সংস্কৃত পড়ছেন ছাত্ররা। ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করেছে কেরলের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিই।
জায়গাটা ভারতেই। কেরলের ত্রিশূরের একটি ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ছাত্ররা সেখানে যেমন কোরান পড়েন, তেমনই পড়েন ভাগবদ্গীতাও। মাথায় চন্দনের তিলক কেটে হাতে গীতা, বেদ উপনিষদ নিয়ে হিন্দু গুরু আসেন ক্লাস রুমে। শিক্ষকের নির্দেশ পেয়ে মুসলিম ছাত্ররা অবলীলায় আবৃত্তি করেন ‘‘গুরুঃ ব্রহ্ম, গুরুঃ বিষ্ণু, গুরুঃ দেব মহেশ্বর, গুরুঃ সাক্ষাৎ পরম ব্রহ্ম, তস্মৈশ্রী গুরবে নমঃ।।’’
মধ্য কেরলের ওই ইসলামিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও হিন্দু ছাত্র পড়েন না। সব ছাত্রই মুসলিম। তবে হিন্দু গুরুর তত্ত্বাবধানে গীতা-উপনিষদের সংস্কৃত শ্লোক পড়তে বিন্দুমাত্র আপত্তি তোলেননি তাঁরা। এমনকি ছাত্রদের পরিবারের তরফেও কোনও বাধা আসেনি বলে জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কেরলের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম, অ্যাকাডেমি অফ শরিয়া অ্যাডভান্সড স্টাডিজ। কলেজের প্রিন্সিপাল ওনামপিলি মহম্মদ ফইজি জানিয়েছেন ছাত্রদের শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে কোনও একটি ধর্মের শাস্ত্রে বেঁধে রাখতে চাননি তিনি। তাঁর মনে হয়েছে, কোনও শিক্ষা যথাযথ হতে হলে সব বিষয়েই জ্ঞান থাকা দরকার। সেই ভাবনা থেকেই ইংরেজি, আরবি, উর্দু ভাষার পাশাপাশি ছাত্রদের সংস্কৃত শেখানোর কথাও ভেবেছেন তিনি।
আসলে ফইজির এই ভাবনার নেপথ্যে রয়েছে তাঁর নিজের শিক্ষা। অল্প বয়সে হিন্দু দার্শনিক শঙ্করাচার্যের দর্শন পড়ার সুযোগ হয়েছিল তাঁর। সেখান থেকেই তাঁর ভাবনায় এক অন্য রকম শিক্ষ প্রতিষ্ঠান তৈরির ধারণা দানা বেঁধেছে। যদিও ফইজি জানেন, দৈনন্দিন লেখাপড়ার পাশাপাশি, ছাত্রদের সংস্কৃত ভাষার সমস্ত শাস্ত্র পড়ানো সম্ভব নয়। তা পড়তে বহু বছর লেগে যাবে। ছাত্রদের তাই গীতা, উপনিষদ, বেদের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন তিনি।
তবে পড়ানোর ব্যবস্থা করলেও কে পড়াবেন তা নিয়ে প্রথমটায় কিছুটা ধন্দে ছিলেন তিনি। কারণ, তাঁর মনে হয়েছিল কোনও হিন্দু শাস্ত্রজ্ঞ হয়তো আরবি এবং উর্দুভাষী এই ছাত্রদের সংস্কৃত পড়াতে চাইবেন না। কিন্তু ফইজির ধারণা ভুল প্রমাণ করে ছাত্রদের হিন্দু শাস্ত্র এবং সংস্কৃত পড়াতে রাজি হন এক শিক্ষক। নাম কে কে ইয়াথিন্দ্রন। তিনি জানিয়েছেন, ফইজি তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, মুসলিম ছাত্রদের পড়াতে তাঁর কোনও আপত্তি আছে কি না জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমি একজন শিক্ষক। ছাত্রদের পড়াব। সেখানে হিন্দু-মুসলিম বা খ্রিস্টানের ভেদাভেদ আসছে কোথা থেকে!’’
ইয়াথিন্দ্রন জানিয়েছেন, প্রথমটায় তাঁর পাড়া পড়শিরা এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি তা নয়। তবে তিনি তাঁদের সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি শিক্ষকতা করতে যাচ্ছেন। আর ধর্ম তাতে কোনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। পরে ইয়াথিন্দ্রনের মতোই আরও বেশ কয়েকজন সংস্কৃত পড়াতে এসেছেন ফইজির প্রতিষ্ঠানে। সম্প্রতি ফেসবুকে ক্লাসরুমের একটি ছবি শেয়ার করেছিল অ্যাকাডেমি অফ সরিয়া। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ধবধবে সাদা গোড়ালি ঝুল আলখাল্লা পাঞ্জাবির সঙ্গে মাথায় সাদা ফেজ নমাজের টুপি পরে ছাত্ররা বসে রয়েছেন ইয়াথিন্দ্রনের ক্লাসরুমে।
ইয়াথিন্দ্রন জানিয়েছেন, তাঁর ক্লাসে সংস্কৃততেই কথা বলেন ছাত্ররা। চলে বিভিন্ন শ্লোক নিয়ে ব্যাখ্যামূলক আলোচনাও। এই ছাত্রদের অধিকাংশই সংস্কৃতের নামও শোনেনি এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসার আগে। তবে সংস্কৃত নিয়ে জানার আগ্রহ এক বিন্দু কম নয় তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy