বাবা-মায়ের সঙ্গে সাক্ষী মাহেশ্বরী। ছবি: সংগৃহীত।
একটা সময় আশা হারিয়ে ফেলছিলেন তিনি। সেই সাক্ষী মাহেশ্বরী আজ নিজেই আমদাবাদ সিভিল হাসপাতালে বহু মানুষের কাছে ‘আশার প্রতিমূর্তি’। দুর্ঘটনা প্রাণ কেড়ে নিতে বসেছিল তাঁর। চিকিৎসকেরাও জানিয়েছিলেন ভাল হওয়ার সম্ভাবনা ১০ শতাংশ। শুধু নিজের জেদকে সম্বল করে ২৭ বছরের সাক্ষী আজ অর্থোপেডিক সার্জন (হাড়ের শল্য চিকিৎসক) হয়েছেন।
হাসপাতালে যখন দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগীরা আসেন, তখন সাক্ষী তাঁদের মধ্যে নিজের অতীতকে খুঁজে পান। নিজেই ‘বেটার ইন্ডিয়া’-কে জানিয়েছেন, ওই সময়টা ছিল জীবনের ‘সবচেয়ে কঠিন সময়’। তার আগে জীবনটা ছিল একেবারেই অন্য রকম। তাঁর মা বলেন, দুর্ঘটনার পরে নতুন সাক্ষীর জন্ম হয়েছে— ‘সাক্ষী ২.০’।
এমবিবিএসের দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করতেন সাক্ষী। সাত বছর আগে দুর্ঘটনার মুখে পড়েন। ওই দিন আমদাবাদে নিজেদের বাড়িতে বসে দৈনিক কাজকর্ম সারছিলেন সাক্ষীর বাবা দীনেশ এবং মা স্নেহা। মেয়ের দুর্ঘটনার কথা জানিয়ে ফোন আসে। ফোন পেয়ে তাঁরা ছুটে যান কর্নাটকে। সেখানেই হয়েছিল দুর্ঘটনা। গিয়ে হতবাক হয়ে যান তাঁরা। দুর্ঘটনায় বুকে, মাথায়, হাতে, পায়ে গুরুতর চোট। ২০ দিন ছিলেন আইসিইউতে। পর পর অস্ত্রোপচার হয়েছিল শরীরের বিভিন্ন অংশে। সেই সংখ্যাটা প্রায় ২০। অস্ত্রোপচারের পর ছ’মাস ধরে চলেছিল চিকিৎসা। দু’বছর ধরে টানা ফিজ়িয়োথেরাপি করানো হয়েছিল। সাক্ষীর পরিবার এখনও ভুলতে পারেননি দিনগুলি। সাক্ষী জানিয়েছিলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পরে শুরু হয়েছিল আসল লড়াই। নিজে ডাক্তারির ছাত্রী হয়েও শরীরের চোট-আঘাতের দিকে তাকাতে পারতেন না। সব সময় মাথার মধ্যে ঘুরত একটাই প্রশ্ন, ‘‘কোনও দিন কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারব?’’ প্রতি বারই প্রশ্নের জবাব দিতেন নিজেই। নিজেকে বলতেন, ‘‘আমাকে পারতেই হবে।’’ পাশে ছিলেন মা, বাবা, দাদু, দিদা।
সাক্ষীর মা স্নেহা বলেন, ‘‘ওকে অত কষ্টের মধ্যে দেখে ভেঙে পড়তাম আমরা। প্রত্যেক দিন ওর কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ ছিল।’’ এই অবস্থায় সাক্ষী জেদ ধরে বসেন, ডাক্তারি পড়া তিনি চালিয়ে যাবেন। অধ্যাপক, সহপাঠী, বন্ধুরা বুঝিয়েছিলেন অনেক। তাঁদের মনে হয়েছিল, সাক্ষীর শরীরে যা অবস্থা, তাতে তিনি পড়ার চাপ সামলাতে পারবেন না। এক পা হাঁটার ক্ষমতা ছিল না তাঁর। কিন্তু তিনি ছিলেন নাছোড়। একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, সে দিন ওই সিদ্ধান্ত না নিলে এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে পারতেন না। তাঁর পড়াশোনাই তাঁকে আরও বেশি করে জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছিল।
দুর্ঘটনার পর সাক্ষী স্থির করে ফেলেছিলেন যে, ডাক্তারি পড়া চালিয়ে যাবেন এবং স্নাতকোত্তরে অর্থোপেডিক নিয়েই পড়াশোনা করবেন। যে দিন আমদাবাদের বিজে হাসপাতালে অর্থোপেডিক বিভাগে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন সাক্ষী, সে দিন তাঁর বোন ইশা কেক কেটেছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘উৎসবের মতো দিনটা পালন করেছিলাম।’’ তিনি জানিয়েছেন, সে সময় ছোট ছোট বিষয়ও মনে হত বড় ‘মাইলস্টোন’। তাই উদ্যাপন করত গোটা পরিবার। ইশা জানিয়েছেন, যে দিন সাক্ষী দুর্ঘটনার পর প্রথম বার নিজের দাঁত মাজতে পেরেছিলেন, পরিবারের সকলে নাচ-গান, হুল্লোড় করেছিলেন। সাক্ষী জানিয়েছেন, সে দিন সেই দুর্ঘটনা না হলে হয়তো রোগীদের প্রতি এতটা সমব্যথী হতে পারতেন না তিনি। তাঁদের কষ্টটা বুঝতে পারতেন না। তাই তাঁদের কাছে ‘আশার প্রতিরূপ’ হয়েও দাঁড়াতে পারতেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy