কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি পিটিআই।
মাওবাদী সমস্যা নির্মূল করতে তাদের অর্থের উৎসকে চিহ্নিত করে তা নষ্ট করার উপরে জোর দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আজ দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে মাওবাদী সমস্যা নিয়ে দেশের ১০ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডেকেছিলেন অমিত। ওই বৈঠকে মাওবাদীদের রোজগারের রাস্তা বন্ধ করার জন্য কেন্দ্র-রাজ্য একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান অমিত। দশ রাজ্যের ওই বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গ থাকলেও, অনুপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসেননি কেরল, ছত্তীসগঢ়, অন্ধ্রপ্রদেশের মতো অ-বিজেপি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরাও।
আজকের বৈঠকের প্রথমার্ধে মূলত আলোচনার বিষয় ছিল, কী ভাবে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে মাওবাদীদের আক্রমণ প্রতিহিত করে এলাকা দখল করা যায়। সরকারি সূত্রের দাবি, গত কয়েক বছরে দেশে ক্রমশ মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা কমে এসেছে। তিন বছর আগে দেশে যেখানে ১০০ জেলায় মাওবাদীদের প্রভাব ছিল, তা এখন কমে এসেছে ৭০-এ। কমেছে মাওবাদীদের হাতে মৃত্যুর ঘটনাও। শীতের পাতা ঝরা শুরু হলেই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে টানা অভিযান চালানোর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। ওই কাজে রাজ্যগুলির পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে একযোগে একাধিক রাজ্যে ‘জয়েন্ট অপারেশন’ চালানো যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা হয়। শাহের কথায়, নরেন্দ্র মোদীর জমানায় অতীতের চেয়ে মাওবাদী হামলার ঘটনা প্রায় ২৩% কমেছে। যত ক্ষণ না মাওবাদী সমস্যা নির্মূল হচ্ছে তত ক্ষণ তৃণমূল স্তরের প্রান্তিক জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে গণতন্ত্র ও উন্নয়ন পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই যে মাওবাদীরা আত্মসমর্পণ করছেন তাদের স্বাগত। কিন্তু যারা বন্দুক ধরেছেন, তাঁদের সেই ভাষাতেই জবাব দেওয়া হবে।
বৈঠকে মাওবাদীদের কোমর ভাঙতে তাদের আয়ের উৎসকে নিশানা করার উপরে জোর দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আগামী দিনে মাওবাদীদের আয়ের উৎসগুলিতে আঘাত হানার উপরে জোর দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আর্থিক মদতদাতাদের রুখতে কেন্দ্র-রাজ্য জোট বেধে কাজের উপরে জোর দিয়েছেন তিনি।
আজকের অধিবেশনের দ্বিতীয়ার্ধে মাওবাদী প্রভাবিত এলাকাগুলির উন্নয়নের বিষয়গুলি খতিয়ে দেখা হয়। বিশেষ মাওবাদী প্রভাবিত এলাকাগুলিতে রাস্তা, হাসপাতাল, স্কুল, মোবাইল টাওয়ার বসানোর মতো পরিকাঠামোগত কাজ কেমন গতিতে এগোচ্ছে, তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সূত্রের মতে, আজকের বৈঠকে মাওবাদী সমস্যা মোকাবিলায় ওড়িশা, বিহার ও ঝাড়খণ্ডের প্রশংসা করেন শাহ। কেন্দ্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিহারে মাওবাদীদের সক্রিয়তা কমেছে। আজ ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক মলকানগিরির মতো পিছিয়ে পড়া এলাকায় চার লেন সড়ক ও রেল যোগাযোগ গড়ে তোলার দাবি জানান কেন্দ্রের কাছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে উন্নয়নের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোর অনুরোধ করেছেন।
আজকের বৈঠকে ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যে থাকতে পারবেন না, তা আগেই কেন্দ্রকে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পরিবর্তে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদী এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্য। গত কয়েক বছরে রাজ্যে মাওবাদী সমস্যা কী ভাবে কমে এসেছে, তা বিস্তারিত ভাবে জানান তিনি। বিশেষ করে মাওবাদীদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে সরকারের নানাবিধ প্রকল্পের কারণে পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম ও বাঁকুড়ার মতো জেলাগুলিতে মাওবাদী সমস্যা অনেকাংশেই মিটে গিয়েছে বলে দাবি করা হয় রাজ্যের পক্ষে। গত চার-পাঁচ বছরে রাজ্যে একটি মাওবাদী হামলার ঘটনা না ঘটার বিষয়টিও বৈঠকে তুলে ধরা হয়। আত্মসমর্পণ করলে মাওবাদীদের চাকরি দেওয়ার যে প্রকল্প, সেটি রাজ্যে মাওবাদী সমস্যা কমার একটি বড় কারণ বলে আজকের বৈঠকে জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy