চলতি মাসেই বঙ্গ সফরে আসার কথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের। বিজেপি সূত্রের খবর, রাজ্যে ভোট প্রচারে গতি আনতেই তাঁর এই সফর। তার আগে শুক্রবার বিকেলে সংসদের বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন স্পিকারের চা-চক্রে মধুর ভাবে শাহকে খোঁচা মারলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। ঘরোয়া আলাপচারিতায় শাহকে সাফ বললেন সৌগত, ‘‘আপনারা বিরাট ঘটা করে ওয়াকফ বিল পাশ করালেন ঠিকই। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু মন বিজেপি জয় করতে পারবে না। তাঁদের ভোট পাবে না। সংখ্যালঘুরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পতাকার নীচেই রয়েছেন এবং থাকবেন।’’
সূত্রের খবর, জবাবে অমিত নাকি সৌগতকে বলেছেন, তিনি ভগবান নন! তবে কর্মীদের
মনোবল চাঙ্গা করতে আওয়াজ তো তুলতেই হবে!
প্রসঙ্গত, গত শীতকালীন অধিবেশনে দলকে রীতিমতো বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন শাহ। বি আর অম্বেডকরকে নিয়ে রাজ্যসভায় তাঁর ‘ফ্যাশন’ মন্তব্যকে ঘিরে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। শাহের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে গোটা দেশ জুড়ে আসরে নামে কংগ্রেস। বাজেট অধিবেশনে অবশ্য কোনও ভুলচুক করেননি তিনি। প্রধানমন্ত্রী মোদীর অনুপস্থিতিতে ওয়াকফ বিল নিয়ে দীর্ঘ বারো ঘণ্টার বিতর্কে নেতৃত্ব দিয়েছেন সরকারকে। যুক্তি সাজিয়ে বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, মুসলিমদের দান করা জমি যাতে ঠিক কাজে ব্যবহার হয়, জমির টাকা যাতে গরিব মুসলিমদের কাজে লাগে, তার জন্যই এই বিল আনা হয়েছে।
সৌগত ওই চায়ের আসরে অমিত শাহের বক্তৃতা ও ভূমিকার প্রশংসা করেছেন। কিন্তু তার মধ্যেও একটু মরিচ মিশিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ওয়াকফ বিল নিয়ে বিতর্ক চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী সংসদে ছিলেন না। তিনি বিমস্টেক অধিবেশনে যোগ দিতে তাইল্যান্ডে যান। সৌগত গত কাল অমিত শাহকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেই। তিনি না থাকলেও আপনি একাই বিজেপির ভাল
নেতৃত্ব দিয়েছেন!’’
সূত্রের খবর, এই আচমকা ‘তুলনা’য় কিছুটা গুটিয়ে যান শাহ। শুধু বলেন, তিনি রাজ্যসভায় কিছু বলেননি, শুধুমাত্র লোকসভায় যেটুকু বলার বলেছেন। নাছোড় সৌগত আবারও বলেন, শাহ যে আশার কথা শুনিয়েছেন, মুসলমানদের কাছ থেকে জমি ছিনিয়ে না নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, বক্তব্য হিসাবে সেগুলি ভালই। কিন্তু একই সঙ্গে তৃণমূল সাংসদ এই মন্তব্যও করেন, এই ওয়াকফ-এর জোরে শাহ যদি পশ্চিমবঙ্গের ভোট জিতে যাবেন বলে মনে করেন তাহলে সেটা তিনি ভুল করবেন! আগেও জিতে যাবেন বলে ভুল প্রমাণিত হয়েছেন! এ বারও হবেন! সূত্রের খবর, অমিত জবাবে সৌগতকে বলেছেন, তিনি ভগবান নন! কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য মঞ্চ থেকে আওয়াজ তুলতেই হয়।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)