরেই বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের নজরে পড়েন তিনি। আরও বড় মাঠে খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ২০১৪-তে লোকসভা ভোটে অক্লেশে জেতেন। অবশ্যই তৎকালীন মোদী-হাওয়াকে কাজে লাগিয়ে। ‘আপনা দল’ থেকে সে বার জিতেছিলেন মোটে দু’জন— অনুপ্রিয়া এবং হরিবংশ সিংহ। নিজের ‘গ্ল্যামার কোশেন্ট’-এর সুবাদেই হোক অথবা সুবক্তা, জনপ্রিয় ও উচ্চশিক্ষিত (মনস্তত্ত্ব এবং বাণিজ্য-পরিচালনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেছেন) হিসেবে পরিচিতির জন্য, কিছু দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যায়, হরিবংশ সিংহের থেকে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছেন অনুপ্রিয়া।

তবে মা-মেয়ের মধ্যে ক্ষমতার লড়াই চলছিলই। ২০০৯-তে সোনেলালের মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা হন দলের সভাপতি এবং ছোট মেয়ে অনুপ্রিয়া, সাধারণ সম্পাদক। শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। মা এবং বড় মেয়ে পল্লবী এক দিকে, অন্য দিকে অনুপ্রিয়া। কিন্তু কিছু দিনেই গ্রহণযোগ্যতা ও রাজনৈতিক জনপ্রিয়তায় মা ও দিদিকে
পিছনে ফেলে দেন অনুপ্রিয়া। সূত্রের মতে, এই গৃহযুদ্ধকেই কাজে লাগিয়ে ‘আপনা দল’কে নিজের দিকে টেনে নেন বিজেপি নেতৃত্ব। আজ মেয়ের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আসা তো দূরস্থান, টিভিতেও নাকি অনুষ্ঠানটি দেখেননি মা।

এই মা-মেয়ের বৈরিতাকে কাজে লাগিয়েই অনুপ্রিয়ার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন সতীর্থ সাংসদ হরিবংশ সিংহ। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামলেছেন অনুপ্রিয়া। আজ নিজের পরিবার সম্বন্ধে একটি কটূ কথাও বলতে শোনা যায়নি তাঁকে। শুধু বলেছেন, ‘‘হরিবংশ সিংহ আমার পরিবার নিয়ে যেন কোনও টিপ্পনী না কাটেন। সবাই আমার সঙ্গে রয়েছেন।’’

এর পরেই মায়ের ‘আর্শীবাদ’-এর কথা বলেন তিনি। যা শুনে রীতিমতো চমকে গিয়েছে দিল্লির পোড় খাওয়া রাজনৈতিক মহলও! বুঝতে পেরেছে, অনেক দূর যাবেন মোদী ক্যাবিনেটের নতুন মন্ত্রী অনুপ্রিয়া পটেল।

অন্য বিষয়গুলি:

Anupriya patel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy