স্বামী এবং কন্যার সঙ্গে ভারতী। ছবি: টুইটার।
মেয়ে হওয়ার জন্য দিনরাত শুনতে হত বাবার বঞ্চনা এবং কটূকথা। বিয়ের পর সংসার চালাতে ক্ষেতে গিয়ে দিনমজুরিও করতে হত। দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন সেই কন্যা। অন্ধ্রপ্রদেশের ওই কন্যার নাম সাকে ভারতী। তিনি অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার বাসিন্দা। ছ’বছরের কঠোর পরিশ্রমের পর গত সপ্তাহেই পিএইচডি ডিগ্রি হাতে পেয়েছেন ভারতী।
অনন্তপুরে ভারতী এবং তাঁর পরিবার যে ঘরে থাকত, তার ছাদ অ্যাসবেস্টসের তৈরি। বর্ষাকালে ওই আচ্ছাদন চুঁইয়েই বৃষ্টির জল ঢুকে ঘর ভাসিয়ে দিত। দু’বেলা ক্ষেতে দিনমজুরি করেও পেট পুরে খেতেও পান না তাঁরা। কিন্তু তার পরেও পড়া থামিয়ে রাখেননি ভারতী।
সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভি’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাড়ির তিন বোনের মধ্যে ভারতীই সব থেকে বড়। তিন সন্তানই মেয়ে হওয়ার জন্য ভারতীর বাবা ছোটবেলায় তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। সেই সময় ভারতীদের পরিত্রাতা হয়ে আসেন তাঁদের দাদু। তিন নাতনিকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করেন।
ভারতী স্কুলে পড়ার সময়ই তাঁর দাদু মারা যান। কিন্তু কী ভাবে দাদু তাঁর পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন সেই কথা স্মরণ করে ভারতী বলেন, ‘‘আমরা এমন এক পৃথিবীতে বাস করি যেখানে মেয়েদের ঘরোয়া দায়িত্বের মধ্যে বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু আমার দাদু আমাকে পড়াশোনা করতে বলেছিলেন।’’
ভারতী জানিয়েছেন, পড়াশোনা করতে করতেই তাঁর বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁর স্বামীও পড়াশোনা চালিয়ে যেতে তাঁকে উৎসাহ জোগান। স্বামীর জন্যই স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি পিএইচডি করতে ঢোকেন। তাঁর কথায়, ‘‘আমার স্বামী শিবপ্রসাদ আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমার থেকেও বেশি উৎসাহী ছিলেন। স্বামী বলেছিল যে, শিক্ষাই একমাত্র নারীদের কষ্ট এবং দারিদ্র থেকে মুক্তি দিতে পারে। ও আমাকে বলেছিল যে, যে বাধাবিপত্তিই আসুক না কেন, আমার পড়াশোনা বন্ধ হবে না। ও নিজের কথা রেখেছে।’’
পরিবারের ভরণপোষণের জন্য স্বামীর সঙ্গে ক্ষেতে গিয়ে কৃষিকাজও করতেন ভারতী। তার মাঝে মাঝেই চলত পড়াশোনা। ভোর ভোর উঠে ক্ষেতের কাজ সেরে বাসে চেপে বিশ্ববিদ্যালয় যেতেন ভারতী। কখনও টাকা বাঁচাতে পায়ে হেঁটেও যাতায়াত করতে হত তাঁকে।
তবে পিএইচডি হয়ে গেলেও এখনও চাকরি জোটেনি ভারতীর ভাগ্যে। চাকরি না পেলে তাঁর এত পড়াশোনা বৃথা হয়ে যাবে বলেও তিনি মনে করেন। ভারতী বলেন, ‘‘চাকরি পাওয়া আমাদের হাতে নেই। কিন্তু চাকরি না মিললে আমার পড়াশোনা সার্থক হবে না। সহকারী অধ্যাপকের চাকরি পেলে আমার স্বপ্নপূরণ হবে।’’
ভারতী জানিয়েছেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এবং শূন্যপদ থাকা সত্ত্বেও তাঁকে স্থানীয় কলেজে চাকরি দেওয়া হয়নি। এমনকি স্থানীয় বিধায়ককে পাকা বাড়ি তৈরি করিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা-ও তিনি পাননি বলে জানিয়েছেন ভারতী।
ভারতী এবং শিবপ্রসাদের একমাত্র কন্যা ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তবে ভারতীর বাবার মতো ভারতী এবং তাঁর স্বামী অখুশি নন। মেয়েকে শিক্ষিত করে তোলায় এখন তাঁদের এক মাত্র লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন দম্পতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy