অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
উপত্যকা থেকে হিন্দু পণ্ডিতদের পালানো রুখতে তৎপর হল কেন্দ্র। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন তথা নিরাপত্তাবাহিনীর প্রতি কেন্দ্রের কড়া বার্তা, প্রয়োজনে প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মরত হিন্দুদের জেলা সদরে বদলি করে নিয়ে আসা যেতে পারে। কিন্তু কোনও পরিবার যেন উপত্যকা ত্যাগ না করে। অভিযোগ, পণ্ডিতেরা যাতে এলাকা ছাড়তে না পারেন, সে জন্য গত কালের মতো আজও পুনর্বাসন শিবিরগুলির সামনে রাস্তা আটকে দিয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী। কারণ বিজেপি মনে করছে, কেন্দ্রে তাদের সরকার থাকা সত্ত্বেও পণ্ডিতদের উপত্যকা ছাড়তে হলে দেশে ও দেশের বাইরে বদনাম হবে নরেন্দ্র মোদী সরকারের। এ দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রে জঙ্গি দমন অভিযান আরও তীব্র করার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই বড় মাপের ধরপাকড়ের সাক্ষী হতে পারে উপত্যকা।
গত কয়েক মাস ধরেই উপত্যকায় বেছে বেছে পণ্ডিত ও হিন্দুদের হত্যার কৌশল নিয়েছে পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরা। ঘটনায় তীব্র আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে উপত্যকায় বসবাসকারী হিন্দুদের মধ্যে। আজও শোপিয়ানের অগলর এলাকায় জঙ্গিদের গ্রেনেডে দু’জন পরিযায়ী শ্রমিক আহত হয়েছেন। কাশ্মীরে বসবাসকারী হিন্দুদের একাংশ নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় পালিয়ে গিয়েছেন বা যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। পণ্ডিতদের দলবদ্ধ ভাবে এলাকা ত্যাগ রাজনৈতিক ভাবে বিপাকে ফেলেছে মোদী সরকারকে। কাশ্মীরের হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে মোদী সরকার ব্যর্থ হয়েছে, এই প্রশ্নে বিরোধীরা তো বটেই, সরব হয়েছেন বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামীও। হিন্দুদের নিরাপত্তা না দিতে পারায় অবিলম্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ইস্তফাও দাবি করেছেন তিনি। কংগ্রেসের বক্তব্য, সিনেমা দেখে সময় নষ্ট না করে আরও আগেই মাঠে নামা উচিত ছিল শাহের। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নীরব কেন, সে প্রশ্নও তুলেছে কংগ্রেস।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৌশল ঠিক করতে আজ বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। উপস্থিত ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিন্হা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, সেনাপ্রধান মনোজ পাণ্ডে, র’ প্রধান সামন্ত গোয়েল, গোয়েন্দা প্রধান অরবিন্দ কুমার। ছিলেন সিআরপিএফ এবং বিএসএফ প্রধানও। সূত্রের মতে, বৈঠকে কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন শাহ। কেন বারবার সরকারের মুখ পুড়ছে, তা নিয়ে কৈফিয়ৎ চাওয়া হয়। এ মাসের শেষে শুরু হচ্ছে অমরনাথ যাত্রা। তার আগে যে কোনও মূল্যে উপত্যকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার উপরে জোর দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আজ কাশ্মীর প্রশ্নে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে নর্থ ব্লকে।
বৈঠকে পণ্ডিতদের সাম্প্রতিক হত্যার পিছনে পাকিস্তানের মদতের বিষয়টি উঠে আসে। সূত্রের মতে, গোয়েন্দা কর্তারা জানান, বেছে বেছে ওই হত্যাকাণ্ড চালিয়ে উপতক্যায় অস্থিরতা চালানোর কৌশল নিয়েছে পাকিস্তান। কারণ সীমান্ত আগের চেয়ে অনেক নিশ্ছিদ্র হওয়ায় অনুপ্রবেশ কমেছে। তা ছাড়া আন্তর্জাতিক নজরদারি বেড়ে যাওয়ায় সরাসরি সন্ত্রাসে মদত দেওয়া ইসলামাবাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে। এই আবহে কাশ্মীরে জঙ্গি সক্রিয়তা বজায় রাখতে ভরসা এখন স্থানীয়েরা। কিন্তু প্রশিক্ষিত সেনা বা আধাসেনার বিরুদ্ধে লড়ার মতো প্রশিক্ষণ তাদের না থাকায় সেনা ছাউনি বা সেনা কনভয়ে হামলার পরিবর্তে শিক্ষানবিশ ওই জঙ্গিদের ব্যবহার করা হচ্ছে নিরস্ত্র নাগরিক হত্যার কাজে। মূলত জঙ্গি কাজকর্মকে সাহায্য করার জন্য এই মুহূর্তে কয়েক হাজার ওভারগ্রাউন্ড ওয়ার্কারকে (ওজিডাব্লু) উপত্যকায় সক্রিয় করা হয়েছে। যাদের নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে। বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গ যুক্ত ওই কর্মীরা আমজনতার মতো দিন কাটালেও তাঁরা জঙ্গিদের নিয়মিত তথ্য সরবরাহ ও রসদের জোগান দেন। স্বরাষ্ট্র সূত্রের মতে, স্থানীয় পর্যায়ে কোন দফতরে ক’জন হিন্দু কর্মী কাজ করেন, জঙ্গিদের সেই তথ্য সরবরাহের দায়িত্বেও থাকে ওই ওজিডাব্লুরাই। সূত্রের মতে, এ বার ওজিডাব্লুদের চিহ্নিত করে আটক করার কাজ শুরু হতে চলেছে উপত্যকায়।
মুখ বাঁচাতে উপত্যকা থেকে হিন্দুদের দলবদ্ধ পলায়ন রুখতে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনকে কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নির্দেশ দিয়েছে দিল্লি। সূত্রের মতে, দিল্লি জানিয়ে দিয়েছে, কোনও ভাবেই যাতে হিন্দুরা পরিবার নিয়ে এলাকা না ছাড়েন, তা নিশ্চিত করতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। কর্মরত হিন্দু সরকারি কর্মী, যাঁরা উপত্যকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্মরত, তাঁদের প্রয়োজনে জেলা সদরে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে নিয়ে আসা হবে বলে ঠিক হয়েছে। এতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদী সরকারের পণ্ডিতদের পুনর্বাসন দেওয়ার দাবি। আজ সারা দিনে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে মোট তিনটি বৈঠক করেন অমিত শাহ। তার মধ্যে দু’টি উপত্যকার নিরাপত্তা সংক্রান্ত ও তৃতীয়টি ছিল অমরনাথ যাত্রা নিয়ে। কার্যত দু’বছর বন্ধ থাকার পরে এ মাসে ফের শুরু হতে চলেছে ওই যাত্রা। আজ যাত্রা পথে নিরাপত্তার বিষয়টি ছাড়াও যাত্রীদের পরিকাঠামোগত সুবিধে দেওয়ার প্রশ্নে কাজ কতটা এগিয়েছে, তা খতিয়ে দেখেন শাহ। সূত্রের মতে, এ বারের যাত্রায় ইতিমধ্যেই পাঁচ লক্ষের বেশি মানুষ নাম লিখিয়েছেন। যাঁদের প্রত্যেককে একটি করে রেডিয়ো ফ্রিকোয়েন্সি কার্ড দেওয়া হবে। তাতে প্রত্যেক ব্যক্তির গতিবিধি নখদর্পণে থাকবে নিরাপত্তাবাহিনীর।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy